গাজী নাসিরুদ্দিন আহমেদ : বাঙালির কোনো কিছুই আদতে বৈশ্বিক মানের বলে আমরা দাবি করতে পারি না কতিপয় ব্যক্তিগত অর্জন ছাড়া। কিন্তু আমাদের সঙ্গীত বিশ্বমানের। অন্তত আমার বিবেচনায়। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত বাদ দিলেও রবীন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্র পরবর্তী আধুনিক বাংলা গানের সুর, ভাব ও বাণীর বৈচিত্র্য পৃথিবীর যেকোনো সংগীত ট্রাডিশনকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে। অনিবার্যভাবে এই আলোচনাটা এলো জাতীয় সংগীত নিয়ে আলোচনা উঠলো বলে। পশ্চিমবঙ্গে গান গেয়ে বাহবা কুড়ানো নোবেল ছেলেটিকে নিয়ে আমার কোনো আগ্রহ নেই। আমি সংগীত সমালোচক নই তবে মনোযোগী শ্রোতা বলে নিজেকে দাবি করতেই পারি। সেই দাবি থেকে বলতে পারি এই ছেলের গান হয় না কিছু। পাড়া-মহল্লায় এমন গায়ক ভুরি ভুরি। কিন্তু জাতীয় সংগীত নিয়ে কথা বলে সে আলোচনার খোরাক দিয়েছে রাজনীতিকে। এই যখন চলছে তখন দেখলাম মির্জা ফখরুলের মেয়ে জামাই দৃশ্যপটে হাজির। এর আগেও নানা বিষয়ে ফেসবুকে কথা বলে একটা অংশের নয়নের মণি হয়েছেন তিনি। এবার তিনি বলেছেন, মিউজিশিয়ান হিসেবে রবীন্দ্রনাথ নাকি আইয়ুব বাচ্চু, অনুপম এদের হাঁটুর যোগ্যও নয়।
আমি নিজে রবীন্দ্রমুরিদ নই, রবীন্দ্রমুরিদদের পছন্দও করি না। কিন্তু মিউজিশিয়ান হিসেবে রবীন্দ্রনাথকে অনবদ্য মনে করি। রবীন্দ্র গায়কী নিয়ে শান্তি নিকেতন যতো গোঁড়া রবীন্দ্রনাথ ততোখানিই উদার ছিলেন এই বিষয়ে। তার গানে ভারতীয় নানা অঞ্চলের সুর যেমন আছে তেমনি আছে আইরিশ-স্কটিশ সুরের প্রভাবও। ভজন-কীর্তন থেকে শুরু করে বাউল ও সহজিয়া মেঠো সুরকেও তিনি তার গানে ধারণ করেছেন। অনেক প-িতই সেরা বাঙালি মিউজিশয়ান হিসেবে রবীন্দ্রনাথের নাম করেন তারপরে নেন সলিল চৌধুরীর নাম। এখন প্রশ্ন হলো বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত যখন বাছাই করা হচ্ছে তখন রবীন্দ্রনাথের গান ছাড়া উপায় কি? ডিএল রায়ের ধনে ধান্যে পুষ্পে ভরা? আপনি এক নম্বর মিউজিক কম্পোজার বাদ দিয়ে কেন বাকিদের কাছে যাবেন? আর সেরা গানকেই কেন জাতীয় সংগীত হতে হবে? কম্পোজারকে তো সর্বজনগ্রাহ্যও হতে হবে। যে কথাটা বলতে চাই তা হচ্ছে, এই বিতর্ক যখন ইনকিলাব তুলতো সেটা যেমন সাম্প্রদায়িক ছিলো আজকে যখন মির্জা ফখরুলের জামাই তোলে তখনো সেটা সাম্প্রদায়িক রাজনীতিরই অংশ। এর পেছনে কোনো সংগীতপ্রেম নেই। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :