তানজিনা তানিন : ছবির মতো সাজানো প্রবাল দ্বীপ আলডাবরা। এটি ভারত মহাসাগরের ওপর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রবাল দ্বীপ। প্রায় এক লাখ ৩৬ হাজার বছর আগে সমুদ্রের তলদেশে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় দ্বীপটি। এই দ্বীপেই একসময় বাস ছিলো ‘হোয়াইট থ্রোটেড রেল’ নামক পাখির। বাসস্থান খুইয়ে হারিয়ে গিয়েছিলো পাখিটিও। কিন্তু প্রকৃতিবিজ্ঞানীরা বলছেন, আবার ফিরে এসেছে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া সেই ‘হোয়াইট থ্রোটেড রেল’। কালের কণ্ঠ
তবে এ ফিরে আসার কাহিনীও বিচিত্র। এ নিয়ে দ্বিতীয়বার তারা অবলুপ্তির গহ্বর থেকে ফিরে এলো। বিশেষজ্ঞদের দাবি, লাখ বছর আগের ওই ঘটনার কয়েক হাজার বছর পর পাখিটি আবার ফিরে এসেছিলো। সে সময়ে সমুদ্রের পানি নেমে গিয়েছিলো। পানি নামতেই দ্বীপটি আবার জেগে ওঠে। আর তখনই পাখিটি ফের রাজত্ব গড়ে তোলে এ প্রবাল দ্বীপে। এ দুই ঘটনার আগের ও পরের জীবাশ্ম খুঁজে পেয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে এখন তারা বলছেন, ‘আলডাবরা দ্বীপে পাখিটি এখনো রয়েছে।’
বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, একে ‘ইটেরেটিভ ইভল্যুশন’ বলে। অর্থাৎ কোনো প্রাণীর উত্তরসূরিদের মধ্যে কোনো একটি প্রজাতির একাধিক বিবর্তন ঘটে। ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে ফিরে ফিরে আসে তারা। অন্যান্য প্রাণীর ক্ষেত্রে এমনটা দেখা গেলেও ‘রেল’ বা মাটিতে বসবাসকারী ছোট বা মাঝারি আকারের পাখিদের মধ্যে এমন নজির এ প্রথম। পাখিদের মধ্যেই এটি বেশ উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
বিজ্ঞানবিষয়ক পত্রিকা ‘লিনিয়ান সোসাইটি’তে গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে। পোর্টসমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ডেভিড মারটিল বলেন, ‘রেল বা কোনো পাখির মধ্যেই আমরা এ ধরনের ঘটনা দেখিনি। এমন কোনো উদাহরণ নেই।’
রেলের ফিরে আসার ইতিহাস নিয়ে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ‘রেল’ পরিবারের পাখিদের পূর্বপুরুষের বাস ছিলো পূর্ব আফ্রিকার উপকূল থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরে ভারত মহাসাগরের মাদাগাস্কার দ্বীপে। একসময় এদের সংখ্যা এতো বেড়ে যায় যে এরা দ্বীপ ছেড়ে অন্য স্থানে পাড়ি জমায়। কেউ উত্তরের দিকে উড়ে যায়, কেউ দক্ষিণে। কিন্তু এরা কেউই তেমন উড়তে পারত না। ফলে লম্বা পথ পাড়ি দিতে গিয়ে অনেকেই ভারত মহাসাগরে ডুবে যায়। যারা পশ্চিমে যায়, তারা আফ্রিকার মূল ভূখণ্ডে পৌঁছে। কিন্তু অচেনা অজানা জায়গায় গিয়ে তারা বিপদ ডেকে আনে। প্রাণ হারায় অধিকাংশই। কারো কারো ভাগ্য ভালো ছিলো। তারা মরিশাস, রিইউনিয়ন, আলডাবরা পৌঁছে এবং সেখানে রাজত্ব গড়ে তোলে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে তারা ওড়ার ক্ষমতাই হারিয়ে ফেলে। কারণ ওই সব দ্বীপে তাদের ওড়ার প্রয়োজন পড়তো না। ফলে দ্বীপেই বন্দি হয়ে পড়ে। তাই দ্বীপ যখন সমুদ্রের তলদেশে ডুবতে থাকে, তারা আর পালানোর সুযোগ পায়নি। তত দিনে তারা আর একটুও উড়তে পারে না। ফলে দ্বীপের সঙ্গেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় তারা। ঠিক যা ঘটেছিলো ডোডো পাখিদের ক্ষেত্রে। কিন্তু ডোডো যা পারেনি, তাই করে দেখিয়েছে ‘হোয়াইট থ্রোটেড রেল’।
বিজ্ঞানী মারটিলের ভাষায়, ‘ভারত মহাসাগরের ওপর আলডাবরাই একমাত্র দ্বীপ, যেখানে এমন জীবাশ্ম রয়েছে, যা অবলুপ্তির প্রমাণ দেয় এবং দেখিয়ে দেয় সেখান থেকেও ফিরে আসা যায়।’
আপনার মতামত লিখুন :