শিরোনাম

প্রকাশিত : ৩০ জুন, ২০১৯, ০৬:০০ সকাল
আপডেট : ৩০ জুন, ২০১৯, ০৬:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রাষ্ট্রে সুশীল সমাজের ধারণা

হাসান মুরাদ সিদ্দিক : সাম্প্রতিক তৃতীয় বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশে যে বিষয়টা ব্যাপক আলোচিত, ক্ষমতার ভরকেন্দ্রের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত, তারা সুশীল সমাজ। সিভিল সোসাইটি বা সুশীল সমাজ সম্পর্কে প্রথম ধারণা দিয়েছিলেন সতেরোশো শতকের তিন ...দার্শনিক হবস, লক ও রুশো। আরও পরে এর দার্শনিক ব্যাখ্যা খাড়া করেন মার্কসের মুরব্বি হেগেল। তবে হবস যে মতামত দেন তার গুরুত্বও ফেলনা নয়। তার মতে সুসংগঠিত, মজবুত ও দৃঢ় রাষ্ট্র ব্যবস্থার মধ্যেই সিভিল সোসাইটি প্রতিষ্ঠা সম্ভব। জন লক মনে করতেন প্রাকৃতিক অবস্থা উত্তরণের জন্য মানুষ সমাজ প্রতিষ্ঠা করে তাতে নিজেকে সমর্পণ করে। পরে সমাজ নিজেদের নিয়ন্ত্রণের জন্য তৈরি করে একটি কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ বা রাষ্ট্র। মূল কথা হলো প্রাকৃতিক অবস্থার সামাজিক চূড়ান্ত উত্তরণই রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রের অন্যতম দরকারি বিদ্বৎ শ্রেণিই হলো সুশীল সমাজ।
সিভিল সোসাইটির ভরকেন্দ্র, তাদের তৎপরতা, উদ্দেশ্যের ঔচিত্য-অনৌচিত্য নিয়ে ইউরোপে যখন ব্যাপক বাদানুবাদ চলছে তখন তার নতুন ব্যাখ্যা নিয়ে হাজির হন মার্কসের গুরু দার্শনিক হেগেল। তার মতে সিভিল সোসাইটি টিকে থাকে রাষ্ট্রের পরিসরে। মানুষের নৈতিক পথ-পরিক্রমার যে তিনটি স্থর তাতে সিভিল সোসাইটি বা সুশীল সমাজ অন্যতম। তিনটির মধ্যে সমাজ দ্বিতীয় হলেও রাষ্ট্র পরম বা চূড়ান্ত ধাপ। তাই সুশীল সমাজ যেকোনো মহৎ কর্মপ্রয়াসকে বাধাগ্রস্ত করার ক্ষমতা রাখে। হেগেল যে-চক্ষে সুশীল সমাজকে দেখেছেন তার উল্টো দিক থেকে দেখেছেন মহামতী মার্কস। রাষ্ট্রের বাইরের সব কিছুকে তিনি সিভিল সোসাইটির অন্তর্ভুক্ত মনে করেন। তাই শ্রেণি সংগ্রাম বা সর্বহারা বিপ্লবের সময় যে সর্বজনিন জনমত দরকার, রাষ্ট্রের বাইরের বিশাল অংশ সুশীল সমাজের অন্তর্গত হওয়ায় তারা বিপ্লবের অন্তরায় হিসেবে অবস্থান নেয়। এমন বিশ্লেষণের ভিত্তিতে হেগেল এবং মার্কস একযোগে সুশীল সমাজের বিলয় বা ধ্বংস জরুরি বলে মত দিয়েছিলেন। তাদের এমন কটু বিশ্লেষণের পর সুশীল সমাজ সম্পর্কে আলোচনা কয়েক শতাব্দী স্থিমিত হয়ে পড়ে। তার স্থলে মার্কসের শ্রেণি সংগ্রামের দর্শন অপ্রতিরোধ্যতার গতিতে ছড়িয়ে পড়ে এবং দুর্দ- প্রতাপে রাজত্ব করে কয়েক শতাব্দী। কিন্তু আশির দশকে মধ্য ইউরোপে সলিডারিটি আন্দোলন এবং পোলান্ডে সমাজতন্ত্রের পতনের পর সমাজতন্ত্র সম্পর্কে পুনর্মূল্যায়ন শুরু হয়। এই ফাঁকে সুশীল সমাজ সম্পর্কে আলোচনা আবারো হরেদরে শুরু করে দেয় পুঁজিবাদী বিশ্ব। সেই আলোচনার বেগকে আরো পরিসর এবং গতি দেন আন্তোনিও গ্রামসি। গ্রামসির মতে রাষ্ট্রের যে দুটি শ্রেণি সিভিল ও পলিটিক্যাল সোসাইটি, উভয় শ্রেণি যৌথভাবে রাষ্ট্রের সব কিছুতে ভাগ বসায়, অনেকটা বিভিন্ন কারণে রাষ্ট্র তাদের কোলে জিম্মি হয়ে পড়ে। ফলে শ্রেণি সংগ্রাম বা সমাজ বিপ্লব পদে পদে বাধাগ্রস্থ হয়। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়