সুজিৎ নন্দী : গত একযুগ ধরে রাজধানীর গুলশান লেক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরুর কথা ছিল। লেকে থাকবে স্বচ্ছ পানি, পায়ে চলার পথ (ওয়াকওয়ে), বসার জায়গা আর সৌন্দর্য বর্ধন। কিন্তু বাস্তবে সেরকম কোনো কিছুই হয়নি। সম্প্রতি উন্নয়ন কাজ চলছে। এটি কবে শেষ হবে কেউ জানে না। পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে গুলশান সোসাইটির সঙ্গে গত বছরের ১০ জুলাই রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সমঝোতা স্মারক চুক্তি স্বাক্ষর হয়। সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী গুলশানের সবগুলো লেকের পরিচ্ছন্নতা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং সৌন্দর্য বর্ধনের দায়িত্ব গুলশান সোসাইটিকে দেওয়া হয়। রাজউক এর দেখভাল করবে। লেকে মশা মারার দায়িত্ব ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের। কিন্তু এর বাস্তবায়ন চোখে পরে না। গত কয়েক দিন সরেজমিনে গুলশান, বনানী, বারিধারা, নিকেতন এলাকায় গিয়ে এরকম চিত্র দেখা গেছে।
বোরবারও গুলশান চেয়ারম্যানবাড়ির পাশের লেকের পানি থেকে তোলা হয়েছে ময়লা-আবর্জনা। পানিও এখনে আগের থেকে অপরিষ্কার ও দুর্গন্ধযুক্ত। সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য লাগানো ফুল ও পাতাবাহারের গাছগুলো দিন দিন সজীব ও সতেজতা হারাচ্ছে। পুরো লেকে নিয়মিত পরিস্কার না করায় রাজধানীর নিচু জমি, ঝিল, লেকগুলো হয়ে উঠেছে আবর্জনার ভাগাড়। আর এসব নোংরা- আবর্জনায় জন্মাচ্ছে মশা। এসব জলাশয় এবং নিষ্কাশন নালাগুলোকে মশার আদর্শ প্রজননকেন্দ্র বলছেন কীটতত্ত্ববিদরা।
ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, লেকে নিয়মিত মশা মারার ওষুধ দেয়া হচ্ছে। পরিচ্ছন্ন করে লাগানো হয়েছে নানা জাতের ফুলগাছ। আরাম করে বসা যায় এমন একাধিক বেঞ্চ বসানো হয়েছে লেকের পাড় ঘেঁষে। ভাঙাচোরা ইট, সিমেন্ট, টাইলস ও সিরামিকের বিভিন্ন জিনিস পরিস্কার করে ঝোপঝাড় কেটে ফেলা হয়েছে। বীজ ছিটিয়ে দেওয়ার পর সেখান গজাচ্ছে হালকা সবুজ ঘাস। তিনি আরো বলেন, লেক মশা উৎপাদনের উৎপত্তিস্থল কথাটি ঠিক নয়।
নিকেতন এলাকাবাসী জানান, ডোবানালা পরিস্কার না করায় মশার উপদ্রব বেড়েছে, এগুলো কোনোদিন পরিস্কার করা হয় না। মশার ওষুধও ছিটানো হয় না। খিলক্ষেত, কুড়িল, জোয়ার সাহারা এলাকার ডোবাগুলোও অপরিস্কার। বদ্ধ পানিতে জন্মাচ্ছে মশা। এলাকায় মশার ওষুধ ছিটানো হয় প্রায়ই, তবে মশার উৎপত্তিস্থলে দেওয়া হয় না। বনানী এলাকার ১১ নম্বর রোড়ের রহমত আলী বলেন, ‘মাঝে মাঝে দেখি ধোঁয়া দিয়া যায়। কিন্তু এইসব ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করে না। আমি কোনো সময় দেখি নাই। লেক ডোবানালায় পরিণত হয়েছে।’
গুলশান, বনানী, বারিধারা, নিকেতন, রামপুরাবাসীর নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতের দায়িত্বে থাকা দুই সিটি করপোরেশন বলছে, রাউজক, গণপুর্ত অধিদপ্তর, সিভিল এভিয়েশন, রেলওয়েসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান জলাশয়গুলোর মালিক, কিছু আছে ব্যক্তিগত। তাদের ভাষ্য, এসব জলাশয় পরিস্কারের জন্য করপোরেশনের আলাদা বাজেট নেই, তাছাড়া এগুলো পরিস্কারের দায়িত্বও তাদের নয়।
গুলশান-বনানী উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক আমিনুল ইসলাম সুমন বলেন, পরিবেশ উন্নয়ন ও বিনোদনকেন্দ্রে রূপান্তরের জন্য লেকপাড়ে গাছ ও ঘাস লাগানো হচ্ছে। পায়ে চলার পথ ও যান চলাচলের জন্য পথের পাশে বৈদ্যুতিক বাতিও থাকবে। গুলশান-শাহজাদপুর সংযোগ সড়ক ভেঙে একটি সেতু হবে। মহাখালী গাওসুল আজম মসজিদের পাশে সেতুটি প্রশস্ত করা হবে। বনানী থেকে গুলশান-২ যাওয়ার কালভার্টটিও ভেঙেও সেতু তৈরি হবে। গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকার বিভিন্ন সংযোগ সড়ক, ডাইভারসন রোড, কালভার্ট ভেঙে সেতু করার পরিকল্পনা রয়েছে। লেকের তলদেশের কাদা মাটি, আবর্জনা অপসারণ করে গভীরতা বাড়ানো হবে। লেকের পানির গুণমান বাড়ানোর লক্ষ্যে গ্রিন অ্যাপ্রোচ সোলার অ্যাকুয়াটিক ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপনেরও পরিকল্পনা রয়েছে। সম্পাদনা : মিঠুন
আপনার মতামত লিখুন :