রাশিদ রিয়াজ : দেশে অন্তত ২০ থেকে ৫০ হাজার রোগী আছেন যাদের কর্নিয়া বদলে দেয়া হলে চোখে দেখতে পাবেন। কিন্তু স্বেচ্ছায় মরণোত্তর চক্ষু দানের পরিমাণ এতই কম যে এ চাহিদা মেটাতে হিমশিম খান চক্ষু বিশেষজ্ঞরা। স্বেচ্ছায় রক্তদানের মত সামাজিক আন্দোলন অনেকদূর অগ্রসর হলেও অধিকাংশ মানুষ সঠিক ধারণার অভাবে মরণোত্তর চক্ষু দান থেকে বিরত থাকেন। এধরনের আন্দোলনের পথিকৃত ‘সন্ধানী’ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক ধরনের ভীতি ও পারিবারিক অনুৎসাহ কিংবা ধর্মীয়ভাবে এক্ষেত্রে পরিস্কার ধারণা না থাকার কারণে ঘনবসতির এ দেশে এত কম পরিমান মরণোত্তর চক্ষু সংগ্রহ করা সম্ভব হয়। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক আন্দোলনের পাশাপাশি ধর্মীয় নেতা ও আলেম ওলামাদের এগিয়ে আসার অভাবই দায়ী বলে অনেকে মনে করছেন।
বিশিষ্ট আলেম আল্লামা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ এ প্রতিবেদককে জানান, ইসলামে মৃত মানুষের লাশকে অত্যন্ত সন্মানের মনে করা হয়। কাটাছেড়া বা বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিচ্ছিন্ন করা শরিয়ত পছন্দ করে না। অনেকে অপহরণ করে মানব অঙ্গের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ বিক্রি করার মত গর্হিত অপরাধ করে থাকেন। তাই অধিকাংশ মানুষ মনে করে মানুষ মারা যাওয়ার পর তার লাশ যথাযথ থাকবে। চিকিৎসার জন্যে কর্ণিয়া বা অন্য কোনো অঙ্গ প্রত্যঙ্গ প্রয়োজন হলেও এর ভালমন্দ উভয় দিক রয়েছে। তাই এ বিষয়ে বেশি কিছু বলার নেই।
বিশ্বের অধিকাংশ শীর্ষ আলেম ওলামারা মরণোত্তর চক্ষুদানের পক্ষে মত দিয়েছেন। ইউরোপিয়ান কাউন্সিল ফর ফতোয়া এন্ড রিসার্চ, ব্রিটেনের মুসলিম ল’ কাউন্সিল, নেদারল্যান্ডে একই ধরনের সংগঠন থেকে শুরু করে মরোক্কোর বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মুস্তাফা বেন হামজা ‘ইসলাম এন্ড অর্গান ডোনেশন’ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক সেমিনারে ২০০৬ সালে এব্যাপারে সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা দেন যা মরণোত্তর চক্ষু দানকে সমর্থন করে।
মরণোত্তর চোখ সংগ্রহে মৃতদেহের কোনো বিকৃতি ঘটে না কারণ পুরো চোখ নয় শুধুমাত্র কর্নিয়াই সংগ্রহ করা হয়। চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. হজরত আলী রেডিও তেহরানকে জানান, বছরে দেড় থেকে দুই’শ কর্নিয়া পাওয়া যায়। কর্নিয়াকে ঘোলা করে দেয় এমন রোগের প্রকোপ বাড়ছে। মামসের মতো ভাইরাসজনিত অনেক অসুখ, আঘাতে, জন্মগত কারণে কর্নিয়া ঘোলা হয়ে যেতে পারে। ছানি বা গ্লুকোমা অপারেশন সঠিক না হলেও একই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেশে বিনা পয়সায় চোখ কম পাওয়া যাচ্ছে। শ্রীলংকার মতো ছোট দেশে বছরে পাঁচ হাজার কর্নিয়া সংগ্রহ পাওয়া যায়। দেশে অনেক কর্নিয়া আমদানি করতে হয়। কর্নিয়াতে কোনো রক্তনালী নেই বলে টিস্যু ম্যাচিং’র দরকার নেই। এরফলে কোনো ব্যক্তির কর্নিয়া অন্য যে কারো চোখে লাগানো যায়। মারা যাওয়ার ছয় ঘণ্টার মধ্যে কর্নিয়া সংগ্রহ করতে হয়। মৃতদেহে পচন ধরে যাওয়ায় এরপর আর কর্নিয়া সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। সংগ্রহের পর কর্নিয়া এক বছর পর্যন্ত রাখা যায়। দেশে চক্ষুদান দিবস নেই। সাধারণ মানুষকে চক্ষু দানে উৎসাহিত করতে সরকারি পদক্ষেপ নেই।
আপনার মতামত লিখুন :