মো. তৌহিদ এলাহী : খাদ্যপণ্যে ভেজাল মেশাতে মেশাতে আর কত নিচে নামবে অসাধু ব্যবসায়ীরা। এতদিন খাদ্যপণ্যে ট্যানারির বর্জ্য ও টেক্সটাইলের বিষাক্ত রঙসহ বিভিন্ন কেমিক্যাল মেশানোর খবর মিলেছে। সর্বশেষ পাস্তুরিত তরল দুধে অ্যান্টিবায়োটিক ও ডিটারজেন্টের উপস্থিতিও মিলেছে। কিন্তু সবকিছুকে ছাপিয়ে এবার শূকরের চর্বি দিয়ে সয়াবিন তেল তৈরির খবর পাওয়া গেছে। সে সঙ্গে ডেইরি ও পোলট্রি ফিডেও মেশানো হচ্ছে শূকরের চর্বি। সময়ের আলো।
ঢাকার ধামরাই উপজেলার বাথুলি এলাকায় শনিবার রাতে ভোজ্যতেল ও বিভিন্ন খাদ্যপণ্য তৈরির কারখানা কেবিসি অ্যাগ্রো লিমিটেডে র্যাবের এক অভিযান চালানোর পর এসব তথ্য জানা যায়। অভিযান পরিচালনা করেন র্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম। এ সময় তিনি ১১ কোটি টাকা মূল্যের ২ হাজার টন নিষিদ্ধ শূকরের মাংস, হাড় ও চর্বি জব্দ করেন। এ ছাড়াও পুরাতন ও মেয়াদোত্তীর্ণ রাইস ব্র্যান অয়েল পুনঃবাজারজাতকরণের উদ্দেশ্যে নতুন ‘প্রাইস অ্যান্ড ডেট ট্যাগ’ লাগানোর মতো ঘৃণ্য অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটিকে ৭৫ লাখ টাকা জরিমানা ও কারখানা সিলগালা করা হয়।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম সাংবাদিকদের জানান, প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘ দিন ধরে হেলথ কেয়ার নামে রাইস ব্রান তেল বাজারজাত করে আসছে। প্রতিষ্ঠানটির বাজারজাত করা তেলের বোতল মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলে প্রতিষ্ঠানটি কৌশলে সে সব মেয়াদ উত্তীর্ণ তেল সংগ্রহ করে কারখানায় নিয়ে এসে নতুন করে মেয়াদ ও লেভেল বসিয়ে পুনরায় বাজারজাত করে আসছিল। এছাড়া দেশে শুকরের চর্বি ও মাংস আমদানি নিষিদ্ধ থাকলেও তারা ওইসব শুকরের চর্বি ও মাংস দিয়ে পোল্ট্রি ফিডি এবং গবাদি পশুর খাদ্য উৎপাদন করে আসছিল। এসব অনিয়মের কারণে প্রতিষ্ঠানটিতে ৭৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
র্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলমের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানের সময় তার সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এমদাদুল হক ও ঢাকা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সৈয়দ মো. আলমগীর। আর অভিযানটি সমন্বয় করেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-৪ এবং ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানি-২-এর স্কোয়াড কমান্ডার সহকারী পুলিশ সুপার উনু মং।
এ সময় ওই কারখানার মহাব্যবস্থাপক তাপস দেবনাথ ও পরিচালক জাহিদুর রহমানের কাছ থেকে আমদানিকৃত আরও ২ লাখ ৯৮ হাজার ২৪০ টন শূকরের চর্বি, মাংস ও হাড়ের চালান ফরম জব্দ করেন আদালত যা কুষ্টিয়া কেএনবি নামক প্রতিষ্ঠানের নামে আমদানি করা হয়। এ ছাড়াও বাজার থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ সয়াবিন তেল সংগ্রহ করে রিফাইন করে আবার বাজারজাতও করা হচ্ছিল কারখানাটি থেকে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলম অভিযানের বিষয়ে আরও বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা কারখানাটিতে অভিযান চালাই। সেখানে অভিযান চালিয়ে যেসব উপকরণ আমরা দেখেছি, তাতে আমরাও হতবাক হয়ে গেছি। ধারণাতেই ছিল না, নিষিদ্ধ শূকরের মাংস, চর্বি ও হাড় মিলবে এখানে। কারখানাটি দেশের একটি বড় শিল্প গ্রুপ মাহবুব গ্রুপ। এ গ্রুপের বিশ্বাস পোলট্রি ফিড নামের আরেকটি বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। ফিড শিল্পের অন্যতম বড় প্রতিষ্ঠান এটি। সম্পাদনা :খালিদ আহমেদ
আপনার মতামত লিখুন :