রফিউর রাব্বি : বাংলাদেশের প্রগতিশীল রাজনীতিতে আলো ছড়ানো অনন্য ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ। শিক্ষা জীবনের কৃতি শিক্ষার্থী কর্মজীবনে অধ্যাপনার পেশায় যোগ দিয়েছিলেন। ঢাকা কলেজ এবং তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির শিক্ষক ছিলেন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপনা ছেড়ে দিয়ে সম্পূর্ণভাবে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে যান। ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে নিজ জেলা কুমিল্লার দেবিদ্বার আসনে মুসলিম লীগের শিক্ষামন্ত্রীকে পরাজিত করে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন।
মোজাফফর আহমেদ ১৯২২ সালের ১৪ এপ্রিল কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার উপজেলার এলাহাবাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা স্কুল শিক্ষক আলহাজ কেয়াম উদ্দিন ভূঁইয়া, মাতা আফজারুন্নেছা। আওয়ামী লীগের বিরোধিতা সত্ত্বেও ১৯৫৭ সালের ৩ এপ্রিল পূর্ববঙ্গ প্রাদেশিক পরিষদে ন্যাপের প্রতিনিধি নেতা হিসেবে অধ্যাপক মোজাফফর আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের
প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। সামরিক শাসক আইয়ুব সরকার তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরওয়ানা ও হুলিয়া জারি করে ১৯৫৮ সালে। তাকে ধরিয়ে দিলে পুরস্কার প্রাপ্তির ঘোষণা পর্যন্ত করা হয়। আত্মগোপন থাকা অবস্থায় তিনি আইয়ুব সরকার শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন সুসংগঠিত করেন। ১৯৬৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান ন্যাপের সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। অবিভক্ত পাকিস্তান ন্যাপের যুগ্ম সম্পাদকও ছিলেন। ১৯৬৯ সালে আইয়ুব সরকারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি কারাবরণও করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রবাসী মুজিবনগর সরকারের ছয়জনের যে উপদেষ্টা পরিষদের তিনি ছিলেন একমাত্র জীবিত সদস্য। তিনি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সফর করেন। সেসময় তিনি জাতিসংঘে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ন্যাপ, সিপিবি ও ছাত্র ইউনিয়ন থেকে নিজস্ব উনিশ হাজার মুক্তিযোদ্ধা সংগঠনে অধ্যাপক আহমদের ভূমিকা ছিলো অবিস্মরণীয়। স্বৈরাচারী শাসক এরশাদ-বিরোধী আন্দোলনের শুরুতে অধ্যাপক আহমেদ কারারুদ্ধ হন। আওয়ামী লীগ সরকার তাকে স্বাধীনতা পদক প্রদান করলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ ঢাকার একটি হাসপাতালে ৯৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাসের একটি অধ্যায়েরও পরিসমাপ্তি ঘটলো। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :