দেবদুলাল মুন্না: আজ নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস।এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।কেমন আছেন বৃদ্ধাশ্রমের মায়েরা ? গাজীপুর সদর উপজেলার মণিপুর বিশিয়া এলাকার বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রের এক মায়ের চিঠি ১৯৯৫ সালে মাদার তেরেসা এলে তাকে পড়ে শোনালো হলে তিনিও চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। কেঁদে ফেলেছিলেন। সেই মায়ের নাম রাবেয়া খাতুন। এখন আর বেঁচে নেই তিনি। কিন্তু রয়েছে তার সেই চিঠির আবেগ ও বাস্তবতা। চিঠিতে লেখা হয়েছে,‘ বাবা.. আমার আদর, ভালোবাসা নিও। অনেক দিন তোমাকে দেখি না, আমার খুব কষ্ট হয়। কান্নায় আমার বুক ভেঙে যায়। আমার জন্য তোমার কী অনুভূতি আমি জানি না। তবে ছোটবেলায় তুমি আমাকে ছাড়া কিছুই বুঝতে না। আমি যদি কখনও তোমার চোখের আড়াল হতাম মা মা বলে চিৎকার করতে। মাকে ছাড়া কারও কোলে তুমি যেতে না। সাত বছর বয়সে তুমি আমগাছ থেকে পড়ে হাঁটুতে ব্যথা পেয়েছিলে। তোমার বাবা হালের বলদ বিক্রি করে তোমার চিকিৎসা করিয়েছেন। তখন তিন দিন, তিন রাত তোমার পাশে না ঘুমিয়ে, না খেয়ে, গোসল না করে কাটিয়েছিলাম। এগুলো তোমার মনে থাকার কথা নয়। তুমি একমুহূর্ত আমাকে না দেখে থাকতে পারতে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আমার বিয়ের গয়না বিক্রি করে তোমার পড়ার খরচ জুগিয়েছি। হাঁটুর ব্যথাটা তোমার মাঝে মধ্যেই হতো। এখনও কি তোমার সেই ব্যথাটা আছে? রাতের বেলায় তোমার মাথায় হাত না বুলিয়ে দিলে তুমি ঘুমাতে না। এখন তোমার কেমন ঘুম হয়? আমার কথা কি তোমার একবারও মনে হয় না? তোমার প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই। তবে তোমার কাছে আমার শেষ একটা ইচ্ছা আছে। আমি আশা করি তুমি আমার শেষ ইচ্ছাটা রাখবে।আমি মারা গেলে বৃদ্ধাশ্রম থেকে নিয়ে আমাকে তোমার বাবার কবরের পাশে কবর দিও। এজন্য তোমাকে কোনো টাকা খরচ করতে হবে না। তোমার বাবা বিয়ের সময় যে নাকফুলটা দিয়েছিল সেটা আমার কাপড়ের আঁচলে বেঁধে রেখেছি। নাকফুলটা বিক্রি করে আমার কাফনের কাপড় কিনে নিও।’এ চিঠি পড়ে মাদার তেরেসা ৫০০ রুপি দিয়েছিলেন রাবেয়া বেগমকে।জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিলেন।এ কেন্দ্রের তত্ত¡াবধায়ক আবু শরীফ বলেন, গাজীপুর সদরের মণিপুর বিশিয়া এলাকার খতিব আবদুল জাহিদ ১৯৮৭ সালে রাজধানীর উত্তরার আজমপুর এলাকায় ১২ কক্ষের একটি বাড়িতে কেন্দ্রটি স্থাপন করেন।
১৯৯৪ সালে কেন্দ্রটিকে মণিপুর বিশিয়ায় স্থানান্তর করা হয়। ১৯৯৫ সালে ২১ এপ্রিল শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী মাদার তেরেসা কেন্দ্রটির স¤প্রসারিত অংশের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ওই সময়ের এই ঘটনা।মা কেমন আছেন? বয়সের ভারে ভেঙে যাওয়া গালে ফোকলা মুখে হেসে যা বললেন তা বোঝা সহজ ছিল না আগে থেকেই , বললেন, ‘ ভাল আছি।’ কয় ছেলে? আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বললেন, দুই ছেলে। বাড়ি থেকে কারা আসে দেখতে? ডুকরে কেঁদে উঠলেন, অনেকটা আর্তনাদ করেই বললেন ‘না।’এ অভিমানী মায়ের নাম জোহরা।ঢাকার মৈনারটেক, উত্তরখান উত্তরায় অবস্থিত ‘আপন নিবাস বৃদ্ধাশ্রম’ এ থাকেন।
শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থা এমনই এক নোংরা মানুষে মানুষে সম্পর্ক স্থাপন করে দিয়েছে যাতে গর্ভধারিণী মা ও কখনো হয়ে পড়েন ঘরের ফেলে দেওয়া আসবাবের মতোন।বৃদ্ধাশ্রম কনসেপ্টটিও বানিজ্যিক।দু:থজনক বলা ছাড়া আর কিছুই বলার নেই।’
আপনার মতামত লিখুন :