রেন্টিনা চাকমা : ফ্রান্সে দাবা খেলে তাক লাগিয়ে দেয়া এক তরুণের নাম ফাহিম। যার জন্ম বাংলাদেশে। ফাহিমের জীবনের গল্প নিয়ে ২০১৪ সালে প্রকাশিত হয় একটি বই। যার নাম ‘অ্যা ক্ল্যানডেস্টাইন কিং’। এই বই অবলম্বনে নির্মিত হচ্ছে ফরাসি চলচ্চিত্র ‘ফাহিম’।
সিনেমাটি এখন মুক্তির অপেক্ষায়। আগামী ১৬ অক্টোবর প্রেক্ষাগৃহে আসবে এই ছবি। ছবিটির ট্রেলার প্রকাশ পায় ২৩ আগস্ট। এতে ফাহিম ও তার বাবার সংগ্রাম তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি ছিল দাবায় সম্পৃক্ত হওয়ার টুকরো চিত্র। ট্রেলারটি প্রকাশিত হয়েছে ওয়াইল্ড বাঞ্চ ডিস্ট্রিবিউশন থেকে।
এ ছবিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন আহমেদ আসাদ। নূরে আলম চরিত্রে থাকছেন মিজানুর রহমান। দু’জনই প্রবাসী। ছবিটির অভিনয়শিল্পী খুঁজতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বাংলাদেশি কমিউনিটি ইন ফ্রান্স (বিসিএফ) পেজে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল।
ফাহিমের কোচ জাভি পারমন্টিয়েরের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন খ্যাতিমান ফরাসি অভিনেতা জেহার্দ দেপারদ্যু। পিয়ের-ফ্রাঁসোয়া মার্তা-লাভাল পরিচালিত ছবিটির শুটিং হয়েছে প্যারিস, কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনার পর্যটন কেন্দ্র টাকিতে।
২০০০ সালে ঢাকার ডেমরায় জন্ম হওয়া ফাহিম মোহাম্মদ আট বছর বয়সে বাবা নূরে আলমের সঙ্গে ফ্রান্সের প্যারিসে যায়। সেখানে তারা রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করে। কিন্তু প্রত্যাখ্যান করে দেওয়া হয় সেই প্রার্থনা। এরপর অবৈধ অভিবাসী তকমা নিয়ে কাটতে থাকে তাদের ফেরারি জীবন। নূরে আলম দাবা অনুরাগী। তবে দুঃসময়ের মধ্যেও ছেলেকে দাবার তালিম দিয়েছিলেন। অনূর্ধ্ব-২০ টুর্নামেন্টে জয়ী হবার পর স্থানীয় এক দাবা প্রশিক্ষকের নজরে আসেন ফাহিম। তার পরামর্শে প্যারিসের ক্রিটেই এলাকার দাবা ক্লাব টমাস দু বুর্গেনেফে ছেলেকে নিয়ে যান নূরে আলম। সেখানে ফাহিমের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হয়। ক্লাব সংলগ্ন খালপাড়ে তাঁবুতে বসবাস শুরু করেন তারা।
ফ্রান্সের জাতীয় দাবা দলের সাবেক প্রশিক্ষক জাভি পারমন্টিয়েরের প্রশিক্ষণে সে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় শিরোপা জিততে থাকে। ফ্রান্সের জাতীয় জুনিয়র (অনূর্ধ্ব -১২) দাবায় অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হলে তাকে ঘিরে আলোচনা ছড়িয়ে পড়ে ফরাসি গণমাধ্যমে।
ছেলের সাফল্যের সুবাদে ২০১২ সালের ১১ মে তিন মাসের অস্থায়ী ওয়ার্ক পারমিট পান নূরে আলম। ফাহিম ভর্তি হয়ে যায় স্কুলে। ২০১৩ সালে গ্রিসে অনুষ্ঠিত বিশ্ব দাবা স্কুল চ্যাম্পিয়নশিপে অনূর্ধ্ব-১৩ বিভাগেও সেরা হয়েছে সে।
ইউরোপীয় চ্যাম্পিয় নশিপেও খেলেছেন ফাহিম। বিশ্ব জুনিয়র দাবায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন তিনি। চরম বিপর্যয়ের মুখেও ভেঙে না পড়ে লড়াকুর মতো দৃঢ়তা দেখিয়েছেন ফাহিম ও তার বাবা।
ফাহিম বয়স এখন ১৯ বছর। ফ্রান্সের দাবা ফেডারেশন ও ফরাসি ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের চেষ্টায় তাদের নাগরিকত্ব পাওয়ার বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়।
আপনার মতামত লিখুন :