মহসীন কবির ও মুহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন: গত ১৪ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের(ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুরের উপরে হামলার ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন তিনি। আজ সোমবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এই সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বিভিন্ন সময় তার ও তার সংগঠনের নেতাকর্মীদের উপর হামলাকারীদের বিচার দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
নুরুল হক নুর বলেন,‘গত ১৪ ই আগস্ট চর বিশ্বাস থেকে আমার বোনের বাড়ি দশমিনা যাওয়ার পথে উলানিয়া বাজারে পটুয়াখালী- ৩ এর সাংসদ এস.এম শাহজাদা সাজুর নির্দেশে চাঁদাবাজ ও মাদকব্যবসায়ী, গলাচিপা উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন শাহ এর নেতৃত্বে তার ভাই নুরে আলম, লিটু পেদা, আব্বাস পেদা, পৌর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাইনুল ইসলাম রণো, পৌর শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক ও উলানিয়া যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাকিল, যুবলীগ নেতা ইদ্রিস, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক ফরিদ আহসান কচিন, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ আসিফ, ছাত্রলীগ নেতা জাহিদ, তূর্য্যসহ আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও শ্রমিক লীগের প্রায় শতাধিক নেতা-কর্মীরা আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে রড, স্টীলের পাইপ ও চাপাতি নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। হামলায় প্রায় ২০-২৫ জনকে আহত, ১০ টি মটরসাইকেল ভাংচুর, ২ টি ডিসএলআর ও ৮৯ হাজার টাকা ছিনতাই হয়। আহতদের মধ্যে অমি নিজে, রবিউল, ইব্রাহিম, জাহিদ, রিয়াজসহ ৫ জন গুরুতর আহত হই।’
তিনি বলেন,‘সন্ত্রাসীরা শুধু হামলা করেই ক্ষান্ত হয়নি আমাকে চিকিৎসার মতো মৌলিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত করেছে তারা। ডাক্তার সিটি স্ক্যান ও ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা করার জন্য বরিশাল মেডিকেলে রেফার করলেও সন্ত্রাসীরা এবং পুলিশ আমাকে জোর করে বাসায় পাঠিয়ে দেয় এবং এ ঘটনা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য আমাকেও আমার পরিবারকে নিয়মিত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।’
নুর বলেন,‘গত ৩০ শে জুন ২০১৮ থেকে এ পর্যন্ত ভিপি হওয়ার পূর্বে ৩ বার (৩০ শে জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে, ২৪ জানুয়ারি বাংলা একাডেমি ও ১১ ই মার্চ রোকেয়া হলে) এবং ভিপি হওয়ার পর ৫ বার (১২ ই মার্চ টিএসসি, ২ এপ্রিল এস.এম হল, ২৫ মে ব্রাক্ষণবাড়িয়া, ২৬ মে বগুড়া ও ১৪ অগাস্ট উলানিয়া) মোট ৮ বার ছাত্রলীগ ও আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদের দ্বারা হামলার শিকার হই। প্রতিবার প্রকাশ্যে ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনা ঘটলে ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং কোন কোন ক্ষেত্রে পুলিশের সহযোগিতায় চেয়েও পাওয়া যায় নি। পুলিশের নিরব ভূমিকা ছিলো সন্ত্রাসীদের সহায়ক। এমতাবস্থায় আমি আমার প্রাণনাশের শঙ্কাবোধ করছি। আমি কোন অন্যায়- অপরাধ করিনি। শুধুমাত্র অন্যায় - অনিয়মের প্রতিবাদ করার কারণেই আমি ও ' ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ এর নেতা-কর্মীরা বার বার ক্ষমতাসীন দলের রোষানলের স্বীকার হয়েছি। ক্ষমতাসীন দলের নেতা ছাড়াও ও সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার লোকদের কাছ থেকেও প্রতিনিয়ত হুমকির সম্মুখীন হচ্ছি।’
তিনি বলেন,‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট অনুরোধ, কিছুদিন আগেও বিবিসি বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আপনি নিজেই বলেছেন সরকারের সমালোচনা করতেই বাধা নেই, দেশ ভিন্ন মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। তাই আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ ভিন্নমতের মানুষের উপর দমন-পীড়ন বন্ধ করে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখতে আপনার দলের নেতা-কর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেন। দেশে শাসন প্রতিষ্ঠায় দলীয় প্রভাবমুক্ত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কার্যকর করুন। ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ এর নেতা-কর্মীদের অযথা হয়রানি বন্ধ করুন এবং যারা হামলার সাথে জড়িত তাদেরকে অতিদ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার নির্দেশ দিন। আমি এবং আমার ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের মুখ বন্ধ রাখতে আমাদের উপর হামলা করা হচ্ছে। অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রয়োজনে আমাদের যে কথা বলা সেটি আমাদের চলমান থাকবে। কারণ অন্যায়ভাবে কাউকে হয়রানি করে তার মুখ বন্ধ রাখা যায় না। যা জাতির পিতাই বলে গেছেন 'বাঙালি জাতিকে তোমরা দাবায়া রাখতে পারবা না '।’
১৪ আগস্ট আপনার উপরে হামলায় কোনো আইনী প্রক্রিয়ার দ্বারস্ত হয়েছেন কিনা জানতে চাইলে নুর বলেন,‘ঐ দিন হামলা হতে পারে এমন আশঙ্কায় গলাচিপা পুলিশের সহযোগিতা চাইলেও ওসি কোন ধরণের সহযোগিতা করেনি। এমনকি পুলিশের উপস্থিতিতেও সন্ত্রাসীরা আমাদের উপর হামলা চালায় এবং পুলিশ ও আমার আত্মীয়, সমর্থকদের গ্রেফতারের হুমকিও দেয়। সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে নগ্ন হামলা চালালেও ওসি হামলার কথা অস্বীকার করে। তবে আমরা ঐ থানায় ঐ পুলিশের কাছে মামলা করে কোনো বিচার পাবো? পাবো না। দেশে এখন ন্যায়বিচারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করতে হয়। শুধুমাত্র ন্যায়বিচার আমরা তখনই পাবো, যখনই প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিবেন। তাই আমরা তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
ছাত্রলীগের দায়িত্বশীল নেতাকর্মীরা বলছেন,‘আপনার অবস্থান হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং আপনি রাজনৈতিক দল গঠন করতে চান সেজন্য ক্ষুব্ধ হয়ে যে এলাকায় যাচ্ছেন সে এলাকার লোকজন আপনার উপর হামলা করছে’ এ বিষয়ে আপনি কি বলতে চান?
নুরুল হক নুর বলেন,‘বাংলাদেশের ইতিহাসে এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা শুধু মাত্র বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে ভাবেনি। দেশকে নিয়ে ভেবেছে। ৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন জাতির ইতিহাসে সকল আন্দোলন সংগ্রামে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নেতৃত্ব দিয়েছে। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে পড়ে থাকবো না। আমরা সারা দেশ নিয়ে অবশ্যই ভাববো।’
‘আর রাজনৈতিক দল গঠনের কথা যদিও সেই ধরণের কথা আমরা কখনো চিন্তা করিনি। কেউ যদি করেও থাকে সেটি তো ক্ষমতাসীন দলের কাজ নয় হামলা মামলা করে বন্ধ করা। কারণ একটা মানুষের রাজনীতি করার তো সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে। সভা সমাবেশ মিছিল মিটিং করার অধিকার তো রয়েছে। আর সেখানে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন বা ক্ষমতাসীন দলের লোক কেন হামলা করবে? যদি আইনের ব্যাত্যয় ঘটে তবে তা আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দেখবেন। প্রত্যেকটি ঘটনার সাথে আমরা স্পষ্ট প্রমাণসহ দিয়েছি সেখানে ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ জড়িত রয়েছে।’
আপনার মতামত লিখুন :