স্পোর্টস ডেস্ক: দেশে ও বিদেশে অনেক টুর্নামেন্ট খেলেছে বাংলাদেশ। সেই টুর্নামেন্টের ফাইনালেও পৌঁছেছে অনেকবার। কিন্তু তিক্ত হলেও সত্য এখন পর্যন্ত কোনো কোনো টুর্নামেন্টের ট্রপির স্বাদ পায়নি টাইগাররা। জয়ের খুব কাছে গিয়েও রানার্সআপ নিয়ে ফিরতে হলো। তবে আবার এসেছে সেই ফাইনাল ম্যাচ। অয়ারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের আগে নিজেদের ঝালিয়ে নেওয়ার জন্য ত্রিদেশীয় সিরিজে গ্রুপ পর্বে অপরাজিত জয়ে ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ। এই সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে দু’বার দেখায় পরাজিত করেছে তাদের। সেই দলের সাথেই আগামীকাল শুক্রবার ফাইনাল খেলবে মাশরাফিরা। তবে প্রশ্ন হলো ক্যারিবীয়দের হারানোর ধারা অব্যাহত রেখে টাইগাররা কি পারবে আরও একটি জয় তুলে নিতে সাথে একটি টুর্নামেন্টের ট্রপি নিজেদের করে নিতে?
দুই দলের সাম্প্রতিক দ্বিপাক্ষিক লড়াইয়ের রেকর্ড আর বাংলাদেশের দুর্দান্ত ফর্ম দ্বিধাহীনভাবেই বাংলাদেশকে এগিয়ে রাখছে। কিন্তু তবুও ম্যাচটি ‘ফাইনাল’ বলে আশঙ্কা থাকছেই। এটি বাংলাদেশের সপ্তম ফাইনাল। এর আগে ছয়টি টুর্নামেন্ট বা ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে উঠলেও বাংলাদেশ জিততে পারেনি একটি ফাইনালও। স্বভাবতই তাই শঙ্কা জাগছে- দুর্দান্ত ফর্মে থাকা বাংলাদেশের এবারো স্বপ্নভঙ্গ হয় কি না!
‘ফাইনাল’ ম্যাচ বাংলাদেশের কাছে এতটা ‘অপয়া’ হয়ে উঠেছে যে ফাইনাল জেতা এখন যেন রীতিমত ‘অসাধ্য সাধন’। সেই অসাধ্য সাধনে তামিম-মুস্তাফিজরা সফল হবেন কি না সেই উত্তর ১৭ মে’র আগে জানার সুযোগ নেই। তার চেয়ে বরং দেখে নেওয়া যাক ইতিপূর্বে বাংলাদেশের ছয়টি ফাইনাল, যেখানে প্রতিপক্ষ হিসেবে প্রতিবারই ছিল টেস্ট খেলুড়ে দল।
ত্রিদেশীয় সিরিজ, ২০০৯
স্বাগতিকদের ভূমিকায় থাকা বাংলাদেশ এই সিরিজে আতিথেয়তা করেছিল শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়েকে। সেবারই প্রথম কোনো ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল খেলেছিল বাংলাদেশ। ৬ রানে লঙ্কানদের ৫ উইকেটের পতন ঘটিয়ে প্রথম ফাইনালেই বাজিমাত করার সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল। তবে ম্যাচের শেষদিকে রুবেল হোসেনের বোলিংয়ে মুত্তিয়া মুরালিধরনের তা-ব শ্রীলঙ্কাকে ২ উইকেটে জিতিয়ে দেয় মোহাম্মদ আশরাফুলের নেতৃত্বাধীন টাইগারদের বিপক্ষে। বাংলাদেশের ফাইনাল-দুঃস্বপ্নের সে-ই শুরু।
এশিয়া কাপ, ২০১২
এশিয়া কাপের সেই আসরে বাংলাদেশ ছিল স্বাগতিকের ভূমিকায়। ভারত ও শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে বাংলাদেশ জায়গা করে নেয় ফাইনালে। পাকিস্তানের ২৩৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে জয়ের খুব কাছেই পৌঁছে গিয়েছিল মুশফিকুর রহিমের দল। তবে শেষপর্যন্ত ২ রানের পরাজয় বরণ করে নিতে হয়। খুব কাছে গিয়ে এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের সুযোগ হারানোর বেদনায় সেদিন অঝোর ধারায় কেঁদেছিলেন ক্রিকেটাররা, যা এখনো দেশের ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম বেদনাদায়ক ঘটনা।
এশিয়া কাপ, ২০১৬
সেবারও এশিয়া কাপের আয়োজক ছিল বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তানের মত দলকে হারিয়ে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল নিশ্চিত করে ফাইনাল। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের সেই ফাইনালে অবশ্য বাংলাদেশ প্রতিপক্ষ ভারতের কাছে পাত্তা পায়নি। ব্যাটিং ব্যর্থতার দিনে ঘরের মাঠে হজম করতে হয় ৮ উইকেটের পরাজয়।
ত্রিদেশীয় সিরিজ, ২০১৮
এ যেন ২০১২ ত্রিদেশীয় সিরিজের পুনরাবৃত্তি। বাংলাদেশ ফাইনালে উঠে শ্রীলঙ্কাকে একটি ম্যাচে হারিয়ে, লঙ্কানরা আবার একটি ম্যাচে হেরে বসে জিম্বাবুয়ের কাছে। ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে মাত্র ২২১ রানে আটকে প্রথম ফাইনাল জয়ের মোক্ষম সুযোগও এসেছিল সামনে। কিন্তু ৭৯ রানের বড় ব্যবধানে হেরে গিয়ে আরও একবার ব্যর্থতার ঢেউয়ে পর্যবসিত হয় টাইগাররা।
নিদাহাস ট্রফি, ২০১৮
বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম স্মরণীয় টুর্নামেন্ট বা ত্রিদেশীয় সিরিজ এটি। স্বাগতিক শ্রীলঙ্কাকে দুইবার হারিয়ে বাংলাদেশ নিশ্চিত করে ফাইনাল। দু’টি ম্যাচই উত্তাপ ছড়িয়েছিল মাঠ থেকে শুরু করে গ্যালারি কিংবা অনলাইন জগৎ পর্যন্ত। ফাইনালে বাংলাদেশের সামনে ছিল ভারত, যে দলে ছিলেন না বিরাট কোহল ও মহেন্দ্র সিং ধোনির মত সিনিয়র খেলোয়াড়রা। রোহিত শর্মার নেতৃত্বাধীন দল টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের সেই ফাইনালে বাংলাদেশের ছুঁড়ে দেওয়া ১৬৭ রান তাড়া করতে নামে। সৌম্য সরকারের করা শেষ ওভারে প্রায় জিতেই গিয়েছিল টাইগাররা। তবে শেষ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে কাক্সিক্ষত ৫ রানের দেখা পেয়ে যান দীনেশ কার্তিক। ফলে বাংলাদেশ হারে ৪ উইকেটের ব্যবধানে।
এশিয়া কাপ, ২০১৮
একই বছর আরেক ফাইনালে প্রতিপক্ষ হিসেবে আবারো ভারতকেই পায় বাংলাদেশ। মাত্র ২২২ রানের পূঁজি নিয়েও ওয়ানডে ফরম্যাটের ফাইনালে ভারতকে কোণঠাসা করে ফেলেছিল বাংলাদেশের বোলিং লাইনআপ। তবে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের করা ইনিংসের শেষ বলে ভারত তুলে নেয় ৩ উইকেটের জয়।
‘৭’ সংখ্যাকে বলা হয় সৌভাগ্যের নম্বর। বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে আছে নিজেদের সপ্তম ফাইনালের সামনে। অতীত ইতিহাসে স্বস্তির সংবাদ না থাকায় ‘ফাইনাল’ থেকে বাংলাদেশের প্রেরণা খুঁজে নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে চলমান ত্রিদেশীয় সিরিজে টাইগারদের যেমন পারফরম্যান্স, তাতে তো উইন্ডিজের চেয়ে বাংলাদেশই বেশি ফেভারিট। মাশরাফি-সাকিবরা কি পারবেন ফাইনালের ফাঁড়া কাটাতে? সপ্তম ফাইনাল সত্যিকার অর্থেই ‘লাকি সেভেন’ হয়ে উঠবে তো!
আপনার মতামত লিখুন :