মাজহারুল ইসলাম : আগস্ট মাসে হামলা ও নাশকতার পরিকল্পনা ছিলো জঙ্গিদের। অনলাইনে সদস্য ও অর্থ সংগ্রহের পাশাপাশি নিজস্ব একাউন্টে চলছে তাদের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ। নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে আন্তর্জাতিক সংগঠনর সঙ্গে। ছোট দলে বিভক্ত হয়ে একাধিক গ্রুপ একযোগে একাধিক স্থানে হামলার পরিকল্পনা করছে জঙ্গিরা। ভোরের কাগজ
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কর্তব্যরত পুলিশ, পুলিশের স্থাপনা, যানবাহন, ঈদ জামাত, শোক দিবসের অনুষ্ঠান, বিভিন্ন দূতাবাস, ধর্মীয় উপাসনালয়, মাজার রয়েছে জঙ্গিদের টার্গেটে। কাশ্মির ইস্যুকে ঘিরে দেশের জল ঘোলা করতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রিমোট কন্ট্রোল বোমা ফাটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির সুযোগ খুঁজছে তারা। একাধিক জঙ্গি গ্রুপের এ ব্যাপারে তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। সে কারণে চলছে লাগাতার অভিযান। জঙ্গি হামলার আশঙ্কা মাথায় রেখে বাড়তি প্রস্তুতি নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেছেন, বিভিন্ন স্থানে পুলিশের অভিযানে অনেক জঙ্গি গ্রেপ্তার এবং নিহত হয়েছে। সে জন্য তারা পুলিশকে টার্গেট করছে। সম্প্রতি গ্রেপ্তারকৃত ৫জঙ্গি আইইডি (হাতে তৈরি বোমা) তৈরির কিছু সরঞ্জাম জোগাড় করেছিলো। গত ২৩ জুলাই খামারবাড়ি ও পল্টন এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়া আইইডিতে গ্যাসের এক ধরনের ক্যান ব্যবহৃত হয়েছে। তাদের কাছেও ওই ধরনের ৪টি কনটেইনার পাওয়া যায়।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, আবু বকর আল বাগদাদির নেতৃত্বে নিউ জেএমবি ছোট ছোট টিম করে নাশকতার পাঁয়তারা করছে। আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্ট্রেটের (আইএস) নজর কাড়তে নেটওয়ার্ক গড়ার চেষ্টা করছে নিউ জেএমবি। এজন্য ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) প্রস্তুত করা হচ্ছে। আগের তুলনায় এবার তাদের আইইডিতে রয়েছে ভিন্নতা। রিমোট কন্ট্রোল নিয়ন্ত্রিত এসব আইইডির বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণ অধরা থাকায় এই পথে হাঁটছে তারা। গুলিস্তান, পল্টন, মালিবাগ, খামারবাড়িতে পুলিশ বক্সের পাশে রিমোট কন্ট্রোল বোমা বিস্ফোরণ এবং রেখে যাওয়ার ঘটনায় পুলিশের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। আইএস এ ঘটনার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিলেও পুলিশ তা প্রত্যাখ্যান করেছে। নিউ জেএমবি এসব ঘটাচ্ছে বলে পুলিশ দাবি করলেও তার কোনো সদুত্তর মিলেনি।
সর্বশেষ, গত ৮ আগস্ট দুপুরে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে মোহাম্মদ শিবলী শাহাজাদ ওরফে সাদী, শাহ এম আসাদুল্লাহ মর্তুজা কবীর ওরফে আবাবিল, মাশরিক আহমেদ, মো. আশরাফুল আল আমিন ওরফে তারেক ও এস এম তাসনিম রিফাতকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি। তাদের দাবি, এই ৫জন পুলিশের ওপর হামলার পরিকল্পনা করছিলো। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে শিবলী শাহাজাদ ও মর্তুজা কবির নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর শিক্ষার্থী। মাশরিক যশোর এম এম কলেজ থেকে বিবিএ শেষ করেছে। তাসনিম রিফাত যশোরের উপশহর ডিগ্রি কলেজে স্নাতকে পড়ছে। আর আশরাফুল আল আমিন শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেছে। তারা নব্য জেএমবির ‘উলফ প্যাক’-এর সদস্য বলে দাবি করে পুলিশ জানিয়েছে, আদালতের নির্দেশে ৫দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে তাদের। জঙ্গিবাদে কেউ একাকী উদ্বুদ্ধ হলে তাকে ‘লোন উলফ’ বলে। আর এই সংখ্যাটি যখন এক থেকে ৫জন বা তারও অধিক হয়, তখন তাকে উলফ প্যাক বা প্যাক অব উলফ বলা হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা পুলিশের ওপর হামলার পরিকল্পনা করেছিলো।
পুলিশ সূত্র মতে, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড হামলা, পরের বছরে ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩ জেলার ৫৭০ স্থানে একযোগে হামলায় জঙ্গি সাফল্যের পর ২০১৭ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে শোক দিবসের র্যালিতে বোমা হামলার পরিকল্পনা ভেস্তে গেলেও জঙ্গিরা হাল ছাড়েনি। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রচার পেয়ে অন্যদের উদ্বুদ্ধ করতে তারা নতুন হামলার সুযোগ খুঁজছে। ঈদ জামাত, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকারমসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে তাদের টার্গেটে। আগাম প্রস্তুতি হিসেবে পুলিশ ৩ স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছে। সম্পাদনা : সালেহ্ বিপ্লব
আপনার মতামত লিখুন :