নূর মাজিদ : পৃথিবীর ফুসফুস নামেই অ্যামাজন সমধিক পরিচিত। এক শতক আগেও দক্ষিণ আমেরিকার সকল অঞ্চলেই ছিলো এর বিস্তার। মানুষের সীমাহীন লোভ আর চাহিদার বলি হয়ে এখন ব্রাজিলেই বনটির সবচেয়ে বড় অংশটি কোন রকমে টিকে আছে। কিন্তু, সেই অস্তিত্বও এখন হুমকির মুখে। প্রতি মিনিটে প্রায় তিনটি ফুটবল মাঠের সমান আয়তনের অ্যামাজন বন উজার হচ্ছে। প্রকৃতিবিদেরা বলছেন, এই প্রক্রিয়া চলমান থাকলে বনটির প্রাকৃতিক বিস্তার ক্ষমতা স¤পূর্ণ বিনষ্ট হয়ে যাবে। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।
অবশ্য এর পেছনে বর্তমান রাজনৈতিক-অর্থনীতির পরিবেশ বিশাল ভূমিকা রাখছে। ব্রাজিলের কট্টর ডানপন্থি প্রেসিডেন্ট বলসারানো গত মে মাসে অবৈধভাবে বনভূমি দখল, কাঠের জন্য গাছ কাটা এবং বন পুড়িয়ে নতুন কৃষিজমি তৈরির প্রক্রিয়াকে আইনিভাবেই বৈধতা দিয়েছেন। যার প্রভাবে মে এবং জুন দুই মাসেই বন উজারের মাত্রা অতীতের তুলনায় অনেক গুণ বাড়ে। চলতি জুলাই নাগাদ ১ হাজার ৩৪৫ বর্গ কিলোমিটার বৃক্ষ আবরণ ধবংস করা হয়েছে। ডিটার বি স্যাটেলাইটের মাসিক পর্যবেক্ষণ চিত্রে এই সর্বনাশা দিক উঠে আসে। ২০১৫ সালে অ্যামাজনের ওপর নজর রাখার জন্যেই এই উপগ্রহটি উৎক্ষেপণ করা হয়।
স্যাটেলাইট চিত্রের বরাতে দ্য গার্ডিয়ান জানায়, ব্রাজিলের ইতিহাসে এই প্রথম চলতি জুলাই মাসের শেষ নাগাদ বৃহত্তর লন্ডনের চাইতে বড় এলাকার বন উজার হবে। সবচেয়ে বড় বিপদ হলো, বিজ্ঞানীরা শংকা করছেন, বনটি এখন তৃণভূমি বনে পরিণত হওয়ার তীব্র ঝুঁকিতে রয়েছে। কারণ বনের কার্বন ধারণ সক্ষমতা পুরোপুরি হারাবার পথে। যার ফলাফল সারা বিশ্বকে ভোগ করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
ব্রাজিলের ইন্সটিটিউড অব অ্যামাজোনিয়ান রিসার্চের প্রফেসর ফিলিপ ফেয়ার্নসাইড বলেন, বারবার সকলকে সতর্ক করাটাই আমাদের কর্তব্য। যে শঙ্কাগুলো করা হচ্ছে, ইতিমধ্যেই তার ল²ণগুলো তীব্র আকারে দেখা যাচ্ছে। আমাদের আশা এখনই যদি এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যায় তাহলে হয়তো আমাজনকে রক্ষা করা সম্ভব। কিন্তু, নির্মম সত্য হলো, (রাজনৈতিক পরিবেশে) তেমন কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছেনা। আমাদের কর্তাব্যক্তিরা এসব সমস্যা আছে সেটাই অস্বীকার করেন, প্রতিকার করা অনেক দূরের বিষয়। আসলে তারা বৃহৎ বহুজাতিক কৃষি সংস্থা এবং খনিজ কো¤পানির কাছে অ্যামাজনকে তথা সমগ্র বিশ্বের ভবিষ্যতকে বিকিয়ে দিয়েছেন।
এই অবস্থা এমন সময় জানা গেলো, যখন চলতি মাসের শুরুতে প্রকাশিত এক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বলা হয়, বিশ্বজুড়ে এখন এক লাখ কোটি বৃক্ষরোপণ করা হলে এবং তাদের বড় হওয়ার সুযোগ করে দিলে, তা মানবসৃষ্ট কার্বন নিঃসরণের দুই-তৃতীয়াংশ বায়ুমন্ডল থেকে টেনে নেবে। কিন্তু, বিজ্ঞানীরা তার চাইতে বরং বিদ্যমান বর্ষাবন রক্ষার প্রতি অধিক গুরুত্ব দেয়ার আহব্বান জানান। কারণ এই ধরনের বনের বড় গাছগুলি সবচাইতে বেশি কার্বন শোষণ করে।
আপনার মতামত লিখুন :