মুন তাসলিমা শেখ : ‘দুজন প্রাপ্তবয়স্ক নর-নারী অফিসে প্রেম করেছেন তো হয়েছে কি? জোর তো করেননি।’ ‘দুজনের সম্মতিতে হয়েছে’। একজন নারী লিখেছেন, ‘তাদের ক্রাইমটা কি সেটাই তো বুঝলাম না।’ একজন লিখেছেন, ‘কারও ব্যক্তিগত দৃশ্য ক্যামেরায় ধরা কি অপরাধ নয়?’... অতি লিবারেল হতে গিয়ে কেউ কেউ পারসপেক্টিভলেস হয়ে যায়। ‘প্রেম করা আমার অধিকার, অফিস কক্ষে না টয়লেট কক্ষে কার কি?’... গুলিয়ে ফেলেছেন। সম্মতিতেও সবখানে সব করার অধিকার আপনার নেই। যেমন আপনি পাবলিক প্লেসে সেক্স শুরু করতে পারেন না। ‘পাবলিক নুইসেন্স’ এসে কাপলকে অ্যারেস্ট করা যায়। কয়েকটি কথা... দুজন প্রাপ্তবয়স্কের প্রেম অবশ্যই অপরাধ নয়, জাপ্টাজাপ্টি চুমুও নয়, কিন্তু প্লেসটি নির্ধারণ করুন ব্যক্তিগত। যে অফিসে কাজ করার জন্য আপনাকে বেতন দেয় সরকার বা কোম্পানি বা আপনি যদি কোম্পানির মালিকও হন, জানবেন, ওটি কাজ করার জন্য সেক্স করার জন্য নয়। অফিসের অবশ্যই কিছু নিয়ম আছে এবং একজন অফিসের হেড তার অফিসের কোনো একজন কর্মচারীর সঙ্গে যৌন আচরণ করতে পারেন না। দুজনের সম্মতি থাকলেও নয়। প্রতিটি প্রফেশনের কিছু নিয়ম আছে। ডাক্তার যেমন তার পেসেন্টের সঙ্গে সম্পর্কে লিপ্ত হতে পারে না, একজন জজকেও সম্পর্ক বিষয়ে নিয়ম মেনে চলতে হয়। সর্বোপরি একটি কর্মক্ষেত্রের ইন্টিগ্রিটি রক্ষা করা দরকার এ কারণে যে, সেখানে নারী-পুরুষ সকলে যেন নিরাপত্তা এবং ডিগ্নিটি নিয়ে কাজ করতে পারে।
একটি অফিসে কেবল যৌন আগ্রহী মানুষ থাকে না, কিছু মানুষ থাকে কর্ম আগ্রহী, তাদের জন্য পরিবেশটি কর্ম রিলেটেড দরকার। একজন বস কিছুতেই যে কারণে এ আচরণগুলো করতে পারে না তার ভেতর অন্যতম হলো সে যেন তার পজিশনকে কিছুতেই এবিউজ করতে সক্ষম না হয়। আর কর্মভিত্তিক এথিক্স তো রয়েছেই। আমার চক্রে একবার একজন সাইকিয়াট্রিস্ট তার রোগীর প্রেমে পড়ে, সে রোগীকে তার কলিগের কাছে ট্রান্সফার করে। রোগী বলে কেন? সে ফ্রাঙ্কলি বলে আমি এথিক্যালি তোমার ডাক্তার হবার যোগ্যতা হারিয়েছি, কারণ আমি তোমার প্রেমে পড়েছি। প্রফেশনাল রিলেশন এমন একটি বিষয়। আমাদের দেশে নারীরা অফিসে আসছে কয়েকটি দশক। আমার বেশিরভাগ বন্ধু অ্যাডভোকেট। কিছুদিন আগেও নারী অ্যাডভোকেটরা রাতে চেম্বার করতে গেলে তাদের স্বামীরা বসে থাকতো। এখনো আছে। এমন অনেক প্রফেশন আছে যা নারীরা কর্মক্ষেত্রে ভীষণ ইনসিকিওরড বোধ করে অফিস করে যাচ্ছে। কর্মক্ষেত্রে এ ধরনের আচরণের প্র্যাকটিস নারীর কাজকে পিছিয়ে নিতে নেতিবাচক ভূমিকা পালন করে। এ বিষয়গুলো সহজ করতে বহু আগেই অফিসে বসের রুম কাচের দরোজায় করা হয়েছে। বিষয়টি হাস্যকর হলেও কিছু কারণ আছে এর পেছনে। কারণ কিছু রিউমার প্রচারিত থাকে, বসের রুমে গেলেই বস কেবল নারীদের যৌন নিগ্রহ করে। বিষয়টি সকল সময় সত্য নয়। নারীদের জুজু বুড়ির ভয়ও দেখানো হয় কাজ থেকে বিরত রাখার জন্য।
কলিগরাও এখন বসে ওপেন প্লেসে। আলাদা আলাদা ডেস্ক, কিন্তু ওপেন অফিস। এটি দরকারি। কাজের প্লেসের একটি ইন্টিগ্রিটি দরকার, কাজের পরিবেশের কারণেই। পরিবেশ অনেক ফ্রি হয়। কেউ প্রেমে পড়লে পড়তেই পারে, কিন্তু সম্পর্কটি অফিসের বাইরে রাখবে সেটাই নিয়ম। দুজন একমত হলেই কর্মক্ষেত্রে জাপ্টাজাপ্টি করতে পারবে না, কারণ অফিস কেবল তাদের নয়, অফিস পরিবেশ সকলের জন্য, কাজের জন্য। কাজে প্রফেশনাল রিলেশন মেইন্টেইন এবং সে প্র্যাকটিস খুব দরকারি। আর একজন জেলা প্রশাসক বিছানাপাতি নিয়ে অফিস করছেন! সেটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। দুজন সম্মত হয়ে করলেও নয়। নিজের পজিশনকে ব্যবহার করে অধস্তন কর্মচারীর সঙ্গে সেক্স করাই একটি বড় ক্রাইম। পজিশনকে এবিউজ করা, পজিশনের দিক থেকে তার থেকে অধিকতর দুর্বল একজন নারীকে এবিউজ করা। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :