স্বপ্না চক্রবর্তী : রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর দেশের পোশাক কারখানাগুলো সংস্কারের জন্য নিয়োজিত হয় ইউরোপীয় ক্রেতা জোট অ্যাকর্ড-এ্যালায়েন্স। মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় এ্যালায়েন্স বাংলাদেশ ত্যাগ করলে নিজেদের মেয়াদ বাড়িয়ে দেশের কারখানা সংস্কারে আরও ১বছর থাকছে অ্যাকর্ড। সংস্কার কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সংস্থাটি জানায়, দেশের ১৬শ কারখানার মধ্যে মাত্র ২শটি কারখানা ঝুঁকিমুক্ত আর ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে ৪শ কারখানা।
বাকি ১হাজার কারখানা এখনো পরীক্ষাধীন। তবে এ্যাকর্ডের এই সিদ্ধান্তকে সম্পূর্ণ একতরফা সিদ্ধান্ত হিসেবে মন্তব্য করেছেন দেশের পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এর সভাপতি ড. রুবানা হক। তিনি বলেন, নিজেদের স্বেচ্ছাচারিতায় নানা অজুহাতে বিভিন্ন কারখানাকে সতর্কবার্তা দিচ্ছে সংস্থাটি। এতে করে কমেছে পোশাক রফতানি, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শ্রমিক। তিনি দাবি করেছেন, অ্যাকর্ড হাইকোর্টের আদেশের পর সমঝোতা চুক্তির পরও চুক্তির শর্ত না মেনে একতরফা নতুন নতুন শর্ত জুড়ে দিচ্ছে। তাই পরবর্তীতে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে গেলে বিজিএমইএ এর সাথে আলোচনা করার জন্য অ্যাকর্ডকে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
শনিবার রাজধানীর হোটেল আমারি’তে ‘ওয়ার্কশপ অন ফায়ার সেইফটি ইস্যু অ্যান্ড টেকনিক্যাল গাইড লাইন’ শীর্ষক এক ওয়ার্কশপ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুবানা হক বলেন, অ্যাকর্ড ২০১৩ সাল থেকে আমাদের দেশে কাজ শুরু করে সেভাবেই আমাদের কারখানাগুলোর সেফটির বিষয়টি মাথায় রেখেই শিল্প সংশ্লিষ্টরা বিনিয়োগ করেন। তবে তাদের সঙ্গে আমাদের নতুন করে হওয়া চুক্তিতে একসঙ্গে কাজ করার কথা ছিল। কিন্তু তারা আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই নতুন নতুন শর্ত জুড়ে দিচ্ছে। বিজিএমইএর অজান্তেই গঠন করা হয়েছে অ্যাকর্ডের প্রোটোকল। এছাড়া অগ্নিনিরাপত্তার বিষয়ে অ্যাকর্ড কারখানাগুলোর ওপর নতুন নতুন শর্ত চাপিয়ে দিচ্ছে। বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, বিগত ছয় বছরে অ্যাকর্ড ১৬০০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ২০০ প্রতিষ্ঠানকে পরিদর্শন সনদ দিয়েছে। গত ৮মে থেকে তারা সময় বাড়িয়ে ২৮১ দিনের সময় নিয়েছে ১৪০০ প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করতে। এটা কীভাবে সম্ভব? তিনি বলেন, বিজিএমইএর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ছাড়াই ৪০০ কারখানাকে সতর্ক (এক্সেলেটেড) করেছে অ্যাকর্ড। কারখানাগুলোর নকশা, বিল্ডিং সেফটি, ফায়ার সেফটির পরও টেস্টিংয়ে ফেল দেখানো হচ্ছে। এতে রফতানি আদেশ ও কারখানার ব্যবসা কমেছে। শ্রমিকরা চাকরি হারাচ্ছে।
রুবানা হক বলেন, অ্যাকর্ড ২০১৩ সাল থেকে কাজ শুরু করেছে। যে কাজটি তাদের পাঁচ বছর আগে করার কথা ছিল সেটি তারা এখন করছে। যা আমাদের জন্য বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই অ্যাকর্ডের এসব একতরফা সিদ্ধান্ত নেওয়া বন্ধ করতে তিনি দাবি জানান।
তিনি বলেন, আমাদের এমন অনেক কারখানা আছে যেগুলো সংস্কার কার্যক্রম শেষে ভালো কাজ করছে। কিন্তু এ্যাকর্ডের কাছে সঠিক তথ্য না পৌঁছায় বর্হিবিশে^র ক্রেতাদের কাছে সঠিক তথ্য যাচ্ছে না। তাই এ্যাকর্ডকে আমরা অনুরোধ করছি বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের উন্নয়নে নতুন করে যেকোনো শর্ত আরোপের ক্ষেত্রে আমাদের সাথে যেনো একটু আলোচনা করে। তাহলেই পূর্ণাঙ্গ তথ্যটা পেতে সহজ হবে।
রুবানা হক বলেন, এ্যাকর্ডের ক্ষেত্রে যা ঘটছে তাহলো তাদের প্রথম ইন্সপেকশনে আমাদের কারখানাগুলোর যেসব ত্রুটি ধরা পড়ার কথা ছিলো তা তিন বা চারটা ইন্সপেকশনের পর ধরা পড়ছে। এর পরে যখন কারখানাগুলোকে সংশোধনীর জন্য সময় দেওয়া হচ্ছে তা একেবারে কম। কারখানাগুলো ঠিকঠাক করে সংস্কার হচ্ছে না। তিনি বলেন, এ্যাকর্ডের নিজস্ব কোনো এক্সপার্টিজ না থাকায় তারা ২০১৭ সালে আরেকটি কনট্রাক্টরকে নিয়োগ দিয়েছিলো যার নাম জনসন অ্যান্ড জিউসকে।
২০১৭ সালের অক্টোবর মাস থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত ৬ বার তারা বাংলাদেশে এসেছে এবং প্রত্যেকবার একটা একটা করে নতুন শর্ত আরোপ করছে। তারা যা ভাবছেন তাও ঠিক। তারা বলছেন তাদের শর্ত পূরণ করলে আমাদের ভালো হবে। কিন্তু তারা যেটা বুঝতে পারছে না তাহলো এই প্রত্যেকটা জিনিস ২০১৩তে জানার দরকার ছিলো। আজকে ২০১৯ এ এসে এখন এ্যাকর্ডের যখন মেয়াদ বাড়ানো হলো তখন এতগুলো টপিক আসায় কোনো ফ্যাক্টরিই আর তাল রাখতে পারছে না। যার জন্য আমাদের সংস্কার কাজে বিঘ্ন ঘটছে এবং আমাদের উন্নতিও অনেক কম হচ্ছে। এর ফলে এমনটা হচ্ছে যে বিশ্বের অন্যান্য দেশের ক্রেতাদের সাথে এ্যাকর্ড যখন যোগাযোগ করে বলছে যে এই ফ্যাক্টরির প্রগ্রেস কম ফলে ক্রেতারা ফিরে যাচ্ছে। তাই এ্যাকর্ডের কাছে আমাদের অনুরোধ কোনো কারখানা সম্পর্কে রিপোর্ট তৈরি করতে যেনো একটু বিজিএমইএ এর সাথে আলোচনা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএর নেতারা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন এ্যাকর্ডের নিরাপত্তা পরিদর্শক স্টিফেন কিন। সম্পাদনা : মিঠুন, মুনশি
আপনার মতামত লিখুন :