তৌহিদ এলাহি দীপ্ত : আইন প্রণয়নের সাত বছর পরে গঠন হতে যাচ্ছে ‘মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল।’ মানব পাচার অপরাধের দ্রুত বিচারে দেশের সাত বিভাগে সাতটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য জনপ্রশাসন এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। আগামী সেপ্টেম্বর বা অক্টোবর মাসেই আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করতে পারে এই ট্রাইব্যুনাল। সময়ের আলো
মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে পাচার সংক্রান্ত মামলাগুলো পৃথকভাবে পরিচালনার জন্য পৃথক ট্রাইব্যুনাল গঠনের কথা বলা আছে। অথচ ২০১২ সালে আইন প্রণয়নের পর এখন পর্যন্ত গঠন করা হয়নি ট্রাইব্যুনাল। প্রত্যেক জেলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মানব পাচার সংক্রান্ত মামলার বিচার পরিচালিত হচ্ছে। এসব ট্রাইব্যুনালে নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলার চাপ বেশি থাকায় দীর্ঘায়িত হচ্ছে মানব পাচার মামলার বিচার। আইনে মানব পাচার প্রতিরোধ তহবিল ও জাতীয় মানব পাচার দমন সংস্থা গঠনের উল্লেখ থাকলেও এখন পর্যন্ত সেটাও করা হয়নি।
অন্যদিকে মানব পাচার রোধে যথেষ্ট পদক্ষেপ না নেওয়ায় ২০১৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মানব পাচার প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে টায়ার-২ ওয়াচ লিস্টে রাখা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে ‘মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল’।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে ট্রাইব্যুনাল গঠনের ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, ঢাকা ও খুলনা বিভাগকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। কারণ এসব বিভাগের বেশকিছু জেলায় মানবপাচারের ঘটনা সবচেয়ে বেশি। কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ ও চাঁদপুরে মানব পাচারের ঘটনা বেশি ঘটছে বলে সূত্র জানায়।
‘মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন’ ২০১২-এর ৩ নম্বর আইন অনুযায়ীই ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে যাচ্ছে সরকার। এ আইনে সংঘবদ্ধভাবে মানব পাচারের জন্য মৃত্যুদন্ড, যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও সর্বনিম্ন সাত বছরের কারাদন্ড এবং অন্যূন পাঁচ লাখ টাকা অর্থদন্ডের বিধান আছে।
আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল গঠন প্রক্রিয়া শুরু হবে। তিনি বলেন, প্রতি বিভাগে যেন অন্তত একটি ট্রাইব্যুনাল স্থাপন হয় সেই প্রস্তাব করা হয়েছে। মানব পাচারের মতো ক্রাইমের জন্য বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছি। এ অপরাধের বিচারের জন্য ৬৪ জেলাতেই ট্রাইব্যুনাল থাকা উচিত বলে মনে করি। তবে আপাতত বিভাগীয় পর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল হবে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, মানব পাচার সংক্রান্ত মামলাগুলোর দ্রæত নিষ্পত্তি করতে ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিকল্প নেই। তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাওয়া বাংলাদেশিরা নির্যাতন নিপীড়নের যে ভয়াবহ বর্ণনা দেন সেগুলো মেনে নেওয়া কঠিন। শুধু চুনোপুঁটিদের ধরে মানব পাচার বন্ধ করা সম্ভব নয়, ধরতে হবে রাঘববোয়ালদের যারা দেশে-বিদেশে বসে আছে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পূর্ণকালীন সদস্য মো. নজরুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, ট্রাইব্যুনাল গঠন এখন শুধু দাবির পর্যায়ে নেই অনেকটা বাধ্যবাধকতার পর্যায়ে চলে গেছে। মানব পাচারের মতো অপরাধ দমনে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এ ক্ষেত্রে সমন্বয়কের ভ‚মিকা পালন করবে।
ইনসিডিন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক একেএম মাসুদ আলী বলেন, এটি কোনো দাবির বিষয় নয়। মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল গঠন করতেই হবে। বাংলাদেশ এখন মানব পাচার বিষয়ক প্রতিবেদনের টায়ার-২ ওয়াচ লিস্টে আছে। ভয়াবহ বিপর্যয় হওয়ার আগেই সমস্যার সমাধান জরুরি।
এএস/টিইডি/এসবি
আপনার মতামত লিখুন :