রমজান আলী : পিপলস লিজিং, রিলায়েন্স ফাইন্যান্সে ও বিআইএফসিসহ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে টাকা জমা রেখে বিপাকে পড়েছেন ব্যাংক ও আমানতকারীরা। তিন ব্যাংকেরই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওনা রয়েছে ২ হাজার ৬৫৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এর মধ্যে অগ্রণী ব্যাংকের পাওনা ২ হাজার ২৪০ কোটি টাকা, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ৩৮৫ কোটি টাকা ও প্রাইম ব্যাংকের রয়েছে ৩৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা। যা আদায় করতে না পেরে বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযোগ করেছে ব্যাংকেগুলো।
সূত্রে জানা গেছে, পিপলস লিজিংয়ের কাছে ১৪টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাওনা ৮৩১ কোটি টাকা। এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে ৬টি ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত এবং ৩টি বেসরকারি ব্যাংক। এ ছাড়াও কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের ৫শ’ কোটি টাকা এবং ব্যক্তিশ্রেণির আমানতকারীর ৭শ’ কোটি টাকা পিপলস লিজিংয়ে আটকে গেছে। এসব টাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি পিপলস লিজিংয়ে মেয়াদী আমানত হিসাবে জমা রেখেছিল।
জানা গেছে, পিপলস লিজিংয়ে ১১ দশমিক ২৫ শতাংশ সুদে ৩৭ কোটি টাকা রেখেছে অগ্রণী ব্যাংক। ১১ শতাংশ সুদে এফএএস ফাইন্যান্সে রেখেছে ৩৫ কোটি টাকা। ফার্স্ট ফাইন্যান্সে ১১ শতাংশ সুদে ৩৩ কোটি টাকা রেখেছে ব্যাংকটি। বিআইএফসিতে ২০১৭ ও '১৮ সালে ৯ শতাংশ সুদে রেখেছে ২০ কোটি টাকা। রিলায়েন্স ফাইন্যান্সে ১১ শতাংশ সুদে ৫০ কোটি টাকা রেখেছে অগ্রণী। সব মিলিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৯ হাজার ৩৩২ হাজার কোটি টাকা রেখেছে ব্যাংকটি। এর মধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রাখা হয়েছে ২ হাজার ২৪০ কোটি টাকা।
এ ছাড়া আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক থেকে পিপলস লিজিংকে দেওয়া ৬৩ কোটি টাকা আটকে গেছে। এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ে ১৮২ কোটি টাকা, এফএএস ফাইন্যান্সে ৫৪ কোটি টাকা, প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টে ৩৫ কোটি টাকা এবং ফারইস্ট স্টক অ্যান্ড বন্ডকে ৫১ কোটি টাকা দিয়ে আর ফেরত পাচ্ছে না ব্যাংকটি। ইসলামী ধারার ব্যাংক হয়েও সুদভিত্তিক পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে রাখা টাকা ফেরত না পেয়ে বিশেষ বিবেচনায় এসব ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ চেয়েছে।
সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকে এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের রক্ষিত ৩০ কোটি টাকার এফডিআর লিয়েনে রেখে দেওয়া ঋণও ফেরত পাচ্ছে না প্রাইম ব্যাংক। এফডিআর লিয়েনে এসআইবিএল সহযোগিতা না করায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে দু দফা অভিযোগ করেছে প্রাইম ব্যাংক।
সংশ্নিষ্টরা জানান, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানতের উল্লেখযোগ্য অংশ আসে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে। আমানত এবং ঋণ বা প্লেসমেন্ট হিসেবে ব্যাংকগুলো এসব অর্থ রাখে। অনেক ব্যাংক কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খারাপ অবস্থা জেনেও উচ্চ সুদের লোভে টাকা খাটিয়েছে। এখন লাভ তো দূরে থাক, আসলও ফেরত পাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে টাকা রাখতে চাইছে না। অনেক ব্যাংক মেয়াদ না বাড়িয়ে আগে জমানো টাকা তুলে নিচ্ছে। বিশেষ করে পিপলস্ লিজিংয়ের অবসায়নের উদ্যোগের পর এ প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে। এতে চাপে পড়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাত।
জানতে চাইলে তুলনামূলক ভালো অবস্থানে থাকা একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এমডি বলেন, সাধারণ মানুষ একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ভেতরের অবস্থা না জেনে বিনিয়োগ করতে পারেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক লাইসেন্স দিয়েছে এই ভরসায় উচ্চ সুদের লোভে যে কোনো প্রতিষ্ঠানে তারা টাকা রাখতে পারেন। তবে ব্যাংক যখন আমানত রাখবে তখন আর্থিক ভিত্তি না জেনে রাখার কথা নয়। ফলে দুর্বল প্রতিষ্ঠানে টাকা রাখার ক্ষেত্রে কোনো দুর্নীতি কিংবা চাপ ছিল কি না তা কেন্দ্রীয় ব্যাংক যাচাই করে ব্যবস্থা নিতে পারে। কয়েকটি খারাপ প্রতিষ্ঠানের কারণে পুরো খাত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পিপলস লিজিংসহ অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যাংক ও আমানতকারীর টাকা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। এর মধ্যে পিপলস লিজিং বন্ধ হয়ে গেছে। তাই বাকি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জমা রাখা আমানতকারীরা সবাই আতঙ্কে রয়েছেন। টাকা উত্তোলনের জন্য দিনের পর দিন ঘুরছেন। এর শেষ কোথায় তা জানেন না আমানতকারীরা। সম্পাদনা : মিঠুন, সুতীর্থ
আপনার মতামত লিখুন :