ডেস্ক রিপোর্ট: বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত আনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দিয়েছেন। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে এই চিঠি পাঠান তিনি। নাম প্রকাশ না করে বুধবার (১৪ আগস্ট) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা এতথ্য নিশ্চিত করেন।বাংলা ট্রিবিউন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৭৫ সালে রাশেদ চৌধুরীর চাকরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয় এবং তার প্রথম পোস্টিং ছিল জেদ্দায়। ১৯৯৬ সালে তার চাকরি ডিসমিস করা হয়। এরপর দেশে ফিরে আসতে বললে রাশেদ চৌধুরী ব্রাসিলিয়া থেকে সান ফ্রানসিসকোতে পালিয়ে যান।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছেন। বাংলাদেশ সরকার ২০০৯ সালের জুলাই থেকে বিভিন্ন সময়ে তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করলেও সে দেশের সরকার এ বিষয়ে ইতিবাচক কোনও সাড়া দেয়নি।
জানা যায়, ২০১৫ সাল থেকে রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত চেয়ে সরকার যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নিয়মিত অনুরোধ জানিয়ে আসছে। সর্বশেষ ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এ বিষয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা প্রতিটি রাজনৈতিক বৈঠকে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করি। সর্বশেষ আমাদের জানানো হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট রাশেদ চৌধুরীর বিষয়টি তাদের ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিস- এর কাছে পাঠিয়েছে।’
এই কর্মকর্তা বলেন, ’প্রত্যাবাসনের বিষয়টি একটি আইনি প্রক্রিয়া। যুক্তরাষ্ট্রে জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট এ বিষয়টি দেখাশুনা করে।’
নুর চৌধুরীর মামলার রায় হতে পারে সেপ্টেম্বরে
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, কানাডায় বসবাসকারী আরেক খুনি নুর চৌধুরীর প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত মামলার রায় সেপ্টেম্বর মাসে হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
জানা যায়, ১৯৭৬ সালে নুর চৌধুরীর চাকরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়। তার প্রথম পোস্টিং ছিল ব্রাসিলিয়ায়।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। ওই বছরের ৫ জুলাই বঙ্গবন্ধুর খুনি নুর চৌধুরী তার স্ত্রীসহ কানাডায় প্রবেশ করেন। সরকারে শেখ হাসিনার এই মেয়াদকালে (১৯৯৬ থেকে ২০০১) নুর চৌধুরী ও তার স্ত্রী কানাডায় উদ্বাস্তু হিসেবে বসবাসের জন্য দেশটির সরকারের কাছে আবেদন করেন। কিন্তু ২০০২ সালের ১ আগস্ট তাদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে কানাডার ইমিগ্রেশন এবং রিফিউজি বোর্ড। এর বিরুদ্ধে অটোয়াতে ফেডারেল কোর্টে আপিল করলে ২০০৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর তাদের আপিল ডিসমিস করে দেন আদালত।
পুনরায় ডিসমিস আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেন নুর চৌধুরী। কিন্তু সেটিও খারিজ হয়ে যায়। এরপর ২০০৬ সালে তাকে ফেরত পাঠানোর জন্য কানাডা সরকার বাংলাদেশকে চিঠি দেয়। কিন্তু তৎকালীন সরকারের অনাগ্রহের কারণে তখন নুর চৌধুরীকে দেশে ফেরত আনার সুযোগ হাত ছাড়া হয়।
২০০৮ সালে পুনরায় আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর নুর চেীধুরী কানাডার অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসে একটি প্রি-রিমোভাল রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট দরখাস্ত করে জানান, তাকে যদি ওই দেশ থেকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়, তবে তাকে ফাঁসি দেওয়া হবে। এরপর গত ১০ বছরে কানাডার সরকার এই দরখাস্তটি গ্রহণ বা প্রত্যাখান না করে বিষয়টি ঝুলিয়ে রেখেছে।
২০১৮ সালের জুন মাসে কানাডার ফেডারেল কোর্টে বাংলাদেশ এ বিষয়ে একটি রিট অব ম্যানডামাস দাখিল করে। কোর্টের কাছে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত চেয়ে নুর চৌধুরী কানাডায় কীভাবে অবস্থান করছেন (স্ট্যাটাস) সেটিও জানতে চেয়েছে বাংলাদেশ।
জানা যায়, কানাডার আদালতে এ বছরের মার্চে এ বিষয়ে একটি শুনানি হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী মাসে নুর চৌধুরীর বিষয়ে রায় দেবে আদালত।
সরকারের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ’সরকারের করা এই মামলাটি মূলত নুর চৌধুরীকে ফেরত আনার বিষয়ে নয়। এ মামলায় আমরা সেদেশে তার স্ট্যাটাস জানতে চেয়েছি। তবে এ বিষয়ে কানাডা সরকার কোনও সিদ্ধান্ত দিচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘এ ধরনের মামলায় শুনানি হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে রায় হয়ে থাকে। যেহেতু মার্চে হিয়ারিং হয়েছে, তাই আমরা ধারণা করছি, সেপ্টেম্বরের মধ্যে আমরা মামলার রায় পাবো।’
সরকারের এই কর্মকর্তা বলেন, ’রায়ের পরে আমরা পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণ করবো। আর আদালত যদি নুর চৌধুরীর স্ট্যাটাস জানানোর ক্ষেত্রে অস্বীকৃতি জানায়, তবে আমরা আপিল করবো। আর যদি আদালত তার স্ট্যাটাস জানায়, তবে ওই স্ট্যাটাসের ওপর ভিত্তি করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপরাধে তাকে প্রত্যাবাসনের জন্য আবেদন করবো।’
চার খুনির অবস্থান সম্পর্কে জানে না সরকার
এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র মতে, বঙ্গবন্ধুর ছয় পলাতক খুনির মধ্যে এই দুজনের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেলেও বাকি চার জনের অবস্থান সম্পর্কে সঠিক কোনও ধারণা নেই সরকারের।
সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, অসমর্থিত সূত্রে জানা গিয়েছিল,রিসালদার মোসলেমউদ্দিন খানকে জার্মানিতে দেখা গেছে। কিন্তু ২০১৭ সালের নভেম্বরে সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাস পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানায়, ওই খুনি জার্মানিতে নেই।
এছাড়া, অন্য দুই খুনি আবদুর রশিদ ও শরিফুল হক ডালিমকে বিভিন্ন সময়ে স্পেন ও পাকিস্তানে দেখা গেছে বলে অসমর্থিত সূত্রে খবর আসে। কিন্তু উভয় দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ২০১৭ সালে জানায়,দেশ দুটিতে এই দুই খুনির অবস্থানের তথ্য সঠিক নয়। আরেক খুনি আব্দুল মাজেদ কোথায় আছেন, সে সম্পর্কে কিছু জানে না সরকার।
আপনার মতামত লিখুন :