নাদেরা সুলতানা নদী : আমার টুকিটাকি লেখা যাদের পড়া, তাদের অনেকের জানা এই গল্প, আবার বলি। গ্রামের স্কুলে পড়তাম। ক্লাস ফাইভ পার হয়ে সিক্স ক্লাসে উঠার আগেই ডাকে আসে জীবনের প্রথম প্রেমপত্র। আমার পড়া হয়নি সেটা, উঠেছে আম্মা-আব্বার হাতে। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাওয়া এক কিশোরী মেয়ের পত্রিকাতে ছবি দেখেই সেই প্রেম, হায় প্রেম অন্ধ প্রেম। ক্লাসে সিক্স, গেলাম হাইস্কুলে পড়বো বলে, তখন নানা দিক থেকে হাতে আসতে থাকে আরও অদ্ভুত সব চিরকুট এবং চিঠি। বলাই বাহুল্য, কিছু সেই বয়েসেই নিজের মতো করে সামলে নিয়েছি। আমি জন্মগতভাবেই একজন কাউন্সেলর : (শুধু এক জায়গায় ফেল মেরেছি) : কাউকে কাউকে বলেছি চিঠি দেয়া ভালো না এখন পড়তে হবে, আমাদের যেতে হবে বহুদূর। কাউকে বলেছি বড়দের বলে দেবো আবার দিলে... নানা ইতং বিতং করে আমাকে স্কুলের এই জীবন পার করতে হয়েছে। কিন্তু এর মাঝেই অন্য এলাকার এক প্রভাবশালী চেয়ারম্যান পুত্র এসে লাইফ আক্ষরিক অর্থেই হেল করে দিলো। বাসার পেছনে কলাবতী ফুলের বাগানে প্রতিদিন চিঠি ফেলে দিয়ে যাওয়া, বিকালে খেলার মাঠে গেলে ফলো করা... স্কুলে যাওয়ার পথে একা পেলেই হোন্ডা নিয়ে এসে সামনে দাঁড়ানোসহ এমন উৎপাত এবং নাটকীয় বিষয় প্রতিদিন ঘটাতে লাগলো। আমার বাবা, মা (মামারাও কাছেই থাকতেন) এলাকার দু’জন সম্মানিত মানুষ হলেও চেয়ারম্যান পুত্রের এই কা- সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে থাকলেন। আমার কৈশোর এই এক ছেলের জন্য অনেকটা সময় থমকেই গিয়েছিলো। তবে শাপে বর বলতে যা বোঝায় তাও হলো এই ঘটনায়ই। আমি গ্রাম ছেড়ে শহরের হোস্টেলে চলে গেলাম বা বাধ্য হলাম।
না এমন অনেক অনেক স্মৃতি আজ আমার শক্তি, সাহস এবং আমি যে মানুষ হিসেবে অনেক বেশি সংবেদনশীল বলে মনে করি এমন কিছু ফেস করেছি বলেই। আমার খুব ভালো করে জানা আছে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটা মোটামুটি আউটগোয়িং এক মেয়েকে জীবনের অলি, গলি, হাঁটে, মাঠে, ঘাটে কতো বেশি কৌশলী হতে হয় বা সময়ে দিতে হয় মূল্য। এই জার্নি আমার মতো অল্প কিছু মানুষ ছাড়া কারও পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়।
নিজের গল্প আজ কেন বলছি, আপনারা যা মিন্নিকে নিয়ে আজ দুই ভাগে বিভক্ত তাদের প্রকাশ দেখেই আমি আমার মতো করেই বুঝে নিচ্ছি আপনার চিন্তা চেতনা বা মনোজগত। সবার সঙ্গে সব বিষয় নিয়ে লম্বা তর্ক বা বিতর্ক করবো সেসময় নেই... শুধু ২/৩টা বিষয় না বলে শান্তি পাচ্ছি না... ১. মিন্নি খুব সুশিক্ষিত, উচ্চবিত্ত বা খুব সংস্কৃতিমনা পরিবার থেকে আসেনি। ২. মিন্নির জীবনে যেভাবেই হোক নয়ন বন্ডের মতো কেউ জড়িয়ে গেলে সেখান থেকে মুক্তি মেলার শক্তি তার থাকার কথা নয়। ৩. মিন্নি অন্য একটা ছেলেকে বিয়ে করে হয়তোবা স্বাভাবিক জীবনের ক্ষীণ স্বপ্ন হলেও দেখেছে, কিন্তু সেই স্বপ্ন দেখার রাস্তাটা ওর জানা ছিলো না। নয়ন বন্ডকে ক্রসফায়ারে মেরে ফেলে এই গোটা হত্যাকা-টাই আমাদের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আছে... যে নয়ন বন্ডকে নিয়ন্ত্রণ করতো এলাকার এমপিপুত্র... তাদের আর কোনো অপকর্ম কি সামনে আসার রাস্তা আদৌ থাকলো। আমি ধরে নিচ্ছি (কোনো বিচার কার্যের আগেই দোষী সাব্যস্ত হয়ে যাওয়া এটা আমাদের দেশেই সম্ভব আজও) মিন্নি এই অপরাধে যুক্ত কিন্তু কতোখানি বা কী তার কেস হিস্ট্রি সেটা কী আদৌ কোনোদিন সত্যের আলো নিয়ে প্রকাশিত হবে? আমি বিশ্বাস করি না... আপনি? ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :