ওয়ালি উল্লাহ : বন্যা উপদ্রুত উত্তরাঞ্চলের প্রায় সব নদ-নদীর পানি কমতে থাকায় ঘরবাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন বানভাসিরা। তবে ব্যাপক ফসলহানি ও গো-খাদ্যের সংকটের কারণে নিজেদের পাশাপাশি গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বন্যার্তরা। সামনে কোরবানির ঈদ থাকায় পশুখাদ্যের সংকটে অনেকে তাদের পশু বিক্রি করতে হাটে তুলেছেন। তবে ঈদের প্রায় দুই সপ্তাহ বাকি থাকায় বাজারে ক্রেতার সংখ্যা এখনো বাড়েনি। এদিকে বন্যায় বসতভিটার ক্ষতি হওয়ায় দিশেহারা বন্যাকবলিতরা। আয়-রোজগার না থাকায় সামনে ঈদ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা। বাংলাদেশ প্রতিদিন
কৃষকের স্বপ্নের ফসল নষ্ট হওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে সংসার চালানোর দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে অনেকের। অন্যদিকে সিরাজগঞ্জে পানির কমার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন শুরু হওয়ায় নদী তীরবর্তী মানুষ আতঙ্কে রয়েছেন। নির্ঘুম রাত কাটছে তাদের। ইতিমধ্যে প্রায় ৫০টি ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-রংপুর : ঈদুল আজহার আরও দুই সপ্তাহ বাকি থাকায় রংপুরের পশুর হাট এখনো জমে ওঠেনি। বন্যার কারণে রংপুরের কোরবানির পশুর হাটগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের মাঝে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ফলে কেনাবেচা নেই বললেই চলে। বন্যাদুর্গত এলাকার খামারি ও ক্ষুদ্র গরু ব্যবসায়ীরা চাচ্ছেন দ্রুত গরু বিক্রি করতে। অন্যদিকে ক্রেতারা চাচ্ছেন আগে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক তারপর গরু কেনা যাবে। এ অবস্থায় হাটগুলোতে গরুর সংখ্যা বাড়লেও ক্রেতা তেমন একটা নেই। তাই বেচাকেনাও হচ্ছে খুব সামান্য। রংপুর অঞ্চলে গরুর হাটের সংখ্যা শতাধিক। এর মধ্যে রংপুরের বড় পশুর হাটগুলো হলো তারাগঞ্জ হাট, বদরগঞ্জ হাট, বড়াইবাড়ী হাট, লালবাগ, বুড়ির হাট, চৌধুরানীর হাট, নজিরের হাট, পাওটানা, কান্দির হাট, দেউতি হাট, টেপা মধুপুর, খানসাসা মিঠাপুকুর, বৈরাতি, জায়গির হাট, শঠিবাড়ী, বালুয়া হাট, মাদারগঞ্জ হাট ও ভে াবাড়ি হাট। এ ছাড়া রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় রয়েছে চারটি। এসব হাটে স্বাভাবিকভাবে যে গরুর আমদানি হয় তার চেয়ে কিছুটা বেশি দেখা গেছে। বন্যাদুর্গত এলাকার খামারিরা পশুখাদ্যের সংকটে দ্রুত তাদের পশু বিক্রি করতে হাটে তুলছেন। তাই পশুর আমদানি তুলনামূলক কিছুটা বাড়লেও সে অনুপাতে ক্রেতার সংখ্যা এখনো বাড়েনি। অনেকে কোরবানির গরু আগে কিনতে চান কিছু কম দামে।
কিন্তু এবার বন্যার কারণে গরু কিনে কোথায় রাখবেন এ সমস্যায় এখনো কেনা শুরু করেনি। গাইবান্ধা : গাইবান্ধার সবগুলো নদ-নদীর পানি কমে যাওয়ায় নিজেদের বাড়িঘরে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বানভাসি মানুষ। তবে কম এলাকা থেকেই এখন পর্যন্ত পানি সরে গেছে। তাই এখনো শহর রক্ষা বাঁধ, গাইবান্ধা-বালাসী সড়ক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছেন অসংখ্য মানুষ। যেসব এলাকায় পানি নেমে গেছে সেখানে বসবাসের উপযোগী করতে নতুন করে লড়াই করতে হচ্ছে তাদের। রাস্তাঘাট ভেঙে যাওয়ায় সেখানে যাতায়াত সমস্যা যেমন আছে তেমনি নতুন করে ঘরবাড়ি তৈরি করার মতো আর্থিক সামর্থ্যও নেই এসব মানুষের। ১৮ দিন টানা কর্মহীন থাকায় হাতে নগদ টাকা নেই বলে জানিয়েছেন বাঁধে আশ্রিতরা।
টাঙ্গাইল : যমুনা নদীসহ কয়েকটি নদীর পানি কমতে থাকায় টাঙ্গাইলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে বন্যাকবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির অভাব ও নানা প্রকার রোগবালাই দেখা দিচ্ছে। বন্যায় প্রায় তিন লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েন। এখনো লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। অন্যরা বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্র, উঁচু রাস্তা ও রেললাইনে খুপড়ি ঘরে অমানবিক জীবনযাপন করছেন। গবাদিপশু নিয়ে মানুষ উঁচু বাঁধ ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন। সিরাজগঞ্জ : পানি কমে যাওয়ায় বন্যাকবলিতরা বাড়িতে ফিরছেন। বন্যায় বসতভিটার ক্ষতি হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বন্যাকবলিতরা। আয়-রোজগার না থাকায় সামনে ঈদ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা। ফসল নষ্ট হওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে সংসার চালানোর ভাবনা দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। এ বছর বন্যায় জেলার ২১ হাজার হেক্টর জমির ফসল পুরোপুরি নষ্ট হয়েছে। প্রায় সোয়া তিন লক্ষাধিক মানুষ ক্ষয়ক্ষতির স্বীকার হয়েছেন। ৫০ হাজার ঘরবাড়ি নষ্ট হয়েছে।
বন্যায় জেলায় ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হয়েছে। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন শুরু হওয়ায় নদী তীরবর্র্তী মানুষ আতঙ্কে রয়েছেন। নির্ঘুম রাত কাটছে তাদের। ইতিমধ্যে প্রায় ৫০টি ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। নাটোর : নাটোরের গুরুদাসপুরে বেড়িবাঁধ ভেঙে ৪১০ হেক্টর জমির আমন ধান ও পাট নিমজ্জিত হয়েছে। ভেঙে যাওয়া বাঁধে বালুর বস্তা ফেলে ফসল রক্ষার চেষ্টা সফল হচ্ছে না। উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের যোগেন্দ্রনগর এলাকায় বেড়িবাঁধটি অবস্থিত। দিঘদারিয়া বিলপানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি নামের একটি সংগঠন প্রকল্পের আওতায় সংশ্লিষ্ট জমি দেখভাল করে। বেড়িবাঁধটি গত সোমবার ভাঙতে শুরু করে। দুদিন পর থেকে শুরু হয় বালুর বস্তা ফেলা কাজ। কিন্তু এতে কাজ হচ্ছে না। প্রকল্প এলাকার কৃষিজমি এক ফসলি থেকে তিন ফসলি করা হয় প্রায় ছয় বছর আগে।
এ বছর সেখানে আমন ধান ও পাটের আবাদ করেছেন কৃষক। কিন্তু বন্যার পানির তোড়ে বাঁধটির প্রায় ৩০০ ফুট এলাকা ভেঙে যায়। জামালপুর : যমুনার পানি কমতে থাকায় জামালপুরে বেরিয়ে আসছে বন্যার ক্ষতচিহ্ন। সাত উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা থেকে পানি নেমে যাওয়ায় এসব এলাকার দুর্গতরা ঘরে ফিরতে শুরু করলেও নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষেরা এখনো উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়ে আছেন। বাড়িঘর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় অনেকেই পড়ছেন বিপাকে। বিশেষ করে নিম্নআয়ের মানুষ এখনো কর্মহীন অবস্থায় থাকায় আর্থিক সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি মেরামতের অভাবে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরতে পারছেন না। বগুড়া : বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি কমায় সারিয়াকন্দি উপজেলার পূর্বাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হচ্ছে। সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলা সংলগ্ন বাঙালী নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনা পূর্বাঞ্চলের নিম্নাঞ্চল থেকে পানি কমে যাওয়ায় বাঁধে আশ্রয় নেওয়া বাসিন্দারা বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। তবে বাঙালী নদী সংলগ্ন ৪টি উপজেলা শেরপুর, শাজাহানপুর, গাবতলী ও বগুড়া সদরের কিছু অংশ এখনো পানির নিচে রয়েছে। এদিকে অন্য এলাকায় উঁচু স্থানের পানি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভয়াবহতা ফুটে উঠতে শুরু করেছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফসলের ক্ষেতে নষ্ট হয়ে যাওয়া পচা আগাছা, রাস্তাঘাটের ভাঙাচোড়া চেহারা ফুটে উঠতে শুরু করেছে। এবারের বন্যায় বগুড়ার সোনাতলা পৌরসভার ১৫টি সড়ক লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। সড়কগুলোতে কারপেটিং পিচ উঠে গিয়ে ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোনা কোনো স্থানে স্বাভাবিক যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
আপনার মতামত লিখুন :