স্বপ্না চক্রবর্তী : ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে খুবই আধুনিক আর ব্যবসাবান্ধব বলে মন্তব্য করেছেন ব্যবসায়ী নেতারা। তারা দাবি করেন, এ যাবতকালে এ ধরনের পরিচ্ছন্ন বাজেট প্রস্তাবনা তারা দেখেননি। তৈরি পোশাকখাতসহ শিল্প খাতের প্রস্তাবিত প্রণোদনার কয়েকটি বিষয় নিয়ে কিছুটা দ্বিধা থাকলেও তা সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব বলে মনে করছেন তারা।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশের পর পরই তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক বলেন, তৈরি পোশাক খাতে গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হলেও তা চাহিদার তুলনায় যৎসামান্য। প্রস্তাবিত বাজেটে তৈরি পোশাকের চারটি খাতে বিদ্যমান ৪ শতাংশ রপ্তানি প্রণোদনার পাশাপাশি নতুন অর্থবছরে বাকি সব খাতের জন্য এক শতাংশ হারে রপ্তানি প্রণোদনার পাশাপাশি আসন্ন অর্থবছরের বাজেটে আরও দুই হাজার ৮২৫ কোটি টাকার বরাদ্দের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই খাত এখন যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি সেখানে এই বরাদ্দও আমরা যৎসামান্য মনে করি। প্রণোদনা অন্তত ৩ শতাংশ দিলে আমাদের জন্য ভালো হতো।’
তিনি বলেন, ‘এবারের বাজেটে গতানুগতিকের বাইরে অনেকগুলো নতুন খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সামাজিক বেষ্টনীর পরিধি বাড়ানো হয়েছে, প্রবাসী আয়কে উৎসাহিত করতে ২ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দেয়া হয়েছে।
পোশাক শ্রমিকদের যেন সামাজিক সুরক্ষা খাতের অধীনে আনা হয়, সে দাবি জানিয়ে রুবানা হক আরও বলেন, ‘বাজেটের আগে আমরা এটি প্রস্তাব করেছিলাম কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে যে খাতগুলো উল্লেখ করা হয়েছে, তার মধ্যে পোশাক শ্রমিক নেই।’ কিন্তু যেহেতু বরাদ্দের পরিমাণ ৭৪ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা সেহেতু পোশাক শ্রমিকদেরও এর আওতায় আনার আহ্বান জানান তিনি।
প্রস্তাবিত বাজেটকে স্বাগত জানিয়ে পোশাক মালিকদের অপর সংগঠন বিকেএমইএ র সহ সভাপতি এহসান ফজলে শামীম বলেন, ‘আমরা পাঁচ শতাংশ প্রণোদনা চেয়েছিলাম। কিন্তু এক শতাংশ দেওয়া হলো। তবুও আমরা খুশি। তবে শিল্প খাতের অন্যান্য কিছু প্রণোদনা নিয়ে আমাদের মধ্যে দ্বিধা রয়েছে। আশা করছি, ভবিষ্যতে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে এর সমাধান হবে।’
প্রস্তাবিত বাজেটকে স্বাগত জানিয়েছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি ওসামা তাসীরও। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট একটি ধারাবাহিক বাজেট। তবে এ ধরনের বড় বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা বৃদ্ধি, জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ এবং দক্ষতা উন্নয়ন একান্ত অপরিহার্য।
তিনি বলেন, বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরকে আদায় করতে হবে তিন লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। বিদায়ী অর্থবছরের তুলনায় এতো বড় রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা চ্যালেঞ্জিং। নতুন বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে এক লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। ঘাটতি বাজেট পূরণে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে অর্থায়ন করা হবে, যা সহনশীল বলে মনে করছে ডিসিসিআই। তবে এ জন্য বেসরকারিখাতে ঋণ প্রবাহ যেন কমে না যায়, সেদিকেও সরকারের খেয়াল রাখারও দাবি জানান তিনি।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই)সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ প্রস্তাবিত বাজেটে দেশের তরুণ উদ্যোক্তাদের উন্নয়নের জন্য ১০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিলের ব্যবস্থা রাখা, প্রতিবন্ধীদের সুরক্ষার জন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের ১০ শতাংশ প্রতিবন্ধী শ্রমিক নিয়োগ প্রদানে পাঁচ শতাংশ কর রেয়াতের প্রস্তাব করা, দক্ষতা উন্নয়নে জাতীয় মানবসম্পাদ উন্নয়ন তহবিল গঠন করায় অর্থমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘২০১৯-২০২০ অর্থবছর থেকে মূসক ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ বাস্তবায়িত হতে চলেছে। মূসক মুক্ত টার্নওভারের সীমা ৫০ লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। টার্নওভার করের উর্ধ্বসীমা ৮০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে তিন কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে, বিপুল সংখ্যক আইটেম মূসকের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে। এজন্য আমরা সরকারকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তবে মূসক ব্যবস্থায় ভোক্তা ও দেশের ৮৫ শতাংশ ক্ষুদ্র মাঝারি পণ্য ও সেবা খাতে নিয়োজিত ব্যবসায়ীদের স্বার্থ ও সামর্থ্য অনুসারে ভোক্তা ও ব্যবসাবান্ধব মূসক ব্যবস্থা বলবতে টার্নওভারের উর্ধ্বসীমা ৫ কোটি নির্ধারণ করে করের হার প্রস্তাবিত চার শতাংশ থেকে তিন শতাংশে নামিয়ে, পণ্য ও সেবাখাতে উপকরণ রেয়াত গ্রহণ করা না গেলে শিল্প ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ ভ্যাট ধার্য্য করা এবং ২০১৮-১৯ বাজেটে বিদ্যমান সকল অব্যাহতি খাতকে প্রদত্ত অব্যাহতি অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করেন তিনি।
প্রস্তাবিত বাজেটকে স্বাগত জানিয়েছে রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড হাউজিং এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)।সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রিহ্যাবের সভাপতি শামসুল আলামিন কাজল বলেন, সরকারের এই যুগান্তকারী প্রস্তাব এর ফলে আবাসন খাতে বিদ্যমান স্থবিরতা বহুলাংশে কাঠিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলে বিশ্বাস করে রিহ্যাব। বাজেটে সরকার আবাসন খাতে যে বিনিয়োগ সুবিধার প্রস্তাব করেছে তা এই খাতে ফলপ্রসু ভূমিকা রাখবে এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। এতে করে নিম্ন আয় ও নিন্ম মধ্যবিত্তরা যাতে ভাড়ার টাকায় মাথা গোঁজার ঠিকানা খুঁজে পান, সেজন্য স্বল্পসুদের দীর্ঘমেয়াদী তহবিল গঠনসহ রিহ্যাবের অন্যান্য দাবিগুলো আগামীতে সরকার বাস্তবায়ন করবে বলেও আশা করেন তিনি।
সম্পাদনা: অশোকেশ রায়
আপনার মতামত লিখুন :