মুহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন, ঢাবি: ‘কৃষক বাঁচলে বাঁচবে দেশ, গড়বো সোনার বাংলাদেশ’ এই শিরোনামে ধানসহ সকল কৃষি পণ্যের ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ, কৃষিখাতে পর্যাপ্ত ভর্তুকি প্রদান এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যের লাগাম টেনে ধরার দাবিতে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। বুধবার দুপুরে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধন পরিচালনা করেন সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক বনি ইয়ামিন মোল্লা। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রান্তিক কৃষকের সংখ্যা দুই কোটি ষাট লাখ। তাদের মধ্যে সরকারের কৃষি ঋণ পাচ্ছেন মাত্র ২৫ শতাংশ। এই ২৫ শতাংশের মধ্যেও ৭৫% ঋণ পাচ্ছেন বিভিন্ন এনজিও থেকে। সরকারি ব্যাংক থেকে তারা ঋণ পায় না। তাও ঋণ নিতে ৯ শতাংশ সুদ দিতে হয় অথচ সচিবদের দিতে হয় মাত্র ৫ শতাংশ।’
যুগ্ম আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘কতটা কষ্ট এবং দুঃখের শিকার হলে একজন তার সোনার ফসলে আগুন দিতে পারে জাতির কাছে আমার প্রশ্ন?’ তিনি তার বক্তব্যে কৃষকদের জন্য পল্লী রেশনিং ব্যবস্থা চালুর দাবি জানান।
সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হোসেন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কৃষকদের অধিকার নিয়ে কথা বলতে হবে। আমাদের শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কথা বলতে হবে। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, আমরা এই শ্রমিকদের ভ্যাটের টাকায় পড়াশুনা করি। তিনি বলেন, বর্তমানে কৃষি ব্যাংকগুলোর অবস্থা আইসিউয়ের রোগীর মতো।’ তিনি বাংলাদেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজের শিক্ষার্থীদের কৃষকদের অধিকার রক্ষায় তাদের প্রতিবাদী কন্ঠস্বর উত্তোলন করার আহ্বান জানান।
এই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু)’র সমজাসেবা বিষয়ক সম্পাদক আখতার হোসেন বলেন, ‘আমি কৃষক পরিবারের সন্তান। আমরা যদি সাড়ে চারশো বা ৫ শো টাকায় ধানের মণ বিক্রি করি এবং ন্যূনতম ১২ শো টাকায় সে ধানেরই চাল ভোক্তাদের কিনতে হয়। আমাদেরকে মাঝখানের এই সিন্ডিকেটের মেরে দেয়া ৭ শো টাকার ডিফারেন্সের হিসাব দিতে হবে।
যাতে সিন্ডিকেটের ধার না ধরে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনা হয় সারাদেশে তিনি মনিটরিং সেল গঠনের দাবি জানান সরকারের কাছে। তিনি বলেন, ‘কৃষকদের যথেষ্ট ভর্তুকি দিন, কৃষক পণ্যের বাজারজাত করার ব্যবস্থা করুন। তাদেরকে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করুন। কৃষিখাত যদি ধ্বংশ হয়ে যায় বাংলাদেশ তবে হুমকির মুখে পড়বে।
এই সময়ে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)’র ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, ‘একটি সিন্ডিকেট পরিকল্পিতভাবে ধানের দাম কম এবং চালের দাম বেশি করে রেখেছে। বাংলাদেশের গতানুগতিক রাজনৈতিক দলগুলোর শ্রমিক সংগঠনগুলো শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ায় না, তারা কৃষকদের পাশে দাঁড়ায় না। কৃষকরা যদি ন্যায্য মূল্য না পায় আমরা কৃষকদের ন্যায্য মূল্যের দাবিতে প্রয়োজনে লং মার্চ করব।
তিনি বলেন, ‘ ঈদের আগেই পাটকল শ্রমিক এবং গার্মেন্টস শ্রমিকদের বকেয়া রয়েছে সেগুলো নিরসনে পদক্ষেপ নিবেন এবং কৃষকদের ন্যায্য মূল্য দিতে অতি দ্রুত কমিটি গঠন করবেন। কমিটি করতে করতে যেন বাংলা কথায় ‘কাম সারা’ মানে বেশি সময় যেন না হয় । কৃষকদের ন্যায্য মূল্যের পাশাপাশি শ্রমিকদের সঠিক সময়ে বেতন পরিশোধ করুন। আমাদের জন্য দুঃখ এবং লজ্জার বিষয় হচ্ছে আমরা শিক্ষার্থী হয়েও আজ কৃষকদের অধিকার রক্ষায় কথা বলতে হচ্ছে।
এ সময়ে সংগঠনটির আহ্বায়ক হাসান আল মামুন তাদের দাবিগুলো উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘ধানসহ সকল কৃষিপণ্যের খরচ অনুযায়ী ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে হবে। কৃষিতে অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরাসরি ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কৃষিতে সুনির্দিষ্টভাবে বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি বাড়িয়ে স্বল্পমূল্যে উন্নতমানের বীজ সার ও সেঁচের ব্যবস্থা করতে হবে। হয়রানি এবং ঝামেলামুক্ত করে সহজ শর্তে কৃষিঋণ প্রদাণ করতে হবে।’
মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন, সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক মশিউর রহমান, মাহফুজুর রহমান, আরিফ হোসেন ও শিখা, তিতুমীর কলেজ শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক সোহেল মৃধা কবি নজরুল সরকারি কলেজ শাখার আহ্বায়ক আবু হানিফ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসিম উদ্দীন হল সংসদের সদস্য নাইম মোল্লা।
আপনার মতামত লিখুন :