মাসুদ রানা : স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জন বর্ণ কিংবা স্বরধ্বনি বা ব্যঞ্জন ধ্বনির মধ্যে পার্থক্য কি, তা আমরা জানি কি? পরীক্ষা করে দেখুন! এ বিষয়ে আমার অভিজ্ঞতা থেকে ধারণা করছি, আমাদের অধিকাংশই বলবেন : ‘যে ধ্বনি বা বর্ণ উচ্চারণ করতে অন্য ধ্বনি বা বর্ণের সাহায্য লাগে না, তাকে বলা হয় স্বরধ্বনি বা স্বরবর্ণ আর যে ধ্বেনি বা বর্ণ উচ্চারণ করতে অন্য ধ্বনি বা বর্ণের সাহায্য লাগে, তাকে বলা হয় ব্যঞ্জনবর্ণ।’
তারা হয়তো উদাহরণও দিয়ে বলবেন, যেমন : ‘অ’ একটি স্বরবর্ণ, যার উচ্চারণ করতে অন্য বর্ণের সাহায্য লাগে না। কিন্তু ‘ক’ একটি ব্যঞ্জনবর্ণ, যার উচ্চারণ ‘অ’ দিয়ে শেষ হয়। বাহ! দারুণ আকর্ষণীয় সংজ্ঞা মনে হয়, তাই না? আপাত যুক্তি ও প্রমাণও আছে। নয় কি? কিন্তু বিষয়টি যদি আমরা চ্যালিঞ্জ করি, অর্থাৎ পরীক্ষায় ফেলি, কি দাঁড়ায়? অ উচ্চারণে অ ছাড়া অন্য ধ্বনি নেই। আ উচ্চারণে আ ছাড়া অন্য ধ্বনি নেই। ই উচ্চারণে ই ছাড়া অন্য ধ্বনি নেই। ঈ উচ্চারণে ই+ই আছে বিধায় সাহায্য লাগে। উ উচ্চারণে উ ছাড়া অন্য ধ্বনি নেই। ঊ উচ্চারণে উ+উ আছে বিধায় সাহায্য লাগে। ঋ উচ্চারণে র+ই আছে বিধায় সাহায্য ল গে। এ উচ্চারণে এ ছাড়া অন্য ধ্বনি নেই। ঐ উচ্চারণে অ+ই আছে বিধায় সাহায্য লাগে। ও উচ্চারণে ও ছাড়া অন্য ধ্বনি নেই। ঔ উচ্চারণে ও+উ আছ বিধায় সাহায্য লাগে।
সুতরাং, আগে দেয়া স্বরবর্ণ বা স্বরধ্বনির সংজ্ঞা প্রথমে সঠিক মনে হলেও পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখা গেলো, তা ঠিক নয়। আর ‘অন্য বর্ণ বা ধ্বনির সাহায্য’ লাগা বা না লাগা দিয়ে যেহেতু স্বরবর্ণ বা স্বরধ্বনিকে ব্যঞ্জনবর্ণ বা ব্যঞ্জনধ্বনি থেকে পৃথক করা যায় না, তা ব্যঞ্জণবর্ণ বা ব্যঞ্জনধ্বনির সংজ্ঞাও ভ্রান্ত হতে বাধ্য। বুদ্ধিমান পাঠক বাড়তি তর্ক না করে প্রশ্ন করবেন তাহলে স্বরবর্ণ বা স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনবর্ণ বা ব্যঞ্জন ধ্বনির মধ্যে পার্থক্য কি? সংজ্ঞা দেয়ার আগে বলে নিই, ‘ঋ’ আদৌ একটি স্বরবর্ণ বা স্বরধ্বনি কিনা তা নিয়ে তর্ক আছে। তাই এটি বাদ দিয়ে বাকি দশটি স্বরবর্ণের সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো এদের উচ্চারণ প্রক্রিয়া কণ্ঠ দিয়ে উঠে আসা বাতাস উন্মুক্ত মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে যেকোনো প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই।
অন্যদিকে ব্যঞ্জনধ্বনি বা ব্যঞ্জনবর্ণ উচ্চারণ করতে জিহবাসহ মুখের নানা অংশ, দাঁত, ঠোঁট ও নাকের ব্যবহার লাগে। ফলে আমরা স্বরধ্বনি/বর্ণ ও ব্যঞ্জনধ্বনি/বর্ণের নিম্নলিখিত সংজ্ঞা প্রস্তাব করতে পারি। স্বরধ্বনি/বর্ণ : যে ধ্বনি বা বর্ণের উচ্চারণ কণ্ঠ থেকে প্রবাহিত বাতাসের উপর জিহবার প্রতিবন্ধকতা ছাড়া শুধু উন্মুক্ত ওষ্ঠদ্বয়ের সংকোচন বা প্রসারণের মাধ্যমে করা হয়, তাকে স্বরধ্বনি বা স্ববর্ণ বলা হয়। ব্যঞ্জনধ্বনি/বর্ণ : যে ধ্বনি বা বর্ণের উচ্চারণ স্বরযন্ত্রের বিভিন্ন অংশের নানাবিধ ব্যবহারের মাধ্যমে মুখ থেকে নির্গত বাতাসে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে করা হয়, তাকে ব্যঞ্জনবর্ণ বলা হয়। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :