এস এম নূর মোহাম্মদ : বিভাগীয় মামলা দায়েরের পর তদন্তে অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দুই বিচারকের বেতন বৃদ্ধি এক বছরের জন্য স্থগিতের সিদ্ধান্ত দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট সভা।
নিম্ন আদালতের বিচারক মাহবুব আলী মুয়াদ ও মো.তাজ উল ইসলামের বিষয়ে এ সিদ্ধান্ত দেয়া হয়। বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে আদেশ জারি করবে।
জানা গেছে, মানিকগঞ্জের সাবেক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বর্তমানে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর চৌকির সিনিয়র সহকারী জজ মাহবুব আলী মুয়াদ ও মানিকগঞ্জের সাবেক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বর্তমানে বরগুনার সিনিয়র সহকারী জজ মো.তাজ উল ইসলাম মানিকগঞ্জে কর্মরত থাকাবস্থায় দুর্নীতি ও অসদাচরণের অভিযোগ উঠে।
২০১৩ সালের ৫ আগস্ট করা অভিযোগে বলা হয়, ওই দুই বিচারক ২০১১ সালের ২০ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে মানিকগঞ্জ সার্কেলের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর অফিসের সাবেক ইন্সপেক্টর (বর্তমানে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা সার্কেল) মো.তাজুল ইসলামের অফিস কক্ষে বেআইনিভাবে প্রবেশ করেন।
এসময় তারা মোবাইল কোর্ট পরিচালনার বাহানায় তাজুল ইসলামকে ভয় ভীতি প্রদান করেন, ওই অফিসে রক্ষিত ফেনসিডিল ও গাজা বের করেন, আলামতের তালিকা তৈরি করে তার স্বাক্ষর নেয়ার চেষ্টা করেন এবং সব শেষে অফিসে তালা দিয়ে চাবি নিয়ে চলে আসেন।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শে দুই বিচারকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি তদন্তের জন্য মানিকগঞ্জের সাবেক চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বর্তমানে রাজবাড়ীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা জজ) বেগম শারমিন নিগারকে দায়িত্ব দেয়া হয়।
তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই বিচারকের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ১৯৮৫ এর বিধি ৩ (বি) অনুযায়ী অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তবে তাদের বিরুদ্ধে বিধি ৩ (ডি) অনুযায়ী কোন দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। এতে আরও বলা হয়, মোবাইল কোর্ট পরিচালনার বাহানায় আলামতের তালিকা তৈরি করে তাজুল ইসলামের স্বাক্ষর নেয়ার চেষ্টার বিষয়টি প্রমাণিত হয়নি।
তবে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে অবহিত না করে এবং মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের আঞ্চলিক অফিসের নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করে সার্কেল অফিসে বেআইনিভাবে প্রবেশের বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে।
তদন্তকারী কর্মকর্তা তার প্রতিবেদনে মত দেন যে, দুই বিচারকের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ১৯৮৫ এর বিধি ৩ (বি) অনুযায়ী অসদাচরণের অভিযোগে একই বিধিমালার বিধি ৪ (২) ও ৪ (৩) অনুযায়ী লঘুদণ্ড বা গুরুদণ্ড প্রদান করা যায়। এরপর সরকার বিধি ৪ (২) (বি) অনুযায়ী অভিযুক্ত দুজনের বেতন বৃদ্ধি একবছরের জন্য স্থগিত রেখে দণ্ড প্রদানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। আর এ বিষয়ে পরামর্শের জন্য পাঠানো হয় সুপ্রিম কোর্টে। গত ৮ জুলাই প্রধান বিচারপতির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট সভা বিষয়টি অনুমোদন দেয়। এরপর তা পাঠানো হয় আইন মন্ত্রণালয়ে। এখন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে আদেশ জারি করবে।
আপনার মতামত লিখুন :