আমিন মুনশি : হজ মানুষের মধ্যে তীব্র দায়িত্বানুভূতি সৃষ্টি করে। ঈমানকে বলিষ্ঠ করে। সাধারণভাবে মনে করা হয়, দুনিয়ার ঝামেলামুক্ত হয়ে হজে যাওয়া দরকার। তাই অনেকে বৃদ্ধ বয়সে হজে যান। হজ থেকে এসে জগৎ-সংসারে সময় দিতে চান না। কেউ কেউ দুনিয়াবিমুখ হয়ে পড়েন। আবার অনেকে হজ থেকে ফিরে এসে হালাল-হারাম বাছবিচার না করে আগের মতো চলতে থাকেন। ইরশাদ হয়েছে, হজ প্রস্তুতির আগে হজযাত্রী অবশ্যই ‘রাফাস’- অশ্লীলতা, ‘ফুসুক’- পাপাচার ও ‘জিদাল’- ঝগড়া-বিবাদ থেকে পবিত্র থেকে ‘তাকওয়া’ অর্জনের অনুশীলন করবে। (সূরা বাকারা : ১৯৭)
তাকওয়াকে পাথেয় করে রওনা হবে। হজে ‘মাবরুর’ (কবুল হজ)-এর জন্য যেমন তাকওয়ার প্রস্তুতি দরকার, তেমন সফল হাজির হজ-পরবর্তী জীবন কার্যক্রম সর্বাত্মকভাবে ইসলামের অনুসারী হতে হবে। ‘হাজি’ তকমা নিয়ে কোরআন-সুন্নাহবিরোধী কর্মকান্ডে তৎপর হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। (সূরা বাকারা : ২০৩-২০৬)
আমরা হজব্রত পালনের অন্যতম স্লোগান ‘লাব্বায়েক’ ধ্বনি নিয়ে একটু ভেবে নিই। ‘হাজির হে আল্লাহ! তোমার দুয়ারে হাজির, (এ ঘোষণা দিতে) যে, তোমার কোনো শরিক নেই, নিশ্চিতভাবে সকল প্রশংসা তোমার, সকল নিয়ামত তোমার হাতে, সার্বভৌমত্ব একান্তভাবে তোমারই এবং সকল শিরকি ও অপবিত্রতা থেকে তুমি বিমুক্ত।’ এভাবে আবেগজড়িত কণ্ঠে হজব্রত পালনকারী শিরকি, কুফুরি সম্পূর্ণরূপে পরিহার করে একান্তভাবে কোরআন-সুন্নাহর জীবনে ফিরে আসে (তওবা করে) এবং আল্লাহর যে কোনো ডাকে সাড়া দেওয়ার ব্যাপারে সদাপ্রস্তুত থাকার দৃঢপ্রত্যয় ঘোষণা দেয়। হজের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, আরাফাতে অবস্থান, তাওয়াফে জিয়ারতসহ বাস্তব নিদর্শন ও রাসুলের (সা.) স্মৃতিবিজড়িত পুতঃপবিত্র স্থানসমূহ প্রত্যক্ষ করার ফলে হাজিদের চিন্তা-চেতনা, চরিত্র ও কর্ম এবং জীবনবৈশিষ্ট্যে ইতিবাচক পরিবর্তন হতে বাধ্য। শয়তানকে কঙ্কর মারার মাধ্যমে তার মধ্যে তাবৎ শয়তানি শক্তি দূর হয়।
সাফা-মারওয়ায় সায়ি তার মনে দৃঢ় আশা ও মহান আল্লাহর রহমতের শাশ্বত প্রত্যাশা বৃদ্ধি করে। সাঈ স্মরণ করিয়ে দেয় আল্লাহর সাহায্য পেতে হলে প্রচুর চেষ্টা বা মেহনতের প্রয়োজন হয়। নিশ্চিন্তে বসে না থেকে ছোটাছুটি করলে আল্লাহর অনুগ্রহ পাওয়া যায়। সূরা বাকারার ১৫৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই সাফা-মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত। অতএব, যে ব্যক্তি এই ঘরে হজ করে কিংবা ওমরা করে তার জন্য এতদুভয়ের প্রদক্ষিণ করা দূষণীয় নয়। আর যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কোনো ভালো কাজ করে আল্লাহ তার উপযুক্ত মূল্য দান করেন এবং তিনি সবকিছু জানেন।’
আপনার মতামত লিখুন :