প্রভাষ আমিন : ৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে ৩২ বছরের টগবগে তরুণ মোজাফফর তখনকার মুসলিম লীগের শিক্ষামন্ত্রী মফিজুল ইসলামকে হারিয়ে চমক সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি ছিলেন মওলানা ভাসানীর অনুসারী। কিন্তু ৬৭ সালে আদর্শের প্রশ্নে দুজনার দুটি পথ দুটি দিকে বেঁকে যায়। ভাসানীর নেতৃত্বে রয়ে যায় চীনপন্থী বামরা। আর মস্কোপন্থীদের নেতৃত্ব দেন অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ। সেই থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনিই ন্যাপের সভাপতি। আপনি তার অনেক কাজের সমালোচনা করতে পারবেন।
কেন তিনি ৫২ বছর ধরে একটি দলের সভাপতি, ধর্ম-কর্ম-সমাজতন্ত্র আসলে এক ধরনের বিভ্রান্তি, সমাজতন্ত্রকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছতে পারেননি কেন? স্বাধীনতার পর ন্যাপ-সিপিবি কার্যকর বিরোধী দলের ভূমিকা রাখতে পারেনি বলেই উগ্র জাসদ আর প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি সেই জায়গাটা পূরণ করে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করেছিলো। এসব প্রশ্ন-অভিযোগ আপনি তুলতেই পারেন। সাংগঠনিকভাবে অনেক প্রশ্ন থাকলেও ব্যক্তি অধ্যাপক মোজাফফরের বিরুদ্ধে কেউ কখনো কোনো অভিযোগের আঙ্গুল তুলতে পারেনি। তার সততা, নিষ্ঠা, আদর্শের প্রতি একাগ্রতার কোনো তুলনা নেই। তিনি আদর্শের সঙ্গে একচুলও আপোস করেননি। বিশ্বাস থেকে নড়েননি এক ইঞ্চিও।
তার অনেক কমরেড যখন নামের আগে আলহাজ বসিয়ে নেন, তখনও তিনি বামপন্থায় অবিচল। আপোস না করে, লোভের ঊর্ধ্বে থেকেও যে এই বাংলাদেশে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত রাজনীতি করা যায়, তার উদাহরণ হয়ে থাকবেন মোজাফফর আহমেদ। এখনকার রাজনীতিবিদদের দেখলে মনে হয়, রাজনীতি মানে রাজা হওয়ার নীতি। আর অধ্যাপক মোজাফফরদের দেখলে মনে হয়, রাজনীতি আসলে নীতির রাজা। মন্ত্রিত্ব যার সম্মতির অপেক্ষায় ফিরে যায়, সেই তিনি শেষ বয়সে স্বাধীনতা পদকও ফিরিয়ে দেন, কারণ পদকের জন্য বা কিছু পাওয়ার আশায় মুক্তিযুদ্ধ করেননি। মন্ত্রিত্ব কিংবা পদক ফিরিয়ে দেয়া এমন সন্তপুরুষ রাজনীতি আর কখনো পাবে? অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের একটা যুগের অবসান ঘটলো। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া সর্বশেষ জাতীয় নেতা ছিলেন তিনি। তার স্মৃতির প্রতি গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা। আমাদের এখনকার রাজনীতিবিদরা যদি অধ্যাপক মোজাফফরের জীবন থেকে কিছু শেখেন, জাতির বড্ড উপকার হয়। সংক্ষিপ্ত। ফেসবুক থেকে