জহিরুল ইসলাম শিবলু, লক্ষ্মীপুর: মেঘনার রূপ-রস-সৌন্দর্য্যে অনন্য মেঘনা পাড়ের এ উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুর। নদী আর প্রকৃতি দুই মিলে লক্ষ্মীপুরের মেঘনার উপকূলকে করে তুলেছে অপরূপ। ফলে প্রতিদিন এ জেলার পুরো উপকূল হয়ে উঠছে প্রকৃতি প্রেমী মানুষের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে। তাই এবার ঈদেও পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত থাকবে লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীর উপকূল।
মেঘনাপাড়ের এ জেলায় রয়েছে জেগে ওঠা অনেক চর, ঢেঁউ আর বেলাভূমির মিতালী। রয়েছে ইলিশের দীর্ঘতম অভয়াশ্রম। মেঘনার বুক চিড়ে পণ্যবাহী সারি-সারি লাইটারেজ জাহাজ, মাছ শিকারি ছোট, বড় পালতোলা নৌকার দোলা আর নারকেল-সুপারির সাজানো বাগান। রয়েছে ৩শ’ বছরের পুরানো ঐতিহ্য বাহী দালাল বাজারের জমিদার বাড়ি।
সয়াবিন ও ধানসহ ফসলের বিস্তৃর্ণ মাঠ। নদীর চরে রয়েছে গরু-মহিষ, ভেড়া। তাদের সঙ্গে রাখালের বন্ধুত্ব। মেঘনা নদী ছাড়াও ভূলুয়া নদী এবং ডাকাতিয়া ও রহমতখালী খাল, রহমতখালী খাল পাড়ে রয়েছে মনোরম পৌর শিশু পার্ক। উপক‚ল জুড়ে এ সৌন্দর্যের লীলাভূমি, তাই অনায়াসেই এখানে ছুটে আসেন পর্যটকেরা। ঢল নামে সৌন্দর্য পিপাসু মানুষের।
সদর, রামগতি ও কমলনগর উপজেলার এসব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবস্থিত। দিন-দিন মেঘনার এই উপক‚লকে ঘিরে দেশের অন্যতম পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে উঠছে।
উপকূলের অন্যতম পর্যটন স্পট চর আলেকজান্ডার। মেঘনার চর আলেকজান্ডারে জোয়ার-ভাটার খেলা চলে নিত্য। মেঘনার উঁচু ঢেঁউয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জেলেরা শিকার করেন রূপালী ইলিশ। রামগতি উপজেলায় মেঘনার অব্যাহত ভাঙনে আলেকজান্ডার পৌর শহরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে মেঘনা নদী। উপজেলা পরিষদ থেকে মাত্র একশ গজ দূরত্বে ভাঙনরোধে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। বেড়ী বাঁধ এলাকা এখন অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান। গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন উৎসব কেন্দ্রিক ছুটির দিনগুলোতে এ এলাকায় দর্শনার্থীদের ব্যাপক সমাগম ঘটে। দেশের নানান প্রান্ত থেকে আসেন পর্যটকেরা। এছাড়াও লক্ষ্মীপুরের হাজারো মানুষ ছুটে যান সেখানে। আসন্ন ঈদ-উল-ফিতরের দীর্ঘ ছুটিতে সর্বোচ্চ সংখ্যক দর্শনার্থীর আগমন ঘটবে বলে ধারণা করা হচ্ছে এখানে। প্রায় চার কিলোমিটার পাথরের বেড়ী বাঁধ থেকে মেঘনার পূর্ণাঙ্গ রূপ দেখা যাবে। এখান থেকে নদী এবং তীর সংলগ্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে অপার লীলা উপভোগ করা যাবে। এখানে আগত দর্শনার্থীরা এটাকে মিনি কক্সবাজার বলে থাকেন, তাদের ভাষায় এ যেন আরেক কক্সবাজার। ঈদে প্রতিদিনই ওই বাঁধে ঢল নামবে সৌন্দর্য পিপাসু হাজার-হাজার মানুষের।
এছাড়া মেঘনা নদীর তীরে রামগতির চরগাজী ইউনিয়নের তেগাছিয়া বাজার সুইস গেট থেকে উপভোগ করা যায় সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য। এখানে রয়েছে ৩০ হাজার ঝাউগাছের গভীর বন। ফলে ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে এটি অন্যতম বিনোদন স্পট। প্রায় সারা বছরই এখানে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বনভোজন ছাড়াও সাধারণ মানুষের আনাগোনো থাকে।
মতিরহাটও জেলার আরেক দর্শনীয় স্থান। এটি দেশের সর্ববৃহৎ মাছ ঘাটগুলোর অন্যতম। এখানে রয়েছে মেঘনা নদীর বিভিন্ন প্রজাতির মাছের সমারোহ। প্রতিদিন অন্তত কোটি টাকার ইলিশ কেনা-বেচা হয় এ ঘাটে।
এখানকার চরে রয়েছে শত-শত মহিষের পাল। পাওয়া যায় মহিষের দুধের ঐতিহ্যবাহী ছানা ও দই। মতিরহাট রক্ষায় ব্লক দিয়ে বাঁধ দেওয়ায় পলি জমে বেলাভূমির সৃষ্টি হয়েছে। পাশেই জেগে উঠেছে নতুন চর। ফলে ডিঙ্গি নৌকায় চড়ে ওই চরে ভিড় জমায় ভ্রমণপ্রেমীরা।
এছাড়া জেলা শহর থেকে মাত্র ১২ কি.মি. দূরে মেঘনা নদীর পাড়ে মজুচৌধুরীর হাট। মজুচৌধুরীর হাটে যেতে রাস্তার দু’পাড়ের মনোরম দৃশ্য যে কারোরই মন কাড়ে। এখানে রয়েছে দুটি স্লুইস গেট।স্লুইস গেট থেকে উপভোগ করা যায় নদীর মনোরম দৃশ্য। প্রতিদিন জেলা শহর থেকে শত-শত মানুষ ভিড় করে এখানে। জেলেদের মাছ ধরা আর মানতা সম্প্রদায় নৌকার সারি, ঘাটে মাছের বেছা-কেনা উপভোগ করেন আগত দর্শনার্থীরা।
আপনার মতামত লিখুন :