খালিদ আহমেদ : ১৫ বছরেও সাভার চামড়া নগরীর কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারের (সিইটিপি) নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। যে কারণে তরল বর্জ্যে পার্শ্ববর্তী ধলেশ্বরী নদীর দূষণের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এছাড়া কঠিন বর্জ্যের জন্য ডাম্পিং ইয়ার্ড নিমার্ণের কথা থাকলেও এখনও তা প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। ফলে ট্যানরির কঠিন বর্জ্য প্রকল্প এলাকায়ও দূষণের মাত্রা ক্রমেই বাড়ছে।
সাভারের খুবই অল্প সংখ্যক ট্যানারি নিজেদের অস্থায়ী ডাম্পিং ইয়ার্ডের মধ্যে কঠিন বর্জ্য রাখছেন। এছাড়া সিইটিপি ও ডাম্পিং ইয়ার্ড তৈরি না হওয়ায় বেশিরভাগ ট্যানারি তাদের কঠিন বর্জ্য আশপাশের এলাকায় যেখানে সেখানে ফেলছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সরানোর অন্যতম কারণ ছিল পরিবেশ দূষণ। সাভারে ট্যানারি শিল্পস্থাপনের অন্যতম শর্ত ছিল শোধনাগারসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সরকার নির্মাণ করে দেবে। কিন্তু সময়ক্ষেপণ ও দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে এগুলোর কাজ এখনও শেষ হয়নি। যে কারণে কারখানার মালিকরা চাইলেও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে যতদিন যাচ্ছে আশপাশের পরিবেশ ততই দূষণ হচ্ছে। এই দূষণের হাত থেকে বাঁচছে না ধলেশ্বরী নদীও।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুল হালিম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সব দায়িত্ব আমাদের একার না। এখানে অনেকগুলো মন্ত্রণালয় দায়িত্ব পালন করে। সুতরাং সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। তাহলে সিইটিপির যে কয় শতাংশ কাজ বাকি আছে আমরা দ্রুতই সেটা শেষ করতে পারব। ’
এরইমধ্যে ৯৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে দাবি করে তিনি জানান, বাকি ৩ শতাংশ কাজ শেষ করতে কিছুটা সময় লাগবে। তবে কত সময় লাগবে সেটা বলতে পারছি না। আর ২০২০ সালের জুনের মধ্যে চামড়া শিল্প নগরীর কাজ পুরোপুরি শেষ হবে।’
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০৩ সালের ১৬ আগস্ট সরকার সাভার চামড়া শিল্প নগরী প্রকলেপর অনুমোদন দেন। সাভারের বলিয়াপুরে দুইশ একর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠছে এই শিল্প নগরী। এর মধ্যে সাড়ে ১৭ একর জায়গায় স্থাপিত হচ্ছে সিইটিপি। প্রকল্পের কাজ ২০০৫ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনও শেষ হয়নি। এখন পযর্ন্ত মোট ২০৫টি প্লটের মধ্যে ১৫৫টি ট্যানারি স্থাপন করা হয়েছে।
প্রকল্প পরিকল্পনা অনুযায়ী, সিইটিপির মাধ্যমে ট্যানারির বর্জ্য পরিশোধন করে বিষমুক্ত তরল পাশ্বর্বর্তী ধলেশ্বরী নদীতে ফেলা হবে। আর আর ডাম্পিং এর বর্জ্য দিয়ে তৈরি হবে বিদ্যুৎ। বর্জ্য থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করা হলেও বাস্তবে কেবলমাত্র সিইটিপি’র কাজ চলছে।
বাংলাদেশ ট্যানারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহিন আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, ‘কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। আর সিইটিপির কাজ শেষ না হওয়ায় আমাদেরকে অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। আমরা ভালোভাবে ব্যবসা করতে পারছি না। ব্যাংকিং সেক্টরেও এটি নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারেও এর প্রভাব পড়ছে। আমাদের এখানে বায়ারও আসছে না। ফলে আমরা লোকসানে পড়ছি। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। যত দ্রুত এটি হবে ততই আমাদের জন্য মঙ্গল।’ সম্পাদনা : সালেহ্ বিপ্লব
আপনার মতামত লিখুন :