খলিলুর রহমান : গ্রামীণ জনপদের উজ্জ্বল নক্ষত্র পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার কাগুজিপুলের পাল পারার এক নারী লক্ষ্মী রাণী পাল। সাংসারিক কাজ আর সন্তান লালন-পালনের মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি এই নারী। তার হাতের ছোঁয়ায় রয়েছে অপূর্ব কারুকাজ। এমনকি বিদেশে রপ্তানিযোগ্য মানসম্মত পন্য তৈরি হয় তার হাতে। কাদামাটি দিয়ে তৈরি এ কাজটি নিজ বাড়িতে বসেই করে থাকেন।
তার এ কাজের উৎসাহ জুগিয়ে ছিলেন তার স্বামী গোবিন্দ চন্দ্র পাল। বেশিরভাগ নারী শ্রমিকদের ওপর ভিত্তি করে ওই এলাকায় ৮টি আধুনিক মানসম্মত কারখানা গড়ে ওঠেছে।
তৈরি পণ্যে আধুনিক সব ডিজাইন দিতে হাত দেন লক্ষ্মী রাণী। ঢাকার বাজারে তার রকমারী ডিজাইন করা উৎপাদিত পণ্যের ব্যাপক চাহিদা থাকায় ওই বাজারমুখি সরবারহ হয় তার পন্যগুলো। বিশেষ করে ঢাকা আড়ং-এ লক্ষ্মীর পণ্যের বেশ কদর। শুধু আড়ং নয় ওই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে লক্ষ্মী রাণীর পণ্য এশিয়া মহাদেশের গণ্ডি পেড়িয়ে ইউরোপ, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে। নিজের মেধা, বিচক্ষণতা আর কৌশলকে কাজে লাগিয়ে বিশ্ব বাজার দখল করেছেন। প্রথমে ক্যাটালকের ডিজাইন দেখে কাজে হাত দেন লক্ষ্মী। অভিজ্ঞতা বেড়ে যাওয়ার কারণে এখন নিজেই মনের মাধুরী লাগিয়ে ডিজাইন তৈরি করেন। ১৫ বছর পূর্বে স্বামীর পুরনো চাক্তিতেই কাজ শুরু করেন। পণ্যের চাহিদা ও লোকবল বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে পাঁচটি চাক্তিসহ একটি ৬০ ফুট এবং আর একটি ৫০ ফুট দৈর্ঘাকার দুইটি বৃহৎ কারখানা তৈরি করেছেন। ওই কারখানায় চলে কাজ। তৈরি করেন ১৩০ ধরনের ক্রোকারিজসহ শোপিচ সামগ্রী। এর মধ্যে গ্লাস, মগ, প্লেট, তরকারির বাটি, মিষ্টির বাটি, জগ, ফুলদানি, চায়ের কাপ-পিচ, মোমদানি, অ্যাস্ট্রে, কলেয়দানি উল্লেখ্যযোগ্য।
কোনো ধরনের ক্যামিক্যাল ছাড়াই মাটির এ পণ্যগুলোতে যে রং করা হয় তাও স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা এবং প্রাকৃতিক সব উপাদান দ্বারা তৈরি। বিশেষ করে লাইট ওয়ারেঞ্জ রং এর মধ্যে মনমুগ্ধকর কালো যে সেট দেয়া হয় তা একটি গাছের কষ দ্বারা তৈরি। প্রথমে ১০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে যাত্রা শুরু হয় তার। বর্তমানে স্থানীয় বাজার দরের প্রায় চার লাখ টাকা থেকে সাড়ে চার লাখ টাকার পণ্য সরবারহ করেন আড়ং-এ প্রতিমাসে। একা কাজে সামাল দিতে না পাড়ায় তার প্রতিষ্ঠানে সকাল সাড়ে ৭ টা থেকে বিকাল ৬ টা পর্যন্ত ৩৫ জন কর্মচারী লক্ষীর সঙ্গে একই কাজ করে যাচ্ছেন। এরা প্রত্যেকে লক্ষীর মতই দক্ষ কারিগর। নারীদের শ্রমের আদলে গড়ে ওঠা এ শিল্প পল্লীগুলোতে প্রায় ১৫০ জন নারী-পুরুষ কাজ করে। বাউফলের এ শিল্পটির কারণে এ ১৫০ পরিবারে এখন অর্থনৈতিক সচ্ছ¡লতা পুরোপুরি। সম্পাদনা : মুরাদ হাসান
আপনার মতামত লিখুন :