কাবেরী গায়েন: ১. যারা বলছেন, অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের কথায় কোনো সমস্যা নেই, তাদের সাথে একমত নই। বয়স্যদের সাথে আড্ডায় কথা বলা আর সভা-সমাবেশে কথা বলার পার্থক্য তিনি নিশ্চয়ই জানেন। আমাদের প্রবাসী শ্রমিকদের অনেকেই নিরক্ষর। আমি এমিরেটস বা কাতার এয়ারলাইনস হয়ে দেশে এলে প্রতিবারই অনেকের ফরম পূরণ করে দিই। তাদের সবাই প্লেন চলার এটিকেট যথাযথ জানেন, এমন নয়। সেই এটিকেট অনেক শিক্ষিত ব্যক্তিও জানেন, হলফ করে বলা যাবে না।
যে অতিরঞ্জন তিনি করেছেন, যে নাটকীয়তা করেছেন, তার মধ্যে তাচ্ছিল্য পরিষ্কার। তার পাশে বসে বা সামনে বসে যারা হেসেছেন, তাদের তাচ্ছিল্যও প্রকট। এটা না দেখা একধরনের আরোপিত অস্বীকার বলেই মনে হয়। সব বিষয় নিয়ে প্রকাশ্যে পরিহাস করা যায় না, এটা তাঁর না জানার কথা নয়। একজন কৃষক কাছা মেরে লুঙ্গি পরে কীভাবে ভাত খান, সেটা দেখানো নাটকের চরিত্র ফুটিয়ে তোলার জন্য জরুরি, কিন্তু সভা-সমাবেশে সেই ভাত খাওয়ার নাটকীয় বর্ণনা দেয়া খুব সুরুচির পরিচয় দেয় না, মানবিকতারও নয়। তিনি মানুষ হাসান, তবে কমেডি শো আর আলোচনা সভার মধ্যেও পার্থক্য আছে। স্ট্যাটাসের মধ্য দিয়ে তাঁর এই বয়স্যপরিবৃত ধরনের পরিহাসের প্রতিবাদ করছি। আমি বারে বারে জনপরিসরের কথা বলছি, কারণ কেউ ব্যক্তিগত আড্ডায় কী বলেন সেটা রেকর্ড করে তার বিচার করতে বসা সম্ভব না।
২. এই একটিমাত্র বক্তব্যের সূত্র ধরে অধ্যাপক সায়ীদের যতো ধরনের সমালোচনা হচ্ছে, আমি তার সাথেও একমত নই। তিনি শ্রেণি সংগ্রামেরত কোনো ইন্টেলেকচুয়াল নন। তবে দেশের ছেলেমেয়েদের বই পড়ানোর চেষ্টা করছেন বহু বছর ধরে, সেটার একধরনের গুরুত্ব আছে। তাঁর পড়ানোর ধরন সম্পর্কে আমার পর্যবেক্ষণ হল (ভুল হলে আগাম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি), কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে পড়ান কিনা জানি না। তবে কোনো বিষয়ে গভীরভাবে জানার জন্য যে পূর্বাপর ধারাবাহিকতা দরকার, সেটা অনুপস্থিত। বরং বিভিন্ন বই রয়েছে, সেগুলো পড়ার সুযোগ করে দেন। ছেলেমেয়েরা কিছু বই পড়ে সারাদেশে তাঁর পাঠানো ভ্রাম্যমান পাঠাগারের সাহায্যে, এর গুরুত্ব চট করে খারিজ করে দেবার মতো নয়। কাজেই তাঁর প্রবাসী শ্রমিক সংক্রান্ত মন্তব্যটুকুর সমালোচনা করা যেতেই পারে, কিন্তু তার অবদানটুকুও যে ফেলে দেবার মতো নয়, সেটুকুও মাথায় রাখি যেন। সেই কাজটি আর কেউ করেননি।
৩. অধ্যাপক সায়ীদের রাজনৈতিক অবস্থান মাথায় আছে বলেই বলি, তিনি তাঁর মতো করে করছেন, শেণি-সচেতনতা তৈরির জন্য নিবেদিত যারা, তাদের পাঠচক্র কোথায়? হোক ছোট ছোট, কিন্তু পাড়ায়-পাড়ায়, স্কুলে-কলেজে-বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রেণিচেতনা তৈরির যে পাঠচক্রগুলো ছিলো, সেসব কোথায় হারালো? আর হারালো বলেই উদ্দেশ্যহীনতার রাজনৈতিক পাঠচক্র বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের কর্ণধারের কাছ থেকে শ্রেণিচেতনা আশা করা হচ্ছে এবং তাঁর বিচ্যুতি দেখে গেলো গেলো রব তুলে আক্রমণ করা হচ্ছে। বলি কী, ওই পাঠচক্রগুলো ফিরিয়ে আনুন। শ্রেণিচেতনা সেখানে তৈরি হবে। অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদের কাছে এতো প্রত্যাশা কেন? তিনি কি বলেছেন, তিনি শ্রেণি সচেতনতা শিক্ষা দেওয়ার ক্লাস খুলেছেন? না। বরং তিনি রাজনীতি বিষয়ে নীরব এক পাঠচক্র খুলেছেন। রাজনীতি বিষয়ে নীরবতা যে রাজনীতিহীনতা তাকে বললো? সেও এক রাজনীতি। সেই রাজনীতি বুঝে আপনি আপনার পাঠচক্র কেমন হবে সেটা প্রস্তুত করতে তৈরি হোন। অধ্যাপক সায়ীদকে দেবতা বা দানব কোনটাই বানানোর দরকার হবে না; সেই সময়ও বা কোথায় তখন?//অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বিষয়ে আমার সিকিলেবুনিংড়ানি// ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :