মো. মিলটন খন্দকার, গাজীপুর : একের পর এক মৃত্যুর কারণে এখন ক্যাঙ্গারু শূন্য হয়ে পড়েছে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক । একই কারণে অরিক্স, জিরাফ ও ব্লাক ওয়াইল্ড বিস্টও এদের যৌন সঙ্গীবিহীন হয়ে পড়েছে।
ক্যাঙ্গারু অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় পশু। এরা মারসুপিয়াল গোত্রের অর্ন্তভুক্ত স্তন্যপায়ী প্রাণি। অস্ট্রেলিয়ার আশপাশের কয়েকটি অঞ্চল ছাড়া বিশ্বের অন্য কোন দেশে তেমন দেখা মেলেনা এ প্রাণিটির। এরা দুই পা ও শক্তিশালী লম্বা লেজে ভর করে চলে। অন্য প্রাণির মত এর চারটি পা থাকলেও ক্যাঙ্গারুর সামনের দুটি পা ছোট এবং তারা লাফিয়ে লাফিয়ে চলে। এর অন্যতম বিশেষত্ব হলো, এদের পেটের নিচে একটি থলে থাকে। অপরিণত অবস্থায় বাচ্চা জন্মের পর এরা মায়ের পেটের নিচের থলের মধ্যেই বড় হয়ে ওঠে। একটি পূর্ণবয়স্ক ক্যাঙ্গারু এক লাফে ৩০ ফুট পর্যন্ত এগুতে পারে, ওজন হয় ৮৫ কেজি পর্যন্ত।
সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তবিবুর রহমান জানান, গাজীপুরের শ্রীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য ২০১৩ সালের আগস্ট মাসে প্রাণি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ফ্যালকন ট্রেডার্সের মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে কিনে আনা হয় একটি পুরুষ ও দুটি স্ত্রী ক্যাঙ্গারু। পরে এদের সাফারি পার্কের বেষ্টনীর ভেতর ছেড়ে দেয়া হয়। প্রথম অবস্থায় দেশীয় আবহাওয়ার সাথে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়েছিলো ক্যাঙ্গারু দম্পতি। এই দম্পতির ঘরেই দুই বছর পর ২০১৫ সালে প্রথম ক্যাঙ্গারু শাবক জন্ম নেয়, পরে কিছুদিনের মধ্যে জন্ম নেয়া ক্যাঙ্গারুটি মারা যায়। দেশীয় আবহাওয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে ক্যাঙ্গারুর বাচ্চা দেয়ার ঘটনাটি ছিলো দেশে প্রথম। বাচ্চা জন্মের মাধ্যমে সবার মধ্যেই ফুঁটে উঠেছিলো আশার আলো, তৈরি হয়েছিলো সম্ভাবনাও।
এর বছর খানেক পর ২০১৬ সালে ফের এই ক্যাঙ্গারো দম্পতি আরও একটি মাদি বাচ্চার জন্ম দেয়। তবে ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে পার্কের একমাত্র পূর্ণবয়স্ক পুরুষ ক্যাঙ্গারুটি মারা যাওয়ার পর পার্কটিতে ক্যাঙ্গারু পরিবারটি পুরুষ শূন্য হয়ে পড়ে। এতে নতুন প্রজন্ম আর সৃষ্টি হয়নি। পরে চলতি বছরের প্রথম দিকে দুটি মাদি ক্যাঙ্গারুও মারা যায়। এর পর থেকেই ক্যাঙ্গারু শূন্য হয়ে পরে নানা বৈচিত্রে ভরপুর দেশের সর্ববৃহৎ এই সাফারি পার্কটি।
একইভাবে এ পার্কে ৮টি অরিক্স আনা হলেও বর্তমানে আছে একটি মাত্র মাদি অরিক্স। অরিক্সগুলো দেখতে সাম্বার হরিণের মত। পার্কে আনা ১২টি ফিরাফের মধ্যে টিকে বর্তমানে আছে ৫টি মাদি সদস্য। অরিক্স ও জিরাফ পরিবারে এখন কোন পুরুষ সদস্য নেই। এছাড়া এ পার্কে (ছোট দেশীয় কাল গরু সাদৃশ্য লম্বা লোমযুক্ত) ৬টি ব্ল্যাক ওয়াইল্ড বিস্ট আনা হয়েছিলো। কিন্তু বর্তমানে এ পার্কে শুধু একটি পুরুষ ব্ল্যাক ওয়াইল্ড বিস্ট রয়েছে। যৌনসঙ্গী না থাকায় এসব প্রাণিরা প্রজনন করতে পারছে না। তাই এদের সদস্য সংখ্যাও আপাত বাড়ছে না। একক যৌন সঙ্গী বিশিষ্ট প্রাণিগুলোর বিপরীত সঙ্গী কেনার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, ক্যাঙ্গারু বিদেশী প্রাণি। বিশ্বের সর্বত্রই এদের বসবাসের উপযোগী নয়। দর্শনার্থীদের বিনোদনের নতুন মাত্রা যোগ করতেই সাফারি পার্কে ক্যাঙ্গারুসহ বিভিন্ন প্রাণি আনা হয়েছিলো। সঠিক পরিচর্যা ও কর্তৃপক্ষের নজরদারীর কারণেই দেশে প্রথমবারের মত সাফারি পার্কে দুইবার ক্যাঙ্গারু শাবকের জন্ম দেয়। এতে একটা সময় ক্যাঙ্গারু নিয়ে আশা ও সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিলো সবার মধ্যে। তবে আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে নিজেদের খাপখাওয়াতে না পেরে ধাপে ধাপে মারা যায় ক্যাঙ্গারুসহ কিছু প্রাণি। যেহেতু দেশীয় আবহাওয়া ক্যাঙ্গারুর বসবাসের জন্য উপযোগী নয় সেহেতু এ মুহুর্তে সাফারি পার্কে আপাতত নতুন করে ক্যাঙ্গারু আমদানি করার কোনো পরিকল্পনা নেই। সম্পাদনা: সুতীর্থ
আপনার মতামত লিখুন :