এস এম নুর মোহাম্মদ ও মহসীন কবির: বিএনপি চেয়ারপাসন বেগম খালেদা জিয়ার বিচারে কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর আদালত স্থানান্তর করার বিষয়ে গত ১২ মে জারি করা প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার চেয়ে করা রিট আবেদনের উপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। মঙ্গলবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মো: খায়রুল আলমের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এরপর আগামী ১০ মে পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেনে বিচারক। গত রোববার রিটটি উপস্থাপন করে শুনানির জন্য আবেদন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।
উভয় পক্ষই উপস্থিত থাকলেও আদালত এ শুনানিতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) পক্ষভুক্ত করতে বলেন। আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন ও সালমা সুলতানা।
রিট আবেদনে সংবিধানের ২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদবহির্ভূত পদক্ষেপ হওয়ায় এবং প্রচলিত ফৌজদারী কার্যবিধির ধারা ৯ এর (১) ও (২) উপধারাবিরোধী হওয়ায় নাইকো দুর্নীতি মামলায় বিচারে পুরান ঢাকার সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বিশেষ জজ আদালত-৯ কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারের দুই নং ভবনে স্থানান্তরে গত ১২ মে জারি করা গেজেটকে কেন অবৈধ এবং বেআইনি ঘোষণা করা হবে না- মর্মে রুল চাওয়া হয়েছে রিট আবেদনে। আর রুলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই গেজেটের কার্যকারিতা স্থগিত চাওয়া হয়েছে আবেদনে। স্বরাষ্ট্র সচিব ও আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিবকে রিটে বিবাদি করা হয়েছে।
রিট আবেদন দায়ের করার পর ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, খালেদা জিয়া একজন পাবলিক ফিগার। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর যে কোনো ট্রায়াল পাবলিকলি হওয়া উচিৎ। কেরানীগঞ্জের কারাগারের একটি রুমে কখনো পাবলিক ট্রায়াল হতে পারে না। আমরা মনে করি, মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি ন্যায়বিচার করবেন এবং আদালত স্থানান্তরের যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে, সেটির কার্যকারিতা স্থগিত চেয়েছি, আশা করি আদালত স্থগিতাদেশ দেবেন। গত ২১ মে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল সংশ্লিষ্ট প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার চেয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে একটি আইনি নোটিশ পাঠান। তার জবাব না পাওয়ায় এ রিটটি দায়ের করা হয় বলে তিনি জানান।
ওই আইনী নোটিশের বলা হয়, গত ১২ মে আইন মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। ওই প্রজ্ঞাপন অনুসারে খালেদা জিয়ার মামলা শুনানির জন্য পুরাতন ঢাকার সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আদালত (বিশেষ জজ আদালত-৯) স্থানান্তর করে কেরানীগঞ্জে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেই প্রজ্ঞাপনকে খালেদা জিয়া ও আমরা বেআইনী বলে মনে করি। কারণ সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, যেকোন বিচার হতে হবে উন্মুক্তভাবে। কারাগারের একটি কক্ষে উন্মুক্তভাবে বিচার হতে পারে না। ফলে এই প্রজ্ঞাপন সংবিধানবিরোধী। একইসঙ্গে কোথায় কোথায় আদালত স্থানান্তরিত হতে পারে তা ফৌজদারী কার্যবিধি আইনে দেয়া আছে। ফৌজদারী কার্যবিধির কোথাও উল্লেখ নেই যে, কারাগারের মধ্যে আদালত স্থাপন হতে পারে। সুতরাং সংবিধান ও ফৌজদারী আইনের বিরুদ্ধে সরকার অবস্থান নিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১৪ মে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে নবনির্মিত ২ নম্বর ভবনে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে প্রথম বারের মতো বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুদকের করা গ্যাটকো মামলার শুনানি হয়। এর আগে ১২ মে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, নিরাপত্তাজনিত কারণে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে নবনির্মিত ২ নম্বর ভবনের অস্থায়ী আদালতে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোর বিচারিক কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে।
এই প্রজ্ঞাপন জারি করার পর ইতিমধ্যেই এই আদালতে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা তিনটি মামলার শুনানি হয়েছে। অন্য দুটি হল নাইকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা। তবে কারাবন্দি বেগম খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন থাকায় তাকে এখনো এই আদালতে হাজির করা হয়নি।
আপনার মতামত লিখুন :