অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ : গত ২৯ জুন সংসদে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন জানিয়েছেন যে, সুন্দরবনের প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হিসেবে চিহ্নিত এলাকার মধ্যেই, সুন্দরবন থেকে মাত্র ছয় কিলোমিটার দূরে, পরিবেশ দূষণকারী বেশ কয়েকটি সিমেন্ট কারখানার পরিবেশগত ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। এর ক’দিন আগে সুন্দরবন থেকে চার কিলোমিটার দূরে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দেয়া হয়েছে। অনুমতি দেয়া হয়েছে এলপিজি প্লান্টসহ বহু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান স্থাপনের। এগুলোর সবই সুন্দরবনের জন্য ভয়াবহ হুমকি। কয়েকদিনের বিতর্ক, লবিং ও আলোচনা শেষে ৪ জুলাই বাকুতে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির অধিবেশনে সুন্দরবন বিষয়ে কয়েক দফা সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সুন্দরবনকে বিপদাপন্ন বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকার অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব স্থগিত রেখে এর ৬নং সিদ্ধান্তে ২০১৬ সালের মনিটরিং মিশনের উপরিউক্ত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য প্রকল্প বিষয়ে বিশদ সমীক্ষা প্রতিবেদন জমা দিতে বাংলাদেশ সরকারকে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে। সরকার দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানোর জন্য রামপাল প্রকল্প করছে বলে দাবি করে এবারও ইউনেস্কো অধিবেশনে করুণভাবে এটাই উপস্থাপন করেছে যে, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খুব দরকার।
বাংলাদেশের পক্ষে লবিংয়ে যোগ দিয়েছেন ভারত, চীনসহ কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিরা যাদের বাংলাদেশে বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিনিয়োগ রয়েছে। এই প্রকল্পগুলো নদী ও পরিবেশবিনাশী হলেও তাদের লবিং কাজে দিয়েছে। কিন্তু বিদ্যুতের জন্যই রামপাল, রূপপুর, মাতারবাড়ী, বাঁশখালী প্রকল্প করা জরুরি, তা মোটেই সত্য নয়। দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হলেও কতিপয় দেশি-বিদেশি গোষ্ঠীর বিপুল মুনাফা নিশ্চিত করা ছাড়া এই প্রকল্পগুলোর আর কোনো উদ্দেশ্য আছে বলে মনে হয় না। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য যে এর চেয়ে অনেক কম ব্যয়বহুল, পরিবেশবান্ধব, নিরাপদ পথ আছে তা আমরা সরকারি মহাপরিকল্পনার বিকল্প রূপরেখায় পরিষ্কারভাবে দেখিয়েছি। কাদের জন্য সরকার এতো লবিং, এতো দৌড়াদৌড়ি, এতো বিজ্ঞাপনী প্রচার করছে, এতো গায়ের জোর দেখাচ্ছে? আসলে দেশ-বিদেশে এ প্রকল্পের সুবিধাভোগী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর সংখ্যা কম নয়। রামপাল প্রকল্পের জেরে আরও বহু বিষাক্ত প্রকল্প সরকারি অনুমোদন পাচ্ছে। সরকারের ঘনিষ্ঠ বেশ কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী সুন্দরবন থেকে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে জমি বা বন দখল করে নিজেদের নামফলক টানিয়েছে। এই বৃহৎ বনদস্যু বা ভূমিদস্যুরা এলাকার সন্ত্রাসী ভাড়া করে সুন্দরবন আন্দোলনের বিরুদ্ধে পাহারা বসিয়েছে। সরকারি প্রশাসন তো তাদের সঙ্গে আছেই। সূত্র : আনু মুহাম্মদ ডটনেট
আপনার মতামত লিখুন :