ডেস্ক রিপোর্ট : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তিনদিনের এক রাষ্ট্রীয় সফরে আজ (সোমবার) যুক্তরাজ্য এসে পৌঁছানোর আগে থেকেই লন্ডনের মেয়র সাদিক খানের সাথে নতুন করে শুরু হয়েছে তার বাকযুদ্ধ।
অবশ্য এই বাকযুদ্ধ পুরোটা অনলাইনে, কারণ মি. ট্রাম্পের এই সফরের সময় তার সাথে সাদিক খানের কোথাও সামনাসামনি দেখা হবে না।
কয়েক দিন আগেই লন্ডনের মেয়র সাদিক খান ''নারী ও ইসলাম সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভুল ধারণার'' তীব্র সমালোচনা করে তাকে ''বিংশ শতাব্দীর ফ্যাসিস্টদের'' সাথে তুলনা করেন। তা ছাড়া মি. ট্রাম্পের লন্ডনে অবতরণের দিনেই ব্রিটিশ পত্রিকায় সাদিক খানের একটি নিবন্ধ বেরোয় যাতে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টের তীব্র সমালোচনা করেন।
আর জবাবে মি. ট্রাম্প এক টুইটে বলেন, সাদিক খান একজন ''স্টোন-কোল্ড লুজার'' অর্থাৎ এমন একজন লোক যিনি সব সময়ই পরাজিত হন। তিনি বলেন, মি. খানের উচিত লন্ডনে অপরাধ কমানোর দিকে নজর দেয়া।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার টুইটে সাদিক খানের পদবী ''খান'' শব্দটি লেখেন ভুল বানানে।
তাতে তিনি বলেন, খান আমাকে আমাদের নিউইয়র্ক শহরের ''নির্বোধ এবং অযোগ্য'' মেয়র দা ব্লাসিও-র কথা মনে করিয়ে দেয় - যে তার কাজে মোটেও ভালো করছে না এবং তার উচ্চতা ব্লাসিওর অর্ধেক।
মেয়র সাদিক খানের একজন মুখপাত্র প্রেসিডেন্টের এসব প্রতিক্রিয়াকে ''শিশুসুলভ'' বলে বর্ণনা করেন।
অবশ্য বিল দা ব্লাসিও নিজে কিন্তু ট্রাম্পের এই সমালোচনার জবাবে সাদিক খানের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি পাল্টা এক টুইটে বলেন, তিনি সাদিক খানের একজন ভক্ত এবং তার সাথে তুলনা করা হলে তিনি সম্মানিত বোধ করেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও সাদিক খানের মধ্যেকার বৈরিতা বহু পুরনো।
২০১৬ সালে মি. ট্রাম্প লন্ডনের নবনির্বাচিত মেয়র সাদিক খানকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন যেন তিনি একটি আইকিউ বা বুদ্ধিবৃত্তির পরীক্ষা দেন।
লন্ডন ব্রিজ ও বারা মার্কেটে ২০১৭ সালের সন্ত্রাসী আক্রমণের পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাদিক খানের আচরণকে ''দু:খজনক'' বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।
জবাবে সাদিক খান বলেন, তিনি মি. ট্রাম্পকে লন্ডনের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে দেবেন না।
গত বছর জুন মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, সাদিক খান সন্ত্রাস দমনের ক্ষেত্রে খুবই খারাপ কাজ করেছেন।
সাদিক খান জবাবে বলেন, তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের এসব ''পাশবিক'' অভিযোগের কোন জবাব দেবেন না।
এর আগে মি. খান লন্ডনে মি. ট্রাম্পকে ব্যঙ্গ করে তৈরি একটি অতিকায় বেলুন লন্ডনে ওড়ানোর অনুমতি দেন। এতে মি. ট্রাম্পকে একটি বিকিনি পরা শিশু হিসেবে দেখানো হয়।
একজন বিশ্লেষক নরম্যান স্মিথ বলছেন, ট্রাম্প ও সাদিক খানের এই ঝগড়ায় অবাক হবার কিছু নেই - কারণ মি. ট্রাম্প চিরাচরিত কূটনৈতিক শিষ্টাচারকে পাত্তা দেন না। সাদিক খান ও ডোনাল্ড ট্রাম্প - কেউ কাউকে দু'চোখে দেখতে পারেন না।
মি. ট্রাম্পও মনে হয় সাদিক খানের পেছনে লেগেই আছেন। তিন বছর আগে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কয়েকটি মুসলিম দেশের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর থেকেই এটা চলছে।
লন্ডনে বিক্ষোভকারীরা তার সফরের প্রতিবাদ জানাতে এবারও একটি মানবাকৃতির বেলুন ওড়াবেন, যাতে মি. ট্রাম্পকে এক অতিকায় ন্যাপি-পরা শিশু হিসেবে দেখানো হয়েছে।
বিরোধী দল লেবার পার্টি ও লিবারেল ডেমোক্র্যাট পার্টির নেতাসহ বেশ কিছু রাজনীতিবিদ মি. ট্রাম্পের সম্মানে দেয়া নৈশভোজ বয়কট করার কথা জানিয়েছেন।
তবে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে - যিনি আর কয়েকদিন পরই বিদায় নেবেন - এ সফরকে ব্রিটেন ও আমেরিকার মধ্যেকার বিশেষ সম্পর্ক জোরদার করার এক সুযোগ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
উৎসঃ বিবিসি বাংলা
আপনার মতামত লিখুন :