স্বপ্না চক্রবর্তী : পরিবেশ সুরক্ষায় জাতীয় বাজেট প্রস্তাবনায় তেমন কোনো বরাদ্দ নেই উল্লেখ করে উন্নয়নের নামে দেশের প্রকৃতি ও বৈচিত্র্যকে বিনষ্ট করা হচ্ছে দাবি করেছে ‘ বসেরকারি উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বারসিক) ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)। তাদের দাবি করে, জাতীয় বাজেট, ব্যয়, প্রকল্প ও ব্যবস্থাপনাকে পরিবেশবান্ধব হওয়া উচিত।
শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে কার্যালয়ে “ জাতীয় বাজেট ২০১৯-২০ পরিবেশ ও উন্নয়ত বিতর্ক” শীর্ষক নাগরিক সংলাপে এ দাবি জানায় সংগঠন দুটি। বারসিক ও পবা’র যৌথভাবে জাতীয় প্রেসক্লাবে এ সংলাপের আয়োজন করে। পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে ও সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জলের সঞ্চালনায় নাগরিক সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সদস্য মো: রেজাউল করিম বাবলু। নাগরিক সংলাপে মূল প্রবন্ধ উত্থাপন করেন প্রতিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ বিষয়ক গবেষক পাভেল পার্থ। সংলাপে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. শফিক উজ জামান, আইনজীবী হাসান তারিক চৌধুরী।
মূল প্রবন্ধে গবেষক জানান, পরিবেশ খাতে বাজেট বাড়ছে না কমছে এই বিতর্কের চেয়েও গুরুত্ব দেয়া দরকার বাজেট বরাদ্দ ও ব্যবস্থাপনায় পরিবেশবান্ধব দিকগুলো। শালবন ও জলাভূমি বিনাশ করে গার্মেন্টস তৈরি করে কিছু কর্মসংস্থান হয়। কিন্তু এতে দেশের ভবিষ্যৎ বিকাশ রুদ্ধ হয়ে যায়। ১ টি জিন্সের প্যান্ট বানাতে ২২০ লি: পানি লাগে। জাতীয় বাজেটকে পরিবেশবান্ধব হতে হবে, পরিবেশ সুরক্ষার বাজেট বাড়ানো দরকার।
প্রধান অতিথি মো: রেজাউল করিম বাবলু বলেন, আমি পরিবেশের উপর শাতধিক প্রতিবেদন লিখেছি সাংবাদিক হিসেবে। ২০০৮ সালে পলিথিন উৎপাদন নিষিদ্ধ হলেও দেশে বর্তমানে ২ লাখ ৬৫ হাজার মে. টন পলিথিন উৎপাদন হচ্ছে। আজ পরিবেশ বিধ্বংসীরাই দেশের সবচেয়ে বড় ক্ষতি করছে। কীটনাশক দিয়ে আমরা মাটির উর্বরতা নষ্ট করছি ও প্রাকৃতিক মাছ ধ্বংস করছি। কীটনাশক থেকে বের হয়ে আমাদের প্রাকৃতিক উপায়ে কৃষি উন্নয়নের চিন্তা করতে হবে। আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করার জন্য বিদেশী ষড়যন্ত্র আছে, এটি আমাদের বুঝতে হবে। আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি কিন্তু পরিবেশ ভারসাম্যের ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছি। পরিবেশ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে ব্যক্তি থেকে সমাজ পর্যন্ত।
সংলাপে বক্তাবা আরো বলেন, পরিবেশ ও উন্নয়ন যৌথসারথী। সত্যিকারের উন্নয়ন মানেই যেখানে পরিবেশ সুরক্ষার তৎপরতা গুলো জেগে থাকে। আবার অপরদিকে পরিবেশ সুরক্ষা মানেই সত্যিকারের উন্নয়ন। উন্নয়নের নামে পরিবেশকে কোনোভাবেই প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানো যায় না, জোর জবরদস্তিতে প্রাণ ও প্রকৃতি সুরক্ষা করা যায় না। চারপাশের বাস্তুসংস্থানের জটিল অনবদ্য সম্পর্ক ও বিবেচনাকে বুঝতে জানতে নিজের ভেতর আকাংখা তৈরি হতে হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে এই পরিবেশ-আকাংখার বীজ বুনে গেছেন। প্রাণ ও প্রকৃতির প্রতি এক অনবদ্য দরদ ছড়িয়ে দিয়েছেন তাঁর কাজ ও দর্শনে। কেবলমাত্র মানুষের জন্য দেশ নয়, অপরাপর প্রাণবৈচিত্র্যের কথা ভেবেই তিনি প্রথম বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন করেন। কেবল মানুষের জন্য নয়, উদ্ভিদবৈচিত্র্য সুরক্ষায় ন্যাশনাল হার্বেরিয়ামের যাত্রা শুরু করেন। কেবল গ্রাম নয়, নগরে বৃক্ষরোপণ ও প্রকৃতি সুরক্ষার কাজ তাঁর সময়েই প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। বঙ্গবন্ধুর এই পরিবেশচিন্তা বাংলাদেশকে জাগ্রত করুক। দেশের জাতীয় বাজেট ও উন্নয়নচিন্তায় পরিবেশবান্ধব দরদ বিকশিত হোক। জাতীয় বাজেটে সুনির্দিষ্টভাবে পরিবেশ সুরক্ষার খাত গুলোকে চিহ্নিত করে বিশেষ বরাদ্দ তৈরি হোক।
আপনার মতামত লিখুন :