ওয়ালি উল্লাহ : টানা বৃষ্টি ও বন্যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক-মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদিকে আর ক’দিন পরই কোরবানির ঈদ। ফলে ভাঙাচোরা সড়ক মেরামতে তৎপরতা শুরু করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। কিন্তু বন্যার পানি নামতে শুরু করলেও বৃষ্টি হচ্ছে প্রায় প্রতিদিনই। এতে সংস্কারকাজ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় আসন্ন ঈদযাত্রা নিয়ে ভয় দেখা দিয়েছে যাত্রী ও পরিবহনকর্মীদের মনে। বাংলাদেশ প্রতিদিন
প্রতিবছরই ঈদের আগে সড়ক মেরামত করা হয়। কিন্তু বৃষ্টি থাকলে তা টেকে না। আর বৃষ্টিপাত না থাকলে এ মেরামত টিকে যায়। এবারের বন্যায় প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার সড়ক-মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের আওতাধীন ১৩১টি রাস্তার বেশি ক্ষতি হয়েছে। কয়েকটি সড়কের কিছু কিছু অংশ ভেঙে ভেসে গেছে। কোথাও সড়ক-মহাসড়কে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়াও বেশকিছু সেতু ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশ কিছু সড়কে ভারী যান ও কিছু সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বন্যাকবলিত ১৭ জেলার সওজ কর্মকর্তাদের পাঠানো সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, অর্থাভাবে পুরোপুরি সড়ক সংস্কার করা যাচ্ছে না এমন বক্তব্য পুরনো। তবে দেখা গেছে, গত এক দশকে ৯১ শতাংশ সড়ক-মহাসড়ক কোনো না কোনো খরচের আওতায় এসেছে। নতুন নির্মাণ করা সড়কের বয়সসীমা গড়ে ২০ বছর। পুরনো সড়ক পুনর্নির্মাণ হলে ১০ বছর টিকে থাকার কথা। আর বড় ধরনের মেরামতের পর সড়ক তিন থেকে পাঁচ বছর টিকে থাকে। কিন্তু এখন প্রায় সব সড়ক-মহাসড়কই মেরামত, দ্রুত ভাঙন এবং পুনরায় মেরামত এ চক্রে চলছে। মোটা দাগে তিন কারণে সড়ক আশানুরূপ টিকছে না। এগুলো হলো অতিরিক্ত ভারবাহী যানবাহনের চলাচল, নির্মাণ ও মেরামতকাজে দীর্ঘসূত্রতা এবং নিম্নমানের নির্মাণ ও মেরামত।
এবার বন্যা ও ভূমিধসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চট্টগ্রাম জেলা। এ জেলার আওতায় অন্তত ৫০টি সড়ক ভেঙে গেছে। সেগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম-হাটহাজারী-রাঙামাটি জাতীয় মহাসড়কের ৩০ দশমিক ৫৬ কিলোমিটার, চট্টগ্রাম পোর্ট অ্যাক্সেস সড়কে ১২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার, বারইয়ারহাট-হেঁয়াকো-নারায়ণহাট-ফটিকছড়ি সড়কে ৪৭ দশমিক ৪১ কিমি ও হেঁয়াকো-রামগড় সড়কে ১৭ দশমিক ৬৬ কিমি ভেঙে গেছে। অন্য সড়কগুলোর মধ্যে হাটহাজারী-ফটিকছড়ি-মানিকছড়ি-মাটিরাঙা-খাগড়াছড়ি সড়ক, চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক, কাঁটাখালী-রাউজান সড়ক ভেঙে গেছে।
২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সওজের অধীনে থাকা সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ, মেরামত ও প্রশস্তকরণে ৫৭ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এ সময় ৫ হাজার ১৭৯ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্ত ও মজবুত করা হয়েছে। ১৪ হাজার ৯১৯ কিলোমিটার সড়কে বিভিন্ন শ্রেণির মেরামত করা হয়েছে। বর্ষা শুরুর আগে সরকারি হিসাবে দেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক-মহাসড়কের ৪ হাজার ২৪৭ কিলোমিটার খারাপ ছিল। এরপর ভারী বর্ষা ও বন্যায় তলিয়েছে অনেক সড়ক। চলছে জোড়াতালির মেরামতও। আসন্ন ঈদুল আজহায় যানবাহনের চাপ বেড়ে গেলে এ জোড়াতালির সড়ক ঘরমুখী মানুষকে কতটা স্বস্তি দিতে পারবে, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
প্রতিবছর সওজ হাইওয়ে ডেভেলপমেন্ট মডিউল (এইচডিএম) পদ্ধতিতে সড়কের অবস্থা সমীক্ষা করে থাকে। সবশেষ গত নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ১৭ হাজার ৪৫২ কিলোমিটার সড়কের সমীক্ষা চালানো হয়েছে। এইচডিএমের প্রতিবেদন বলছে, দেশের ২২ শতাংশ জাতীয় মহাসড়ক দুর্বল, খারাপ ও খুবই খারাপ অবস্থায় আছে। অন্যদিকে আঞ্চলিক মহাসড়কের ২৩ দশমিক ১৩ শতাংশ এবং ২৫ দশমিক ৬০ শতাংশ জেলা সড়ক খারাপ। তিন শ্রেণির সড়ক এক করে হিসাব করলে দেখা যায়, দেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ২৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ খারাপ বা বেহাল।
সওজের প্রধান প্রকৌশলী ইবনে আলম হাসান বলেন, সড়কের নির্মাণ-সংস্কারের দায়িত্ব সওজের। এ কাজটি যথাযথভাবে করা হচ্ছে, যাতে করে রাস্তার কারণে কোনো যানজট না হয়। দুই লেনের সমস্যার কারণে যমুনা সেতু এলাকা, হাটিকুমরুল ও নলকায় কিছুটা সমস্যা হয়েছিল গত ঈদে। চার লেন হলে এ সমস্যার পুরোপুরি সমাধান হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, বন্যার কারণে কিছু সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেগুলোর মেরামতকাজও চলছে। তবে মহাসড়কে এ সংক্রান্ত সমস্যা না থাকায় ঈদযাত্রায় প্রভাব পড়বে না। ভারি বৃষ্টিপাত না হলে সমস্যা হবে না। ঈদের আগে যান চলাচলের উপযোগী থাকবে সড়ক। সম্পাদনা : সালেহ্ বিপ্লব
আপনার মতামত লিখুন :