ডেস্ক রিপোর্ট : ঈদ মানে আনন্দ ঈদ মানে খুশি। কিন্তু সেই আনন্দ লাগেনি কুড়িগ্রামের চিলমারী’র কয়েক শ’ পরিবারে।ঈদের খুশিতে খুশি হতে পারেনি তারা। বন্যা আর ভাঙন তাদের সেই সুখ আর খুশি নিয়েছে যেন কেড়ে। দেখা মেলেনি একটু খানি শান্তির। বারবার বন্যা আর ভাঙন নদীর তীরবর্তী মানুষের ঈদের আনন্দ নিয়ে যায় ভাসিয়ে। এবারেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। ভাঙন আর বন্যা কেড়ে নিয়েছে ঘরবাড়ি, জমি, ফসল, মাছের ঘের, সবজি ক্ষেত ও সাজানো সংসার। আনন্দের স্থানে দু’চোখ বেয়ে ঝরছে এখন কষ্টের জল। মানবজমিন
এ অবস্থায় ঋণগ্রস্ত চাষিদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম হতাশা। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো পাওনাদারদের হুমকির মুখে অনেকে রয়েছেন আত্মগোপনে।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার অধিকাংশ মানুষ দিনমজুর, মৎস চাষ, শ্রমজীবী, চাষাবাদ, কৃষি ও সবজি চাষের উপর নির্ভরশীল। গত মাসের ভয়াবহ বন্যা, ভাঙন ও টানা বৃষ্টিতে এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভেসে ও ভেঙে গেছে প্রায় ৫ শতাধিক পরিবারের সাজানো সংসার, প্রায় শতভাগ মাছের পুকুর তলিয়ে গেছে পানির নিচে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বীজতলা, ধান, পাট, সবজি ও অন্যান্য ফসলের। বাড়িঘর ভেসে তছনছ হওয়ায় অনেক ফিরতে পারেনি এখনো বাড়িতে। বিশেষ করে চাষি ও দিনমজুর পরিবারগুলো সর্বস্বান্ত হয়ে চরম হতাশায় ভুগছেন। এখানকার অধিকাংশ চাষি ও দিনমজুর পরিবার বিভিন্ন ব্যাংক, এনজিও ও সুদে কারবারিদের কাছ থেকে অধিক মুনাফায় টাকা নিয়ে ঘরবাড়ি মেরামত, মাছ চাষ, চাষাবাদে ব্যয় করেছিল। এ পরিস্থিতিতে বন্যা ও ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে অনেকে এখন পাওনাদারদের হুমকির মুখে ঘরছাড়া রয়েছেন বলেও জানান কেউ কেউ। দেনা পরিশোধ করবার মতো কোনো উপায় দেখছেন না এসব মানুষ। ফলে এলাকায় দেখা দিয়েছে নীরব দুর্ভিক্ষ। চরম অর্থ সংকট দেখা দিয়েছ এসব পরিবারের মধ্যে। অর্থাভাবে অনেক পরিবারের সন্তানদের পড়াশুনা বন্ধ হতে বসেছে। এ পরিস্থিতিতে তাদের কাছে ঈদ আনন্দ ছিল অজানা। আনন্দহীন দেনায় জর্জরিত এই মানুষগুলো বেঁচে থাকাসহ ঘুরে দাঁড়ানোর মতো কোনো অবলম্বন দেখছেন না। ঈদের দিনটিতেও তাদের ঘরে ছিল না কোনো বাড়তি আয়োজন। প্রায় পরিবারে চলছে হাহাকার। ফলে বেড়ে চলেছে পারিবারিক কলহ। উপায়ান্তর না পেয়ে অনেকে এলাকা ছাড়তে বাদ্য হচ্ছেন। এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মহিজল জানান, দেশ স্বাধীনের পর এলাকায় এমন বন্যা আগে কখনো দেখিনি। এ বছর যে ক্ষতি হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত বেশিরভাগ পরিবার ও চাষিরা এ ক্ষতি ২/৪ বছরেও পুষিয়ে উঠতে পারবেন কিনা বলা যাচ্ছে না। সরকার পাড়ার জিয়া চিংড়ি চাষি, পাত্রখাতা এলাকার কাজিমুদ্দিন মৎসচাষী, জোড়গাছ এলাকার কৃষক কাচুয়া, ডালিম, মুরাদসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের অনেকে হতাশা ব্যক্ত করে জানান, বিভিন্ন ব্যাংক, এনজিও ও সুদে কারবারিদের কাছ থেকে অধিক মুনাফায় টাকা এনে তারা চাষ করেছেন। সবই বন্যায় ভেসে গেছে। একদিকে পাওনাদাররা ঋণের টাকার জন্য তাড়া দিচ্ছে, এনজিও কর্মীরা বাড়িতে এসে বসে থাকছে। সুদেকারবারীরা টাকার জন্য নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ মো. শামসুজ্জোহা জানান, বন্যার্ত মানুষকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করা হয়েছে এবং হচ্ছে। এছাড়াও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য তালিকা করা হয়েছে কোনো প্রকার সহায়তা এলে তাদের দেয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :