দেবদুলাল মুন্না : মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের সম্মান সরূপ যে সাতজন বীর সন্তানকে দেশের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ উপাধি দেওয়া হয়, এর মধ্যে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান তার অন্যতম। ১৯৭১ সালের আজকের দিনে পাকিস্তানী বিমান ঘাটি থেকে একটি প্রশিক্ষণ টি-৩৩ বিমান হাইজ্যাক করে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বিমানটি ভারতের কাছাকাছি এসে বিধ্বস্ত হয় এবং তখনই তিনি শহীদ হন। তার এই সাহসিকতার তাকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে মহান এই মানুষটির বীরত্বকে সম্মান প্রদর্শনের প্রয়াসে নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলায় সাবেক রামনগর গ্রামে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ করা হয়। সাত বীরশ্রেষ্ঠ ও তিন ভাষাশহীদের জন্মস্থানে জাদুঘর ও লাইব্রেরি নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ২০০৮ সালের ৩১ মার্চ মুক্তিযুদ্ধকালীন উপঅধিনায়ক এ কে খন্দকার জাদুঘরটি এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠার ১১বছরেও পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর। গ্রন্থাগারে কিছু বই থাকলেও জাদুঘরে বীরশ্রেষ্ঠের স্মৃতিচিহ্ন নেই। অবহেলায় পড়ে আছে তাঁর পৈতৃক ভিটা।
রায়পুরা উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের ছোট্ট একটি গ্রাম রামনগর। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মাহমুদাবাদ বাসস্ট্যান্ডের পাশেই বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের স্মৃতিফলক ‘বাংলার ঈগল’। ত্রিমুখী কালো পাথরের স্তম্ভ। এর একটিতে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের প্রতিকৃতি, আরেকটি জীবনবৃত্তান্ত অপর স্তম্ভটিতে খোলা আকাশের প্রতীক হিসেবে ফাঁকা রাখা হয়েছে। মাঝে ত্রিভুজ আকৃতির স্তম্ভে টেরাকোটায় মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন দৃশ্য ফুটে উঠেছে। সবার ওপরে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউরনগর গ্রামের প্রবেশ নির্দেশক।
বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরের তত্ত¡াবধায়ক এনামুল হক বলেন, ‘দুইজনের কাজ একজন করলে যেমন হয় সেভাবেই প্রতিষ্ঠানটি চলছে। বছরের অধিকাংশ দিনই দেশের দুরদুরান্ত থেকে আগ্রহ নিয়ে লোকজন আসে কিন্তু জাদুঘরে কোনো সংগ্রহশালা না থাকায় তাঁরা হতাশ হয়ে ফিরে যান।’
গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরের সহকারী গ্রন্থাগারিক আকলিমা আক্তার বলেন, ‘গ্রন্থাগারে দুই হাজার আটশ’র মতো বিভিন্ন ধরনের বই রয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৯ থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এখানে প্রায় পাঁচ বছর আগের বই ছাড়া নতুন কোনো বই নেই। তবে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বইয়ের চাহিদাই বেশি।’ প্রায় প্রতিদিনই সকাল ৯ থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত জাদুঘর খোলা থাকে।এদিকে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের বাড়িতে কেউ থাকেন না। ফলে দরজায় ঝুলছে তালা। বাড়ির সামনে নতুন করে লাগানো হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান যুবসংঘের সাইনবোর্ড। চারপাশের বাড়িগুলোতে থাকেন বীরশ্রেষ্ঠের স্বজনরা।
শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের স্ত্রী মিলি রহমান বলেন, ‘আমাদের সন্তানেরা ভালো আছে। কিন্তু মতিউর রহমানের নামে স্মৃতি জাদুঘর এখনও অবহেলিত।যথেষ্ঠ স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।তার নামে মতিউর রহমাননগর নরসিংদীতে হলেও সেটি আছে সাইনবোর্ড সর্বস্ব ও সরকারি কাগজে কলমে আছে।কিন্তু বাস্তবে আগের নামেই গ্রামটি রয়ে গেছে।’