ইয়াসমিন : দুবছর আগে বার্মার প্রতিরক্ষা বাহিনী উত্তর রাখাইন রাজ্যের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে জঙ্গিদের আক্রমণের জবাবে লক্ষ লক্ষ নিরস্ত্র নারী-পুরুষ ও শিশুর বিরুদ্ধে নির্মম হামলা চালায়। নিরাপত্তা বাহিনীর ওই হামলা ছিল রাখাইনে জঙ্গি হামলার তুলনায় একেবারেই অসামঞ্জস্যপূর্ণ জবাব। রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলোতে বর্মি সামরিক বাহিনীর ভয়াবহ নৃশংসতার পরিণতিতে ৭ লাখ ৪০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পাড়ি জমায়। ওইসব নৃশংসতা ছিলো জাতিগত নির্মূলের সমতুল্য।
বিগত সত্তর বছরে বর্মি সামরিক বাহিনী শুধু রাখাইন রাজ্যের জনগণের বিরুদ্ধেই মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে তা নয়। সামরিক বাহিনীর জবাবদিহি ও তাদের ওপর বেসামরিক তত্ত্বাবধানের অভাবের কারণে রাখাইন রাজ্যের পাশাপাশি কাচিন ও শান প্রদেশসহ বার্মার অন্য কিছু স্থানেও সেনাবাহিনীর নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে। আমরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন, নির্বিঘ্ন মানবিক প্রবেশাধিকারের সুযোগদান এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনৈতিক সংলাপে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানাই।
আমরা এই শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের অব্যাহত উদারতার প্রশংসা করি। প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলায় মানবিক সহায়তা দেয়া শীর্ষস্থানীয় দেশ। ২০১৭-এর আগস্টে সহিংসতার সূত্রপাতের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ৫৪ কোটি ২০ লাখ ডলার সরবরাহ করেছে। আমরা অন্যদেরও এই মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে অবদান রাখতে আমাদের সঙ্গে যোগদানের আহ্বান অব্যাহত রাখছি।
বার্মায় নিপীড়নের শিকার এবং বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হওয়া দশ লাখের বেশি শরণার্থীর কথা আমাদের ভাবনায় রয়েছে। একটি শক্তিশালী, শান্তিপূর্ণ, সুরক্ষিত এবং সমৃদ্ধ গণতন্ত্র গড়ে তোলার জন্য বার্মার প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার এবং জবাবদিহিতা অপরিহার্য। আমরা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং স্বেচ্ছায় দেশে ফেরার পরিবেশ সৃষ্টি করার প্রচেষ্টায় সমর্থন দিতে অন্যদের প্রতি আহ্বান অব্যাহত রাখছি।
এ আগস্টেই রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি বিষয়ে কফি আনানের নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা কমিশনের প্রতিবেদন এবং সুপারিশ প্রকাশের দু’বছর পূর্তি। এসব সুপারিশের অনেকগুলো ছিলো রোহিঙ্গাদের প্রতি প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্য নিয়ে যা আজও অব্যাহত রয়েছে। আমরা বর্মি সরকারকে আনান কমিশনের সুপারিশগুলি বাস্তবায়নে উৎসাহিত করে যাচ্ছি। ওই সুপারিশগুলোই বার্মা এবং রাখাইন রাজ্যের পালিয়ে যাওয়া মানুষসহ সবার এগিয়ে যাওয়ার জন্য সর্বোত্তম পথ। শরণার্থীদের ফেলে আসা ঘরবাড়ি বা পছন্দের অন্য কোনো স্থানে স্বেচ্ছামূলক, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ এবং টেকসইভাবে প্রত্যাবর্তন করার পরিবেশ সৃষ্টিতে বার্মাকে উৎসাহিত করতে আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের সঙ্গে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবো। সম্পাদনা : আহসান/মুসবা
আপনার মতামত লিখুন :