প্রভাষ আমিন : ব্রিটিশ আমলে বাংলাদেশে নদী ছিলো হাজারের উপরে। ষাটের দশকেও ছিলো ৭৫০টি নদী। এখন বাংলাদেশে মূল নদীর সংখ্যা ২৩০টি। এই হারে কমতে থাকলে নদীমাতৃক বাংলাদেশ একদা নদীমুক্ত হয়ে যাবে। তো এই নদীগুলো কই গেলো? কে খেলো? কে দখল করলো? নিশ্চয়ই অন্য কোনো দেশ বা অন্য কোনো গ্রহ থেকে অ্যালিয়েনরা ওসে মূল্যবান নদীগুলোকে তুলে নিয়ে যায়নি। আমরাই দখল করেছি। মাঝে মাঝে সরকার অবশ্য দখলের বিরুদ্ধে লোক দেখানো অভিযান চালায়। কিন্তু এসব অভিযানে আমার কখনোই কোনো আস্থা নেই। কারণ নদী যারা দখল করে, তারা শক্তিশালী, প্রভাবশালী। তাদের উচ্ছেদ করার ক্ষমতা সরকারেরও থাকে না।
তাই উচ্ছেদ অভিযানের কথা শুনলেই আমি মুখ ঘুরিয়ে নেই। আমাদের দেশে উচ্ছেদ হলো ঢেউয়ের মতো। একদিকে উচ্ছেদ হবে, পেছনে আবার দখল হবে। এবার আমার এতোদিনের বিশ্বাসে আঘাত লেগেছে। অভিযানে যে সত্যি সত্যি উচ্ছেদ হয়, এই প্রথম সেটা দেখলাম।২৯ জানুয়ারি ঢাকার চারপাশে নদী উদ্ধারে যে অভিযান শুরু হয়েছে শুরুর দিকে আমি ভেবেছি, এও বুঝি আগের মতো লোক দেখানো উচ্ছেদ। দুদিন বাদে আবার সব ঠিকঠাক। কিন্তু বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করছি এবার আগের মতো নয়, এ যেন অন্য এক অভিযান। শুরুর দিকেই এটিএন নিউজের এক টকশোতে বিআইডব্লিউটিএর তখনকার চেয়ারম্যান আমাকে এবারের অভিযান নিয়ে দৃঢ় আশাবাদের কথা শুনিয়েছিলেন, বলেছিলেন সরকারের প্রধান নির্বাহীর গ্রিন সিগন্যাল পাওয়া গেছে, এবার কেউ রেহাই পাবে না।
তাও আমি বিশ্বাস করিনি। আসলে চুন খেয়ে খেয়ে আমাদের মুখ এমনভাবে পুড়েছে, এখন দই দেখলেও বিশ্বাস করি না।
সবারই শেষ জীবন কাটানোর একটা স্বপ্ন থাকে। কারও স্বপ্ন পূরণ হয়, কারওটা হয় না। আমার স্বপ্নটা ছোট, কিন্তু জানি পূরণ হবে না। আহা আমার যদি ছোট্ট একটা নদীর পাড়ে, ছোট্ট একটা কুঁড়েঘর থাকতো। সেখানে ফেসবুক দরকার নেই, ইন্টারনেট লাগবে না, খালি বই পড়া আর গান শোনার ব্যবস্থা থাকলেই হবে। সকালে নদীর পাড়ে হাঁটবো, বুক ভরে নেবো ফ্রেশ অক্সিজেন, দুপুরে নদীতে সাঁতার কাটবো, বিকালে নদীর পাড়ে আরাম কেদারায় বসে বই পড়বো আর গান শুনবো। রাতে নদী থেকে আসা ভেজা হাওয়া গায়ে মেখে, বাতাসে ভেসে আসা ফুলের গন্ধে ঘুমিয়ে যাবো। সংক্ষিপ্ত। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :