মুসবা তিন্নি : সন্তানের আতঙ্ক, মানসিক হতাশা নিয়ে চিন্তার ভাঁজ অভিভাবকদের কপালে। চেষ্টা করেও বদলানো যাচ্ছে না এই পরিস্থিতি, ভেবে দেখেছেন কি কখনও কারা দায়ি এর জন্য? ভুলটা কোথাও অভিভাবকদেরই নয় তো? আনন্দবাজার
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, "ভাল বাবা মা"-র কোনও সংজ্ঞা হয় না। এটা একটা ‘জার্নি’ । কয়েকটা নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলেই আপনার সন্তানের সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারেন আপনি। সন্তানের ১২-১৭ বছর বয়সে অভিভাবকরা খানিকটা সচেতন হলেই বোধহয় বাঁচানো যাবে ছোট ছোট প্রাণগুলোকে। কাজেই প্রথমে ওকে বুঝুন আর সেই মতো শুধরে নিন নিজেকে। বয়সসন্ধির এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আপনার সন্তানের হাতটা ধরুন শক্ত করে। পরিবর্তন শুধু বাহ্যিক নয়, মানসিকও সময় বদলেছে, প্রত্যক বাবা-মাকে মনে রাখতে হবে আপনার সন্তানের শারীরিক পরিবর্তনের সঙ্গে মানসিক পরিবর্তন হয়েছে। কাজেই আপনার পেরিন্টিং স্টাইলেও এবার পরিবর্তন আনা দরকার। ছোটবেলায় যে ভাবে ওকে শাসন করতেন, তার ধরন বদলে ফেলুন আজই।
মন দিয়ে কথা শুনুন : আপনার সন্তানের সমস্ত কথা খুব মন দিয়ে শুনুন। আপাত ভাবে সেগুলো যতই অযৌক্তিক মনে হোক না কেন। তবু ও কী বলছে বা কী বলতে চাইছে সেটা আগে শুনুন, বিচার করুন। তারপরই আপনার বক্তব্য তুলে ধরুন ওর সামনে। তবে আপনার মতামত ওর উপর চাপিয়ে দেবেন না।
ঘ্যানঘ্যান করবেন না : কোনও কাজ করা নিয়ে আপনার সন্তানের সামনে এক কথা বারবার বলবেন না। এই সময়টায় আপনার কথায় বৈচিত্র খুঁজতে থাকে অপরিনত মন। অন্যথায় বেঁকে বসতে পারে আপনার সন্তান। অতিরিক্ত মারধর করবেন না। এতে পাল্টা আক্রমণ করতে পারে আপনার সন্তানও। তার চেয়ে কথা বলে, আলোচনার মাধ্যমে আপনার কথাগুলো ওকে বোঝান।
পারস্পরিক আলোচনা দরকার : সপ্তাহে অন্তত একটা দিন সময় বাঁচিয়ে রাখুন ফ্যামিলি মিটিং-এর জন্য। এই দিনটায় ওর মুখোমুখি বসে ওর অভাব-অভিযোগগুলো নিয়ে পারস্পরিক আলোচনা করুন বাড়ির সকলে। এ ক্ষেত্রে ওর মন বুঝতে সুবিধে হবে। পাশাপাশি সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো ওর থেকে আড়াল করার প্রয়োজন নেই। বরং আলোচনা করুন। রাজনীতি ইত্যাদি বিষয় ওর মতামত জানতে চান। এতে ওর মানসিক বিকাশ হবে।
সেক্স এডুকেশন প্রয়োজন : তাই যৌনতা নিয়ে বিভিন্ন ট্যাবু ভেঙে বেরিয়ে আসুন। কোনও ব্যাপারেই হঠাৎ করে সীমারেখা টানতে যাবেন না। তার চেয়ে বরং বিশ্লেষণের মাধ্যেমে ওর সামনে এ বিষয়ে একটা চিত্র তুলে ধরুন। মনে রাখবেন, কোনও বিষয় থেকে ওকে আটকানোর চেষ্টা করলেই সেই বিষয়ের প্রতি ওর ঝোঁক বেড়ে যাবে।
বন্ধুত্ব : বাবা-মা কখনও বন্ধু হতে পারে না। আপনি ওর "বন্ধু স্থানীয়" বা "বন্ধুর মতো" হতে পারেন। তবে বন্ধু কখনই নয়। ও হয়ত আপনাকে সমস্ত কথা বলবে না। তবে এমন একটা বাতাবরণ তৈরি করুন যাতে ওর যেকোনও সমস্যার বেশিরভাগটাই আপনাকে এসে নির্দ্বিধায় বলতে পারে। এ ক্ষেত্রে আপনার প্রতিক্রিয়াও মার্জিত হওয়া প্রয়োজন।
পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধূলাও : ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়াশোনা না করিয়ে বিভিন্নরকম শারীরিক খেলাধূলায় ওকে উৎসাহ দিন। এতে ওর মন হালকা হবে। অনুভূতিগুলো প্রকাশ পাবে। বাইরের জগতে মিশতে ওকে উৎসাহ দিন।
সম্মান দু-তরফেই : আপনি আপনার খুদের থেকে সম্মান আশা করবেন এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু আপনি কি খেয়াল করেছেন ওর সঙ্গে আপনি কেমন ব্যবহার করেন? খেয়াল রাখুন! ওকেও ওর প্রাপ্য সম্মান দিন। তাতেই যথার্থ সম্মান ফেরত পাবেন আপনিও। বয়সের ফারাকের কারণে দুজনের পছন্দ মিলবে না কখনও। তবু ওর পছন্দের প্রতি আগ্রহ দেখালেই বিপরীতে আপনিও গুরুত্ব পাবেন।
নির্দেশ নয়, অনুরোধ করুন : এই বয়সের বাচ্চারা একটু বেশিই অভিমানী হয়। কাজেই আপনার বাক্যচয়ন, শব্দ চয়নে গুরুত্ব দিন। নির্দেশ না দিয়ে অনুরোধ করুন। এতে ফল পাবেন। বাবা-মাও যে ওর ওপর নির্ভর করছেন সেটা ওকে বোঝান।
গতিবিধিতে নজর : আপনার সন্তান কী ধরনের বই পড়ছে, কাদের সঙ্গে মিশছে, কী ধরনের ওয়েবসিরিজে আসক্ত সে সবদিক খেয়াল রাখুন। ওর স্মার্টফোনেও নজর রাখুন। পাশাপাশি ওর কথাবার্তাও খেয়াল করুন। তবে কোনও বিষয়ে নির্দেশ চাপিয়ে দেবেন না।
কাউন্সিলিং প্রয়োজন : বয়সসন্ধি এমন একটা সময় যখন অনেক ক্ষেত্রেই সন্তানের গতিবিধি বুঝতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। যদি মনে হয় আপনার সন্তান আপনার থেকে কোনও কথা লুকিয়ে রেখেছে, তখন তাঁকে এমন কারও কাছে নিয়ে যান যিনি ওর মানসিক পরিস্থিতি বুঝতে সক্ষম। সম্পাদনা : আহসান/মহসীন
আপনার মতামত লিখুন :