শিরোনাম
◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে ১০ বছর আগে যা বলেছিলেন নরেন্দ্র মোদি ◈ জামায়াত কাদের সঙ্গে জোট করবে, জানালেন সেক্রেটারি গোলাম পরোয়ার ◈ ৫৩ বছর দেখেছি, আমরা আরও দু-এক বছর ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে দেখতে চাই:  নুরুল হক (ভিডিও) ◈ নবীনগরে বিপনী মার্কেটে আগুন, পুড়ে ছাই ১২ দোকান ◈ ‘ওরেশনিক’ রাশিয়ার নতুন ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে যা জানা গেল ◈ ফেসবুকে দাবি ‘মুগ্ধ ও স্নিগ্ধ একই ব্যক্তি’, যা বলছে ফ্যাক্ট চেক ◈ মাগুরায় উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগ সভাপতি গ্রেপ্তার ◈ জয়নাল থেকে বনে গেছেন ডা.আরিফ, নেই কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা (ভিডিও) ◈ গুমের বিচার ও গুম বিলুপ্ত করা আমাদের টপ প্রায়োরিটি : প্রেস সচিব ◈ ঢাকা মহানগরীতে মহাদুর্ভোগ

প্রকাশিত : ২৪ আগস্ট, ২০১৯, ১১:৩৯ দুপুর
আপডেট : ২৪ আগস্ট, ২০১৯, ১১:৩৯ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়াচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

মো. তৌহিদ এলাহী  : ফেসবুক-ইন্টারনেটে পর্নো ছবি, পাশ্চাত্যের অপসংস্কৃতির অনুকরণ ও শিক্ষাঙ্গনে মাদকের ছড়াছড়ি ইত্যাদি কারণে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়াচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। গত কয়েক বছরে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের ঘটনাও যেমন বেড়েছে ঠিক তেমনভাবে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের জেরে বিভিন্ন সামাজিক অপরাধের ঘটনাও বেড়েছে অনেক। বর্তমান সমাজের প্রেক্ষাপটে একজন ব্যক্তি খুব সহজেই এইধরণের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।

সময় এখন অনেক বদলেছে। আর সেই বদলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মানুষ সব দিক দিয়ে আধুনিক হয়েছে। মানুষের কাছে এখন সবকিছুই খুব সহজলভ্য। সবার হাতে এখন স্মার্টফোন, ঘরে বসেই সারা পৃথিবী একেবারে হাতের মুঠোয়। পৃথিবীটা এখন খুব ছোট হয়ে গেছে আমাদের কাছে। বিনোদনের কতই না সামগ্রী!

বর্তমানে স্যোশ্যাল মিডিয়ার কল্যানে মিডিয়া এবং অনলাইন চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে আমরা নতুন লোকজনের সঙ্গে পরিচিত হই হরহামেশাই। এভাবে অনেক ক্ষেত্রে নিছক বন্ধুত্ব ভালোবাসায় পরিণত হয়। একজন অনলাইনে চ্যাট করতে করতে নিজের অজান্তেই অপর প্রান্তের মানুষের সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছেন। অনেকেই এতে কোনও রকম খারাপ কিছু আছে বলে মনে করেন না।

তারপর এমন একটা সময় আসে যখন এই সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া ব্যক্তির কাছে ব্যক্তিগত চাহিদা বাড়তে শুরু করে, ফলত সে আর একজনের উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। কারণ তাঁর মনে হয় যে বিপরীতে থাকা ব্যক্তি বোধহয় তাঁকে যথেষ্ট সময় দিচ্ছেন না বা তাঁর কাছে হয়তো সম্পর্কটার তেমন একটা গুরুত্ব নেই। এঁদের মধ্যে ঠিক এবং ভুল বিচার করার বুদ্ধিও লোপ পায়। প্রায় সব ক্ষেত্রেই এই ধরণের সম্পর্কগুলো গোপন রাখতে হয় বলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়ে।

অপরাধ বিশ্লেষকদের মতে, ‘সংস্কৃতির ভারসাম্যহীনতা’ এ ধরনের অপরাধের বড় কারণ। সামাজিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা, পারিবারিকভাবে সন্তানদের নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা ও বিদেশি অপসংস্কৃতি চর্চা বন্ধের মাধ্যমে এ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে কথা উঠলেই সবাই পশ্চিমা বিশ্বের দিকে ইঙ্গিত করেন। এই ধারণা কিছুটা হলেও ভুল। বিবাহিত নারী-পুরুষেরদের  বিবাহবহির্ভূত অবৈধ সম্পর্কের শীর্ষে রয়েছে এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ড। দেশটির ৫৬ শতাংশ বিবাহিত দম্পতিই অবৈধ সম্পর্ক রাখেন।যা সমাজের অন্যরকম নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে।

সম্প্রতি গেলো ১৭ আগস্ট খুলনায় বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে সোনাডাঙ্গা থানায় মামলা করেন খুলনা নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির এক ছাত্রী (২০)। এজাহারে ওই ছাত্রী নিজেকে অন্তঃসত্ত্বা দাবি করলে পুলিশ একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অভিযুক্ত শিঞ্জন রায়কে গ্রেফতার করে।

পৃথক ঘটনায় ১৯ জুন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে কোস্টগার্ডে কর্মরত তানজিল ইসলামের বিরুদ্ধে খুলনা থানায় মামলা করেন। ফেসবুকের মাধ্যমে তাদের পরিচয় এবং বর্তমানে অন্তঃসত্ত্বা ওই ছাত্রী তার সন্তানের পিতৃত্বের পরিচয় দাবিতে মামলা করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ছাড়া ৩ জুলাই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পাপ্পু কুমার চারুকলা ইনস্টিটিউটের লাইব্রেরিতে এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করেন। পরে পাপ্পু কুমারকে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

মানবাধিকারকর্মীদের দাবি, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনৈতিক এসব ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। এসব অপরাধের পেছনে মিশ্র সংস্কৃতির কুপ্রভাব, বিষণœতা, মাদক ও পারিবারিক নৈতিক শিক্ষার অভাবকে দায়ী করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. আবদুল জব্বার।

তিনি বলেন, ফেসবুক-ইন্টারনেটের কারণে ছেলে-মেয়েরা সহজেই কাছাকাছি চলে আসে। প্রায়ই দেখা যায়, পার্কে বা রেস্টুরেন্টে ছেলে-মেয়েরা ঘনিষ্ঠভাবে আড্ডা দিচ্ছে। অবাধ মেলামেশার ফলে তাদের মধ্যে শারীরিক আকর্ষণ তৈরি হয়। অধ্যাপক ড. মো. আবদুল জব্বার বলেন, ‘‘আমরা বর্তমানে ‘মিক্সড কালচারের’ (মিশ্র সংস্কৃতি) একটা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি, যেখানে রয়েছে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি, ভারতীয় সংস্কৃতি, বাঙালি সংস্কৃতি ও মধ্যপ্রাচ্যের সংস্কৃতি। এই মিক্সড কালচারের মধ্যে থেকে বাঙালি সংস্কৃতির মূল্যবোধে পচন ধরেছে। অন্যের সংস্কৃতি, তাদের পোশাক-সাজসজ্জা অনুকরণ করতে গিয়ে সংস্কৃতির ভারসাম্যহীনতায় কোনটা গ্রহণীয় আর কোনটা বর্জনীয় এই বোধটা আমরা হারাতে বসেছি।’’ আর সামাজিক এ অবক্ষয়ের পেছনে পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক নৈতিক শিক্ষার অভাবকে বড় কারণ বলে মনে করেন নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি, খুলনার উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন।

তিনি বলেন, হঠাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় পরিসরে শিক্ষার্থীরা যখন অপজিট জেন্ডারের সঙ্গে অবাধে মেলামেশা ও অবস্থান করছে, তখন তাদের মধ্যে সাময়িক ‘রিয়ালিটি শক বা অর্গানাইজেশন বিহ্যাভিয়ার টার্ম’ শুরু হয়। এর সঙ্গে আধুনিকতার নামে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির পর্নোগ্রাফি একত্র হয়ে তারা বিপথগামী হয়ে পড়ে। মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা অপরাধের লাগাম টানতে পরিবার, সমাজ ও প্রশাসনের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ওপর জোর দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের জেরে গত কয়েক বছরে বহু হত্যার ঘটনা উঠে এসেছে। তবে সকল ব্যাক্তি এ সকল কর্মকান্ডে লিপ্ত হয় না, সবাই খুন করে না। তাই যাঁরা খুন করে তাঁদের কোনও বড় রকমের মানসিক সমস্যা আছে। । আবার অনেক সময় যখন কোনও ব্যক্তির প্যারানয়েড স্কিৎজোফ্রেনিয়ায় থাকে তখনও তিনি খুন পর্যন্ত করে ফেলতে পারেন।

টিএডি/এসবি

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়