বাংলা ট্রিবিউন থেকে: শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। ওই বছরের ৫ জুলাই বঙ্গবন্ধুর খুনি নুর চৌধুরী তার স্ত্রীসহ কানাডায় প্রবেশ করেন। সরকারে শেখ হাসিনার এই মেয়াদকালে (১৯৯৬ থেকে ২০০১) নুর চৌধুরী ও তার স্ত্রী কানাডায় উদ্বাস্তু হিসেবে বসবাসের জন্য দেশটির সরকারের কাছে আবেদন করেন। কিন্তু ২০০২ সালের ১ আগস্ট তাদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে কানাডার ইমিগ্রেশন এবং রিফিউজি বোর্ড। এর বিরুদ্ধে অটোয়াতে ফেডারেল কোর্টে আপিল করলে ২০০৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর তাদের আপিল ডিসমিস করে দেন আদালত। কানাডার ইমিগ্রশন এবং রিফিউজি বোর্ড খুনি নুর চৌধুরী দম্পতির আবেদন কেন প্রত্যাখ্যান করেছিল,আদালতের রায়ে তা উঠে এসেছে।
কানাডার ফেডারেল কোর্টের ওই রায়ের কপি কাছে আছে। ওই রায়ের সার-সংক্ষেপ এখানে তুলে ধরা হলো।
রায়ে নুর চৌধুরী বা তার স্ত্রীকে তাদের নামে নয়, বরং ‘এসি’ ও ‘বিডি’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।
রায়ে বিচারক জেমস রাসেল উল্লেখ করেন— ‘রিফিউজি বোর্ড আবেদনটি প্রত্যাখ্যানের সময়ে বুঝতে পেরেছে যে,নুর চৌধুরী প্রথাগত কোনও উদ্বাস্তু নয় এবং তার নিরাপত্তার কোনও প্রয়োজন নেই।’
বিচারক আরও উল্লেখ করেন, ‘আবেদন যাচাই-বাছাই করে বোর্ড বুঝতে পারে যে, প্রধান আবেদনকারী (নুর চৌধুরী) একটি মারাত্মক অরাজনৈতিক অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল এবং এ কারণে তাকে রিফিউজি হিসেবে গণ্য করা যাবে না।’
বোর্ড আরও উল্লেখ করে যে, ‘বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টকে (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) হত্যা মামলায় ১৫ জন সাবেক সেনা অফিসারের বিচারে কোনও ধরনের অনিয়ম বা পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ খুঁজে পায়নি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের গবেষণা সেন্টার।’
রিফিউজি বোর্ড মনে করে, ‘আবেদনকারী বাংলাদেশে সঠিক বিচার পেয়েছেন। বিচার চলাকালে তার অনুপস্থিতি এটা প্রমাণ করে না যে, বিচারে অনিয়ম বা পক্ষপাতিত্বমূলক হয়েছে। বরং আবেদনকারী নিজে স্বেচ্ছায় বিচারে অংশগ্রহণ করেননি।’
বিচারক রায়ে আরও বলেন, ‘উদ্বাস্তু আবেদনে নুর চৌধুরীর ভাষ্য অনুযায়ী, ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ড ঘটানোর পরে কোনও অসুবিধা ছাড়াই তিনি মিলিটারি চেক পোস্ট পার হয়ে বিভিন্ন স্থানে গিয়েছিলেন। কিন্তু এ বিষয়টি বোর্ড বিশ্বাসযোগ্য মনে করেনি। কারণ, বোর্ড বিশ্বাস করে— তিনি (নুর চৌধুরী) এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সে কারণেই তিনি মিলিটারি চেক পয়েন্ট পার হতে পেরেছিলেন।’
বোর্ড জোরালো ইঙ্গিত দেয় যে, ‘একজন ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে তিনি একটি গ্রুপের সদস্য ছিলেন, যাদের উদ্দেশ্য ছিল কোনও নির্মম ঘটনা ঘটানো। মূল আবেদনকারী এই বিষয়ে জ্ঞাত ছিলেন এবং জেনেশুনে ক্যু এর পরিকল্পনা ও ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।’
কানাডার রিফিউজি বোর্ড মনে করে, এই অভ্যুত্থান কিছু বেসামরিক মানুষের (প্রেসিডেন্টের স্ত্রী, সন্তান, পরিবারের অন্যান্য সদস্য এবং পরিষদ) বিরুদ্ধে হয়েছে। এর ফলে প্রায় ২০ জন নিহত হন।এ কারণে এটি মানবতার বিরুদ্ধে একটি অপরাধ বলে গণ্য করে রিফিউজি বোর্ড।
রায়ে বলা হয়, ‘বোর্ড তার সমাপনী সিদ্ধান্তে উল্লেখ করে যে, আবেদনকারী অর্থাৎ নুর চৌধুরী বিচার প্রক্রিয়াকে ভয় পেয়েছিলেন, নির্যাতনকে নয়। আইনের কাছে তিনি একজন পলাতক আসামি ছাড়া আর কিছুই নয়।’
আপনার মতামত লিখুন :