ইসমাঈল ইমু : পশু জবাইয়ের পর উচ্ছিষ্ট বর্জ্য যেমন- হাড়, শিং, অণ্ডকোষ, মূত্রথলি ও চর্বি সাধারণত ফেলে দেয়া হয়। কিন্তু এসব উচ্ছিষ্ট সামগ্রী বিক্রি করেই বছরে কোটি টাকা আয় করছেন কিছু মানুষ। রাজধানীর হাজারীবাগ, বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে কেরাণীগঞ্জের জিঞ্জিরা এবং হাসনাবাদে রয়েছে পশুর উচ্ছিষ্ট বর্জে্যর বাজারও।
বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলেন, পশুর বর্জ্য হাড়, শিং, চামড়া, ভুড়ি, অণ্ডকোষ, মূত্রথলি, চর্বি ও রক্ত সবই রপ্তানিযোগ্য। অধিকাংশই রপ্তানি হয় চীন, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে। রাজধানীর যেসব এলাকায় পশু জবাই করা হয়, সেসব এলাকা থেকে এসব সংগ্রহের পর প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশে রপ্তানি করা হয়।
বিভিন্ন এলাকায় পশু জবাইয়ের পর পশুর ফেলে দেয়া উচ্ছষ্ট সংগ্রহ করে হাড্ডিপট্টির ভাঙারি দোকানে বিক্রি করেন এক শ্রেণির ব্যবসায়ী। ভেজা হাড়, মাথা, দাঁত বিক্রি হয় ৮ থেকে ১০ টাকা কেজি, আর শুকনো হাড়ের কেজি ১৫ থেকে ২০ টাকা। কেজি হিসেবে পশুর অণ্ডকোষ ও লিঙ্গ ২৫ থেকে ৪০ টাকা, শিং ৬০ থেকে ৮০ টাকা, চর্বি ৩০ থেকে ৬০ টাকা, রক্ত ৮ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হয়।
ব্যবসায়ীরা জানান, হাড় ওষুধের ক্যাপসুলের কাভার, সিরামিক শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয়। সারা বছর ধরে বিভিন্ন বাজার থেকে এগুলো সংগ্রহ করা হলেও তা জমে ওঠে কোরবানির ঈদে।
কারখানাগুলোয় প্রথমে হাড় শুকিয়ে গুঁড়ো করা হয়। হাড়ের গুঁড়ো ক্যাপসুলের আবরণ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। পাশাপাশি হাড় ও হাড়ের গুঁড়ো বিদেশে রপ্তানি করা হয়। গরু, মহিষ ও ছাগলের শিং ভারতে রপ্তানি হয়। শিং দিয়ে বিভিন্ন কারুপণ্য তৈরি হয়। সাবান তৈরিতে ব্যবহার হয় চর্বি। রক্ত শুকিয়ে পোল্ট্রি ও পাখির খাবার তৈরি হয়। এছাড়া মাথার হাড় মেলামাইন তৈরিসহ অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত হয়। পশুর শিং দিয়ে তৈরি হয় চিরুনি, বোতাম, এক্স-রে ফিল্ম, ক্যামেরার ফিল্ম, ঘর সাজানোর শো-পিছ। পুরান ঢাকার হাজারীবাগের হাড্ডিপট্টিতে পশুর এসব বর্জ্য কেনার ৩০ থেকে ৪০টি ভাঙ্গারির দোকান রয়েছে। সেসব দোকানে গরু-মহিষের হাড় ছাড়াও অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বেচাকেনা চলে।
হাজারীবাগের এক ব্যবসায়ী জানান, হাড় ওষুধ কোম্পানির কাছে বিক্রি করা হয় প্রতি টন ২৩ থেকে ৩০ হাজার টাকায়। তারা নিজেরই হাড় গুঁড়ো করেন মেশিনে। প্রতি মাসে টনের পর টন পশুর হাড় প্রয়োজন হয়। জাপান, কোরিয়া, চীন, জার্মানির সবচেয়ে জনপ্রিয় খাদ্য সুসেড রুলসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার পশুর অণ্ডকোষ দিয়ে তৈরি হয়। চট্টগ্রামসহ বেশ কয়েক জেলার ব্যবসায়ীরা অণ্ডকোষ কিনে বিদেশে পাঠান।
সারাদেশে পশুর বর্জ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের ৩০ থেকে ৩৫টির মতো কারখানা রয়েছে, যেখানে হাড় গুঁড়ো করা হয়। রাজধানীর হাজারীবাগ, কামরাঙ্গীরচর ছাড়াও হাড় ভাঙার কারখানা আছে যাত্রাবাড়ী ও কোনাপাড়া মৃধাবাড়ী এলাকায়। চট্টগ্রামের কালুরঘাট শিল্প এলাকায় গড়ে উঠেছে চারটি হাড়ের কারখানা। খুলনার লবণচরা এলাকায় রূপসা নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা তিনটি হাড় কারখানাও প্রতি বছর দেড় কোটি টাকার হাড় বিদেশে রপ্তানি ও স্থানীয় বাজারে বিক্রি করছে। তিনটি কারখানাই বর্তমানে লাভজনকভাবে চলছে। এগুলো গত অর্থবছরে প্রায় দেড় কোটি টাকার পশুর হাড় রপ্তানি ও স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেছে। সৈয়দপুর, বরিশাল, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরেও হাড়ের কারখানা গড়ে উঠেছে।
সম্পাদনা: অশোকেশ রায়
আপনার মতামত লিখুন :