নিউজ ডেস্ক: প্রথম দর্শনে ভাবতেই পারেন বিদেশী কোন গাড়ি। কিংবা বিদেশী গাড়ির বডি খুলে এনে নতুন করে রিকন্ডিশন করা হয়েছে। কিন্তু উভয়টিই ভুল ধারণা। পুরোপুরি নিজের হাতে এবং ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের পাশে অবস্থিত অটোরিক্সা ওয়ার্কশপে তৈরী হয়েছে ‘ল্যাম্বোরগিনির’ আদলে গাড়িটি যেটি ঘণ্টা ৪৫ কিলোমিটার বেগে আপনাকে নিয়ে প্রায় ১০ ঘণ্টা পাড়ি দিতে সক্ষম। দেশীয় প্রযুক্তিতে সাথে নিয়েই এই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন ফতুল্লার লামাপাড়ার সন্তান আকাশ আহমেদ।নিউজ নারায়ণগঞ্জ।
ছোট বেলা থেকেই শখ ছিলো নিজের তৈরি গাড়িতে চড়বে আকাশ। যেই দেশে যেখানে আজ অব্দি কোন গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান দাঁড়াতে পারেনি সেখানে ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকার কিশোরের স্বপ্নকে হয়ত অনেকেই গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন ফতুল্লার পশ্চিম লামাপাড়া এলাকার মোঃ নবী হোসেনের ছেলে আকাশ আহমেদ।
স্বপ্নের শুরু দেড় বছর আগে। অটোরিক্সা নির্মাণের গ্যারেজ থেকে বডি তৈরি করতে করতে একসময় আকাশ বাবার কাছে প্রস্তাব দিলো গাড়ি বানাবে সে। বাবা নবী হোসেন না করতে গিয়েও চিন্তা করলো ছেলেটাই সবচেয়ে বেশী কাজ করে পুরো ওয়ার্কশপে। না করে দিলে হয়ত মন খারাপ করে কাজে মন দিবে না। তাই অনিচ্ছা স্বত্বেও ছেলেকে অনুমতি দিলো গাড়ি নির্মাণের। আর সেই থেকেই যাত্রা শুরু। ক্যালেন্ডারের পাতায় ইতালির বিখ্যাত গাড়ি প্রতিষ্ঠান ল্যাম্বোরগিনি গাড়ির মডেল দেখেই সেটিকে অনুসরণ করে সামনে এগোতে থাকে সে।
বাবার কাছ থেকে প্রতিদিন ১০০/২০০ করে নিয়েই অল্প অল্প করে কাজ শুরু করা। ইউটিউব থেকে টিউটোরিয়াল ফলো করা। জাহাজ কাটার অভিজ্ঞতা থেকে ইস্পাতের পাত কেটে কেটে গাড়ির বডির শেপ তৈরি করা। ল্যাম্বোরগিনির আদলে গাড়ির নকশা প্রণয়ন। নির্মাণ, জোড়াতালি সবই নিজের হাতে তৈরী। আকাশ জানায়, গাড়ির চাকা আর স্টিয়ারিং হুইলটাই কেবল কিনে আনা হয়েছে। বাকি সকল কিছু আমার নিজের হাতে তৈরী। চাকার সাসপেশন, হেডলাইট ব্যাকলাইট, গিয়ার, এসবও আমার নিজের হাতে তৈরী করেছি আমি। যা অনেকের কাছেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। প্রায় দেড় বছরের টানা প্রচেষ্টায় আজ সেটি পূর্নাঙ্গ গাড়িতে পরিণত হয়েছে।
আকাশ জানায়, গাড়িটিতে প্রায় ৫টি ব্যাটারি লাগানো হয়েছে। যেটি প্রায় ১০ ঘণ্টা চলতে সক্ষম। আর এই ব্যাটারি পূর্ণ চার্জ হতে লাগবে ৫ঘণ্টা। আর রাস্তায় নামলে ২জন আরোহীকে নিয়ে ঘণ্টা ৪৫ কিলোমিটার বেগে ছুটতে পারবে সে। আর পুরো গাড়িটি এই অবস্থায় দাঁড় করাতে তার ব্যয় হয়েছে সাড়ে ৩ লাখ টাকা। তবে গাড়ির বডি কার্বন ফাইবারে নিয়ে আসলে ৩ লাখ টাকাতেও বানানোও যাবে।
সে আরও জানায়, গাড়িটির দেড় বছরে প্রতিনিয়তই সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে। পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় অনেকটা অনুমান নির্ভর করেই পারি দিতে হয়েছে অধিকাংশ পথ। কিন্তু লক্ষ্য ছিল একটাই। আর সে কারনেই আমি গাড়িটি তৈরী করতে পেরেছি। ছোটবেলার স্বপ্ন বাস্তবায়ন শুরু যেহেতু করেছি তাই শেষ করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। ঈদের ছুটিতে গাড়িটি নামানোর পরেই অসাধারন সাড়া পেয়েছি। কেউ কেউ হিংসায় বাজে মন্তব্য করলেও তাতে পাত্তা দেইনি। নিজের তিল তিল করে গড়া পরিশ্রমে তৈরী করেছি এই গাড়িটি। তবে গাড়িটিতে আরো কিছু কাজ বাকি আছে। যেমন গাড়ির দরজাগুলো সুইচের মাধ্যমে অটো দরজা খুলবে ও বন্ধ হবে।
আকাশের বাবা নবী হোসেন বলেন, আমার ছেলে এই গাড়ি বানিয়েছে এটা এখনও এলাকার অনেকেই বিশ্বাস করতে চায় না। আমি তাদের বলিওনা তারা বিশ্বাস করুক। কিন্তু আমার ছেলের উপর হিংসা করে তার ক্ষতি যাতে না করে এই অনুরোধ রাখি। অনেকেই এসে বিরক্ত করে ছেলেকে। সম্প্রতি একজন গাড়ি জোড় করে চালাতে গিয়ে এক্সিডেন্ট করে সামনে কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলেছে। ছেলে ২দিন যাবত কষ্টে খায়নি কিছু। নতুন করে গাড়ি খুলে সেটি মেরামত করতে হবে। শুরু অনুরোধ করি ছেলের গাড়িটা অনেক শখের। কেউ যাতে এসে বিরক্ত না করে।
গাড়িটি নিয়ে পরবর্তী লক্ষ্য কি জানতে চাইলে আকাশ জানায়, আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করবো যাতে আমাকে গাড়িটি বাজারজাত করার অনুমতি দেয়। অন্য কারো কাছে আমি এটির নকশা বিক্রি করতে চাই না। শুরু অনুমতি দিলেই আমার জন্য অনেক বড় সুবিধা হবে। দেশীয় প্রযুক্তি ও পরিবেশ বান্ধব এই গাড়িটি দেখে আমি আরও ২৫টি গাড়ি তৈরীর অর্ডার পেয়েছি। বাজারজাত করলে ৪ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকাতেই মানুষ পরিবেশবান্ধব এই গাড়িটি ব্যাবহার করতে পারবে। ব্যাক্তিগত ভাবে আরেকটি গাড়ি বানানোর ইচ্ছা আছে। তবে সেটির মডেল আপাতত অপ্রকাশিতই থাকুক। দেশের মানুষ যখন গুনির কদর করতে জানবে তখনি সেটি দেখতে পাবে।
আপনার মতামত লিখুন :