সমকাল: প্রতিদিন বিভিন্ন কাজে টাকা লেনদেন করেন ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই। এই টাকার নোট ও কয়েনে মিলেছে 'ই-কোলাই' ও 'ফেকাল কলিফর্ম' নামের ক্ষতিকর দুই ধরনের ব্যাকটেরিয়া। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি) সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন চিত্র। খুলনা মহানগরীর ১৫টি উৎস থেকে টাকা সংগ্রহ করে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। মাংস, মাছ ও মুরগি বিক্রেতার কাছ থেকে নেওয়া টাকায় সবচেয়ে বেশি ব্যাকটেরিয়া ও মলের জীবাণু পাওয়া যায়।
খুবির পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের সম্মান শেষ বর্ষের ছাত্রী নিশাত তাসনিম এই গবেষণা করেন। তার গবেষণার শিরোনাম ছিল 'স্টাডি অন দ্য ব্যাকটেরিয়াল কন্টামিনেশন অন পেপার মানি অ্যান্ড কয়েনস অব খুলনা সিটি এরিয়া'। ছয় মাস ধরে নগরীর বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা সংগ্রহ করে তা ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। মোট ১৫টি উৎস থেকে তিনি টাকার নোট ও কয়েন সংগ্রহ করেন। উৎসগুলো হচ্ছে নতুন টাকার নোট, রিকশাচালক, মুদি দোকান, পথখাবারের দোকান, জুস বিক্রেতা, ভিক্ষুক, মুরগির দোকান, সবজির দোকান, মাছ ও মাংস বিক্রেতা, রেস্টুরেন্ট, জুতার দোকান, ফুসকার দোকান, ফল বিক্রেতা ও সাধারণ মানুষ।
ওই গবেষণায় দেখা গেছে, মাংসের দোকান থেকে সংগ্রহ করা টাকার নোটে সর্বাধিক দুই হাজার ৬৭০টি ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া, মাছ বিক্রেতার টাকায় দুই হাজার ৬০০, মুরগি বিক্রেতার টাকায় দুই হাজার ৩০০ ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়। মাছ ও মুরগি বিক্রেতার কাছ থেকে নেওয়া টাকায় দুই ৮০০ এবং মাংসের দোকানের টাকায় দুই হাজার ৬০০ ফেকাল কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়। অন্যান্য উৎস থেকে সংগ্রহ করা টাকায়ও এ দুটি ব্যাকটেরিয়া মিলেছে, তবে সেগুলো এক হাজারের নিচে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. পার্থপ্রতিম দেবনাথ জানান, এক হাজারের বেশি পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ঝুঁকিপূর্ণ।
খুবির শিক্ষার্থী নিশাত তাসনিম জানান, টাকা ও কয়েন সংগ্রহ করার সময় তিনি একটি ব্যাগ ব্যবহার করেছিলেন, যাতে তার হাত থেকে কোনো ব্যাকটেরিয়া ওই নোট বা কয়েনে না যায়। এরপর সেগুলো পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের ল্যাবে নিয়ে 'স্ট্যান্ডার্ড মেথড' অনুসরণ করে ব্যাকটেরিয়া টেস্ট করেন। পরীক্ষা করে তিনি টাকার নোট ও কয়েনে প্রচুর পরিমাণে 'ই-কোলাই' ও 'ফেকাল কলিফর্ম' পান। জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য তিনি এই কাজটি করেন বলে জানান।
এই গবেষণার সুপারভাইজার ছিলেন ওই ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী। তিনি বলেন, একই টাকা একজনের হাত ঘুরে আরেকজনের হাতে যাচ্ছে। কিছু টাকায় এত বেশি 'ই-কোলাই' ও 'ফেকাল কলিফর্ম' ব্যাকটেরিয়া রয়েছে যে, তা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি বলেন, টাকাই আমাদের জীবন; টাকা ছাড়া জীবন অচল। অথচ সেই টাকাই আমাদের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। টাকা ধরে হাত না ধুয়ে খাবার খেয়ে অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, যেটা আমরা অনেকেই বুঝতে পারছি না।
এ ব্যাপারে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এস এম কামাল বলেন, টাকায় বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণু থাকে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, মাঝে মধ্যে দেখা যায় টাকা মাটিতে, ময়লার মধ্যে কিংবা ড্রেনে পড়ে যায়। সংশ্নিষ্ট ব্যক্তি সেই টাকা শুকিয়ে আবার তা ব্যবহার করেন। খুবির গবেষণায় টাকার নোট ও কয়েনে যে ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে তা মলের মধ্যে থাকে। টাকায় যে ব্যাকটেরিয়া রয়েছে তা পেটে গেলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া প্রস্রাবে সংক্রমণও হতে পারে। সে কারণে টাকা ধরার পর হাত ধুয়ে খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
খুবির পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী জানান, শিগগিরই আরও বড় পরিসরে এ সংক্রান্ত আরেকটি গবেষণা করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। যাতে এ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত ধারণা তৈরি করা যায়। মানুষকে সচেতন করার জন্যই কাজটি করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :