স্পোর্টস ডেস্ক : চলমান আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপের দ্বাদশ আসরে নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে মঙ্গলবার (১১ জুন) শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। জয় দিয়ে আসর শুরু করলেও টানা দুই ম্যাচে হারের পর এই ম্যাচে দুই পয়েন্ট অর্জন করে নিতে উন্মুখ হয়ে আছে টাইগাররা।
তবে আশঙ্কার খবর- এই ম্যাচকে সামনে রেখে চোখ রাঙাচ্ছে বৃষ্টি। এর আগে যে ভেন্যুতে শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের মধ্যকার যে হাই ভোল্টেজ ম্যাচ বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয়েছে, সেই ব্রিস্টলেই বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে মাঠে বল গড়ান নিয়েই রয়েছে শঙ্কা।
আবহাওয়ার প‚র্বাভাস জানাচ্ছে, মঙ্গলবার ব্রিস্টলের কাউন্টি গ্রাউন্ডে সারাদিনই বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টি হওয়ার আশি শতাংশ সম্ভাবনা সামনে রেখে তাই উঁকি দিচ্ছে ম্যাচ ভেসে যাওয়ার শঙ্কা। সেক্ষেত্রে দুটি পয়েন্টের জন্য মুখিয়ে থাকা বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কাকে হয়ত একটি করে পয়েন্ট ভাগাভাগি করতে হবে নিজেদের মধ্যে।
তবে ইংল্যান্ডের আবহাওয়া নিয়ে অনুমান করা সহজ নয়- এটি সবারই জানা। এখন পর্যন্ত আসরের বেশ কয়েকটি ম্যাচে বৃষ্টির পরপরই দেখা গেছে ঝলমলে রোদ। অতীতের অনেক ম্যাচে বৃষ্টির শঙ্কা মাথায় রেখে ম্যাচের দিন দেখা গেছে পরিস্কার পরিবেশ। আর তাই টাইগার ভক্তদের আশা ছাড়ার কোনো সুযোগ নেই।
বৃষ্টির পরিমাণ কম হলে ম্যাচ গড়াতে পারে কার্টেল ওভারে। সেক্ষেত্রে ইনিংসের দৈর্ঘ্য কমিয়ে হলেও খেলা সম্পন্ন করার চেষ্টা করবেন ম্যাচ অফিসিয়ালরা। এশিয়ান দুই পরাশক্তির লড়াই দেখা জন্য শুধু এই অঞ্চলের ক্রিকেটপ্রেমিরাই নন, ব্রিস্টলে দৃষ্টি রাখবেন গোটা বিশ্বের ক্রিকেটপ্রেমিরাই।
এবার ৬ ম্যাচের সমীকরণ টাইগারদের
প্রথম পর্বে প্রতিটা দল খেলবে ৯টি করে ম্যাচ। বাংলাদেশ এর এক তৃতীয়াংশ ম্যাচের একটা পর্ব শেষ করেছে। সামনের গুরুত্বপূর্ণ ছয় ম্যাচে নিশ্চয়ই নানা কৌশল ও পরিকল্পনা থাকবে টাইগারদের। তবে এই পরিকল্পনা সহজতর হতে পারত যদি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারত টাইগাররা।
তারপরেও তিন ম্যাচের পর্বটা খুব খারাপ হয়নি বাংলাদেশের। প্রথম তিন ম্যাচে এক জয়- এমন একটা হিসেবই কষেছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। সাম্প্রতিক সময়ে ইংল্যান্ডের যা ফর্ম তাতে তাদের হারানো যাবে এমন হিসেব ছিল না। দক্ষিণ আফ্রিকা বা নিউজিল্যান্ডের মধ্যে যেকোনো এক দলের বিপক্ষে জয় চেয়েছিল বাংলাদেশ। জয়টা এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অত্যন্ত ক্লোজ ম্যাচ ছিল। ম্যাচটা জিতে গেলে শেষ চারের সমীকরণ সহজ হয়ে যেত।
বাংলাদেশের সামনে এখন ৬ ম্যাচের রণকৌশল। এই ছয় ম্যাচে প্রতিপক্ষ হচ্ছে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আফগানিস্তান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত। প্রথম চার দলের চেয়ে বাংলাদেশ দল র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে। সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সও তাদের চেয়ে ভালো। সঙ্গতকারণে এই চার দলের বিপক্ষে জয় ছাড়া অন্য কিছু ভাবছে না টিম ম্যানেজমেন্ট।
ভারত ও অস্ট্রেলিয়াকে হারানো খুবই কঠিন কাজ সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তারপরও এই দুই দলের বিপক্ষে অন্তত একটা জয় চায় মাশরাফির দল।
শেষ চারে যেতে হলে আরও চারটি জয় দরকার। ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, আফিগানিস্তান- এই চার দলকেই যে হারানো সম্ভব হবে তারও তো কোনোরকম নিশ্চয়তা নেই। কাজে ভারত, অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ তো বটেই, অন্য চার ম্যাচও বাংলাদেশের জন্য ডু আর ডাই। অল আউট ঝাঁপিয়ে পড়ার ম্যাচ।
গত কয়েক ম্যাচে পরিকল্পনার অভাব ছিল। যার ম‚ল্য দিতে হয়েছে দলকে। একাদশ নির্বাচন এবং আরও কিছু সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল না। বিশ্বকাপের ঠিক আগে এখানে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচে ব্যাট হাতে ব্যর্থ হন মোহাম্মদ মিথুন। ইনফর্ম সাব্বির ও লিটনের মতো ব্যাটসম্যানদের বসিয়ে মিথুনকে টানা তিন ম্যাচ খেলানো হলো। এবং তিন ম্যাচেই তিনি শোচনীয় ব্যর্থ। ১১ জুন ব্রিস্টলেও যদি মিথুনকে খেলানো হয় তবে তা হবে সাংঘাতিক ক্ষতিকর সিদ্ধান্ত। সাব্বিরকে একাদশে নেওয়া এখন সময়ের দাবি।
মোস্তাফিজের জায়গায় রুবেল হোসেনকে একাদশে রাখাই যুক্তিযুক্ত হবে। টিম ম্যানেজমেন্টকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এমনকি তামিমের ব্যাপারে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। তামিম যদি ফিট না থাকেন তাহলে লিটন দাশকে দিয়ে ওপেন করানো যেতে পারে।
মাশরাফিররা কেন যেন সহজ ব্যাপারটা বুঝতে চান না। হয় তারা বেশি আত্মবিশ্বাসী, অথবা বিচক্ষণতার অভাব। ভালো বোলিংয়ের বিপক্ষে চেজ করে জেতার মতো দল এখনও হয়ে ওঠেনি বাংলাদেশ, বিশেষ করে এই কন্ডিশনে। অথবা বাংলাদেশ দলে সেই মানের বোলার নেই যে প্রথমে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে অল্পতে প্রতিপক্ষকে গুটিয়ে দিতে পারে। বাংলাদেশ সাধারণ মানের দল, তাই নিতে হবে সাবধানী রণকৌশল।
শক্তিশালী বোলিংয়ের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে ২৯০-৩০০ রান টার্গেট দিতে পারলে চাপে ফেলা যাবে প্রতিপক্ষকে। সেই চাপের সঙ্গে নিয়ন্ত্রিত বোলিং করতে পারলে ভালো কিছু সম্ভব। পরের ম্যাচগুলোতে এই সাধারণ হিসেব কি মাথায় থাকবে মাশরাফিদের?
আপনার মতামত লিখুন :