শিরোনাম
◈ মাঠের রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়, অনলাইনেই সংগঠিত হতে চাচ্ছে আওয়ামী লীগ ◈ রাশিয়ায় কাজের প্রলোভনে নিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে পাঠানো হচ্ছে বাংলাদেশিদের (ভিডিও) ◈ মেঘনা নদীর নৌ সীমানায় ডাকাতদলের গোলাগুলি, নিহত ২ ◈ অন্তর্বর্তী সরকারের আসন্ন দিনগুলোয় চ্যালেঞ্জ আরো বাড়বে ◈ আবারও বাড়লো ডলারের দাম ◈ বাংলাদেশসহ তিন দেশে উন্নয়ন সহায়তা বন্ধ করতে যাচ্ছে সুইজারল্যান্ড ◈ ওসিকে পেটানোর হুমকি, সন্ত্রাসী সাজ্জাদকে ধরিয়ে দিলেই পুরস্কার ◈ বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী মুসলিম দেশ কোনটি? জেনে নিন এমন ১০টি দেশ সম্পর্কে ◈ দেখা গেছে শাবান মাসের চাঁদ, আরব আমিরাতে রোজা হবে ৩০টি ◈ ‘যে ৪ শর্তে ফিরতে পারবে আ.লীগ’

প্রকাশিত : ২৩ মে, ২০১৯, ১১:৩২ দুপুর
আপডেট : ২৩ মে, ২০১৯, ১১:৩২ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বদর যুদ্ধ ছিলো মুসলমানদের প্রথম বিজয়

আমিন মুনশি : আজ ১৭ রমজান। ঐতিহাসিক বদর দিবস। ৬২৪ খ্রিস্টাব্দে তথা দ্বিতীয় হিজরির এই দিনে সংঘটিত হয়েছিল ইসলামে চিরস্মরণীয় ও গৌরবময় অধ্যায় বদর যুদ্ধ। এটি ছিল সত্য ও মিথ্যার, মুসলিম ও কাফেরদের মধ্যকার ঐতিহাসিক যুদ্ধ। এবং এটি ছিল ইসলামের প্রথম যুদ্ধ। এ যুদ্ধে সত্য-মিথ্যার পার্থক্য সূচিত হয়ে যায়। এ জন্য এই যুদ্ধকে ‘সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী যুদ্ধ’ বলা হয়। আল-কুরআনে এই দিনকে ‘ইয়াওমুল ফুরক্বান’ বলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা যদি আল্লাহতে বিশ্বাস করো এবং (বিশ্বাস করো বিজয়ঘটিত) সে বিষয়টির প্রতি, যা হক ও বাতিলের চূড়ান্ত মীমাংসার দিন, একে অপরের মুখোমুখি হওয়ার দিন আমার বান্দার ওপর নাজিল করেছিলাম। (তাহলে তোমরা জেনে রেখো) আল্লাহ তায়ালা হচ্ছেন সব বিষয়ের ওপর একক ক্ষমতাবান।’ (সূরা আনফাল: ৪১)

মদিনা শরীফের অদূরে অবস্থিত একটি কূপের নাম ছিল বদর। সেই সূত্রে এই কূপের নিকটবর্তী আঙিনাকে বলা হতো বদর প্রান্তর। এই বদর প্রান্তরেই মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় হাবিব নিরস্ত্র মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর সঙ্গীদের বিজয়ী করেছিলেন হাজারো সশস্ত্র যোদ্ধার মোকাবেলায়। ইসলামের ইতিহাসে এর গুরুত্ব অসামান্য। বদরের যুদ্ধ ছিলো নিপীড়িতের পক্ষে এবং মানবকল্যাণের নিমিত্তে। এ যুদ্ধের মাধ্যমে মুসলিমরা সংখ্যায় অনেক কম হয়েও মক্কার কাফির শক্তিকে পরাজিত করে বিজয়ের সূচনা করেছিলো। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এ লোকেরা মুখের ফুঁৎকারেই আল্লাহর নূর নিভিয়ে দিতে চায়; অথচ আল্লাহ তাঁর এ নূর পরিপূর্ণ করে দিতে চান। তা কাফিরদের কাছে যতই অপছন্দ হোক না কেন।’ (সূরা সাফ : ০৮)

বদর যুদ্ধে মুসলমান ছিলো মাত্র ৩১৩ জন। অপর পক্ষে কাফিরদের সংখ্যা ছিল ১০০০-এর বেশি। মুসলমানদের মধ্যে ৮৫ জন ছিলেন মুহাজির সাহাবি, বাকি সবাই মদিনার আনসার। ৩১৩ জনের দলে উট ছিল ৭০টি আর ঘোড়া ছিল মাত্র ২টি। অপর দিকে কাফিরদের এক হাজারের দলের ৬০০ জনের কাছেই ছিল বর্ম এবং ঘোড়া ছিল ২০০টি। যুদ্ধক্ষেত্রটিতে মুসলমানরা যে স্থানে অবস্থান নিয়েছিল সেখানে সূর্যের তেজ সরাসরি তাদের মুখের ওপর পড়েছে। কিন্তু কাফিরদের মুখে দিনের বেলায় সূর্যের আলো পড়েনি। মুসলমানরা যেখানে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করলো সেখানে মাটি একটু নরম যা যুদ্ধক্ষেত্রের জন্য উপযুক্ত নয়। অপর দিকে কাফিররা যেখানে অবস্থান নিয়েছিল সেখানে মাটি ছিলো শক্ত এবং যুদ্ধের জন্য উপযুক্ত।
বদর যুদ্ধের প্রাক্কালে সাহাবিদের মধ্যে বিভিন্ন সন্দেহের সঞ্চার হচ্ছিল। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ সা.-এর নেতৃত্বে যুদ্ধ চলছে, তখন আবু বকর রা. দেখতে পেলেন মহানবী সা. ডুকরে ডুকরে কাঁদছেন। আর আল্লাহর দরবারে বলছেন, হে আল্লাহ! হাতেগোনা মুসলমানদের এই ছোট্ট দলটি যদি আজ নিঃশেষ হয়ে যায় তাহলে এই দুনিয়ার বুকে তোমার ইবাদতের জন্য আর কেউ থাকবে না। সুতরাং হে আল্লাহ! আপনি আপনার সেই সাহায্য অবতরণ করুন, যা দেয়ার অঙ্গীকার আমার সাথে করেছেন।’ রাসূল সা.-এর এই দোয়ার পরেই আল্লাহ তায়ালা নাজিল করেন, ‘যখন তোমরা তোমাদের মালিকের কাছে ফরিয়াদ পেশ করেছিলে, অতঃপর তিনি তোমাদের ফরিয়াদ কবুল করেছিলেন এবং বলেছিলেন, আমি তোমাদের (এ যুদ্ধের ময়দানে) পরপর একহাজার ফেরেশতা পাঠিয়ে সাহায্য করব।’ (সূরা আনফাল : ৯) আল্লাহ শত্রুদের মধ্যে ভীতিরও সঞ্চার ঘটিয়ে ছিলেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যখন তোমার মালিক ফেরেশতাদের কাছে ওহি পাঠালেন, আমি তোমাদের সাথেই আছি, অতঃএব তোমরা মোমেনদের সাহস দাও (তাদের কদম অবিচল রাখো); অচিরেই আমি কাফিরদের মনে দারুণ এক ভীতির সঞ্চার করে দেবো।’ (সূরা আনফাল : ১২)

অতঃপর যুদ্ধে মহান আল্লাহ প্রতিশ্রুত সাহায্য আসে এবং বদরের যুদ্ধ সমাপ্ত হয়। মুসলিমদের বিজয় ঘটে। এই যুদ্ধে মুসলিম পক্ষে ৬ জন মুহাজির ও ৮ জন আনসারসহ ১৪ জন শহীদ হন। কাফিরদের পক্ষে ৭০ জন নিহত এবং ৭০ জন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি বন্দি হন। এটি ছিল একটি মহা অলৌকিক বিজয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘(যুদ্ধে যারা নিহত হয়েছে) তাদের তোমরা কেউই হত্যা করোনি; বরং আল্লাহ তায়ালাই তাদের হত্যা করেছেন। আর তুমি যখন (তাদের প্রতি) তীর নিক্ষেপ করেছিলে, মূলত তুমি নিক্ষেপ করোনি, বরং করেছেন আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং’ (সূরা আনফাল : ১৭)।

এরই ধারাবাহিকতায় পরে অষ্টম হিজরির ২০ রমজান মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে বদর যুদ্ধের উদ্দেশ্য পূর্ণতা লাভ করে। রমজান মাসে অনেক যুদ্ধে মুসলমানদের বিজয়ের ইতিহাস পাওয়া যায়। যেমন- নবম হিজরির রমজান মাসে তাবুক যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। দশম হিজরির ১৩ রমজান আমর বিন আস-এর নেতৃত্বাধীন বাহিনীর হাতে রোমান সাম্রাজ্য পর্যুদস্ত হয়। ৯২ হিজরির রমজান মাসে তারেক বিন জিয়াদের নেতৃত্বে স্পেন বিজয় হয়েছে। ৯৬ হিজরির রমজান মাসে মোহাম্মদ বিন কাসিমের নেতৃত্বে সিন্ধুর অত্যাচারী রাজা দাহির পরাজিত হয়।

বদরের বিজয়ের এই দিনটিকে আল্লাহ তায়ালা স্মরণীয় হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘বদরে (যুদ্ধে) আল্লাহ তায়ালা তোমাদের বিজয় ও সাহায্য দান করেছিলেন অথচ তোমরা কত দুর্বল ছিলে। অতএব, আল্লাহকে ভয় করো। আশা করা যায়, তোমরা কৃতজ্ঞতা আদায় করতে সক্ষম হবে’ (সূরা আলে ইমরান : ১২৩)।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়