রেন্টিনা চাকমা : ৪ আগস্ট ফিরোজা বেগম স্মৃতি স্বর্ণপদক পুরস্কার হাতে পাবেন প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী ফরিদা পারভীন। এই গুণী শিল্পী তাঁর নজরুল গীতি, লালন ফকিরের গান এবং বর্তমান ব্যস্ততার কথা তুলে ধরেছেন আমাদের নতুন সময় পত্রিকার সঙ্গে। নজরুল সংগীত শিল্পী ফিরোজা বেগমের স্মৃতিচারন করে তিনি বলেছেন, আমাকে ফিরোজা বেগম খুবই ভালোবাসতেন। এর চেয়ে স্মরণীয় মধুর স্মৃতি আর কী হতে পারে!
আমরা একসঙ্গে গান করেছি। তাঁর গান শুনেই নজরুলের গানের প্রতি মমতা জন্মেছে, অনুপ্রাণিত হয়েছি। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর আমি লালন সাঁইজির গানে ফিরে গিয়েছি। তবে নজরুল আর লালনের গানে মানবতার কথা বলা হয়েছে। এই একটি কারনে হয়তো লালনের গানকে নিতে পেরেছি। দু'জনের মধ্যে একটা আধ্মাত্বিকতা খুঁজে পাওয়া যায়। দু'জনেই সমাজ সংস্কারের কথা বলে গেছেন। বিভিন্ন ধর্মের সমন্বয় ঘটিয়েছেন।
ইসলাম ধর্মের কথাও পাওয়া যায় দু'জনের গানের মধ্যেই। আসলে ধ্রুপদী সংগীতের চর্চা যদি থাকে, যেকোনো গানই আদর দিয়ে গাওয়া যায়। তবে গানের ফিউশন তৈরি নিয়ে তিনি বিরোধীতা করে বলেছেন, ফিউশনের নামে কনফিউশন তৈরি করছে এরা। এর স্থায়িত্ব বেশিদিনের নয়। বিশেষ করে লালনের গান। যেহেতু এটি গুরুমুখী বিদ্যা, সেহেতু সেভাবেই শিখতে হবে। খুবই পরিস্কার যে, ভারতে লালনের গান হয়না। ওরা আসলে আমার আদলে গাইবার চেষ্টা করছে। আমার গুরুর কাছ থেকে আমি যেভাবে শিখেছি, সেভাবেই গাওয়ার চেষ্টা করছে। গুরুমুখী বিদ্যার উন্নয়ন ঘটানোর চেষ্টা করছে।
ফরিদা পারভীন বলেন, কিন্তু লালনের গান সহজতর গান। আত্মস্থ করে বিশুদ্ধি, জীবাত্মার পরম আত্মার সাথে মিল খুঁজে পাওয়ার আকুতিটা আছে লালনের গানে। এই বিষয়টা তাদের গানে নেই। আছে শুধু চমক সৃস্টির প্রয়াস। লালনের গান বিশুদ্ধভাবে বাংলাদেশের গান। তবে এটা সার্বজনীন হয়েছে। সর্বভারতে যদিও ছিল, তারপরও সাঁইজির গান বাংলাদেশের মাটির গান। অনেক সময় নিজের মতো করে গাইবার চেষ্টা করে তারা। যা সঠিক নয়। আনন্দলোক, দূরদর্শন থেকে আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, বাংলাদেশের লালনের গান আর ভারতের লালনের গানে কোনো পার্থক্য খুঁজে পাই কি না। আমি স্পষ্ট বলেছিলাম, অবশ্যই পাই। আমাদেরটা হয়, আপনাদের হয়না । এই গুরুমুখী শিল্পীর বর্তমান ব্যস্ততা কাটছে তাঁর ফরিদা পারভীন ফাউন্ডেশন নিয়ে। যেখানে বাচ্চাদের গুরুমুখী শিষ্য পরম্পরায় শেখানো হয়।
তিনি বলেন, যোগসূত্র করিয়ে দেওয়া হয় গানের আদি অকৃত্রিম প্রক্রিয়াগুলোর সঙ্গে। বর্তমানে বাঁশি, তবলা ভুলে গিয়ে কীবোর্ড মুখী হওয়ার বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। তবে, তাৎক্ষণিক উচ্ছ্বসিত কন্ঠে তিনি বলেন, প্রকৃতির সঙ্গে গানের মিলন ঘটানোর জন্য অংকন শিখাটাও জরুরী। শেষে সংগীতকে ঐশ্বরিক হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, এটি চমক দেওয়ার বিষয় নয়, আত্মস্থ করার বিষয়। আরেকজন যেন সেই সংগীত আত্মস্থ করতে পারে, ভাবে ভাব মিলাতে পারে!
আপনার মতামত লিখুন :