নূর মাজিদ : যুদ্ধ ও অস্ত্র বাণিজ্য বিরোধী আন্দোলন, ক্যাম্পেইন এগেইনস্ট আর্মস ট্রেডের কড়া এক আপিলের রায়ে ব্রিটিশ আদালত সৌদি আরবের কাছে দেশটির অস্ত্র বিক্রিকে অবৈধ বলে রায় দিয়েছেন। কারণ, সৌদি আরব ইয়েমেন যুদ্ধে যুক্তরাজ্য থেকে কেনা সমরাস্ত্র ব্যবহার করে বেসামরিক ইয়েমেনি নাগরিকদের বিরুদ্ধে একপ্রকার গনহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। এই জন্যে সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দেয়া অবৈধ বলে আদালতে আপিল করে ক্যাম্পেইন এগেইনস্ট আর্মস ট্রেড। যার প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার দেশটির আদালত এই রায় দেন। সূত্র : বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান।
এদিকে আদালতের এই রায়ের প্রেক্ষিতে যুক্তরাজ্যের ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেক্রেটারি লিয়াম ফক্স বলেন, সরকার বাণিজ্যিকভিত্তিতে নতুন করে সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দেয়া বন্ধ করবে। এমনকি ইয়েমেন যুদ্ধে যেসব দেশ সৌদি আরবের শরীক তাদের কাছেও অস্ত্র বিক্রি করার অনুমতি দেয়া হবেনা। তবে ইতোপূর্বে, কার্যকর অস্ত্র বিক্রির অনুমোদনগুলো বাতিল কড়া হবেনা। ওই সকল চুক্তির আওতায় অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ অব্যাহত থাকবে।
এই রায়ে অবশ্য গভীর অসন্তোষ প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর। থেরেসা মে’র এক মুখপাত্র জানান, অস্ত্র বিক্রি অব্যাহত রাখতে সরকার আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সৌদি আরবও এই রায়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল জুবাইর রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এর মাধ্যমে একমাত্র ইরানই লাভবান হবে। পশ্চিমা অস্ত্র সাহায্য ইরানকে মোকাবেলার জন্যেই ব্যবহার করছে সৌদি আরব।
তবে প্রতিক্রিয়াশীল বক্তব্য যাই হোক, মানবাধিকার কর্মীরা একে একটি উলে¬খযাগ্য বিজয় বলে দাবী করেছেন। এই রায় এমন সময় দেয়া হলো যখন আর্মড কনফ্লিকট লোকেশন অ্যান্ড ইভেন্ট ডাটা (একলেড) নামক একটি আন্তর্জাতিক সংঘাত পর্যবেক্ষক সংস্থা তাদের চলতি সপ্তাহে ইয়েমেন যুদ্ধের হতাহতের বিষয়ে তাদের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। একলেড প্রতিবেদন জানায়, এই যুদ্ধে নিহত বেসামরিক ইয়েমেনিদের সংখ্যা খুব শীঘ্রই ১ লাখে পৌঁছাবে। এটি শুধুমাত্র সংঘাতে নিহত ব্যক্তিদের সংখ্যা, যেখানে দুর্ভিক্ষ, অনাহার এবং মহামারিতে মৃতদের সংখ্যা গণনা করা হয়নি।
একলেডের দাবী তাদের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের নির্ভরযোগ্যতা বিশ্বের শীর্ষ নিরপেক্ষ সংঘাত বিশেষজ্ঞদের সমর্থন পেয়েছে। ২০১৫ সাল থেকেই পর্যবেক্ষক সংস্থাটি ইয়েমেন যুদ্ধের ওপর নজর রেখে চলেছে।
একলেডের নির্বাহী পরিচালক ক্লিওনাদ র্যালেইগ বলেন, যুদ্ধে হতাহতদের সংখ্যা সম্পর্কে আমাদের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে একদম নিখুঁত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। আমরাই প্রথম এমন নির্ভরযোগ্য তথ্য প্রকাশ করেছি। আর এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আগাম সতর্কতা। যুদ্ধবন্ধে বিশ্ব সম্প্রদায়কে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে, অন্যথায় পরিস্থিতি সবার নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যাবে।
আপনার মতামত লিখুন :